‘যুক্তরাষ্ট্রে এমন ঝড় আরও হবে’
যুক্তরাষ্ট্রে ভবিষ্যতে আরও অনেক শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ঝড় আঘাত হানবে এবং এ ধরনের ঘটনা নিয়মিত ঘটবে। দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে টর্নেডোর তাণ্ডবের পর স্থানীয় সময় রোববার যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রধান এমন সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের কারণে এমন পরিস্থিতি দেখা দেবে। খবর এএফপির
সামনে আমাদের আরও শক্তিশালী ঝড় ও বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে। তা হারিকেন হতে পারে, টর্নেডো হতে পারে কিংবা দাবানল।’ তিনি আরও বলেন, কীভাবে এ ধরনের ঘটনার প্রভাব কমানো যায়, সেটিকেই এখন প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছিডিয়ানি ক্রিসওয়েল, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (এফইএমএ) প্রধান
দীর্ঘদিন ধরে আবহাওয়াবিদ ও বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, আবহাওয়া ক্রমাগত বিরূপ হচ্ছে। ঝড়, দাবানল ও বন্যার মতো এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা বাড়ছে। এর মধ্যেই শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শুরু করে শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ছয় অঙ্গরাজ্যে তাণ্ডব চালিয়েছে টর্নেডো। এতে প্রায় ১০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
রোববার টর্নেডোতে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কেন্টাকি অঙ্গরাজ্য পরিদর্শনে যান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (এফইএমএ) প্রধান ডিয়ানি ক্রিসওয়েল। রওনা করার আগে বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
সিএনএন-এর স্টেট অব দ্য ইউনিয়নকে সাক্ষাৎকার ক্রিসওয়েল আভাস দেন সামনে এমন দুর্যোগ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য নতুন স্বাভাবিকতায় পরিণত হতে যাচ্ছে।’
এমন বিরূপ আবহাওয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে সতর্ক করেন এফইএমএ প্রধান। সিএনএনকে তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব আমরা দেখছি তা আমাদের প্রজন্মের সংকট।
রোববার এবিসির দিস উইক অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও একই রকমের আভাস দিয়েছেন ক্রিসওয়েল। তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের আরও শক্তিশালী ঝড় ও বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে। তা হারিকেন হতে পারে, টর্নেডো হতে পারে কিংবা দাবানল।’ তিনি আরও বলেন, কীভাবে এ ধরনের ঘটনার প্রভাব কমানো যায়, সেটিকেই এখন প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি।
টর্নেডোর তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ২০০ মাইলের বেশি এলাকাজুড়ে টর্নেডোর তাণ্ডব চলেছে।
শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘ পথজুড়ে তাণ্ডব চালানো টর্নেডোর ঘটনাগুলোর একটি ছিল এটি। তবে এ ধরনের নির্দিষ্ট ঝড়ের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখনো পরিষ্কার নয়।
বাইডেন আরও বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, জলবায়ু যখন উষ্ণ হচ্ছে, তখন সবকিছুর তীব্রতা বাড়ছে—সব কিছুরই।’
বিজ্ঞানীরাও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত মত দেননি যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ঝড়ের তীব্রতা বাড়ছে। তবে তাঁরা সম্মত হয়েছেন, এ মতের পক্ষে আলামত পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অলাভজনক বৈজ্ঞানিক সংস্থা এজিইউ একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে আভাস দেওয়া হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে তা আবহাওয়াকে আরও বিরূপ করে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিজ্ঞানী শনিবার টুইটারে এ গবেষণার ফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, টর্নেডোর মতো মারাত্মক আবহাওয়া পরিস্থিতির ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কোনো বক্তব্য নেই। তবে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। এখন পর্যন্ত গবেষণাগুলোর প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী মনে করা হচ্ছে উষ্ণতা বাড়ার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।