যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির বাজারে সংকট

যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। মহামারি ছাড়াও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাড়ির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ গাড়ি। মার্কিন জীবনধারার অন্যতম উপাদান গাড়ি কেনার জন্য উচ্চ মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সহসাই গাড়ির দাম কমবে না বলেও মনে করা হচ্ছে।

এমনিতেই গত ১৮ মাসে মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির উৎপাদন কমে আসে। নতুন গাড়ির কম্পিউটার চিপের সরবরাহ স্বল্পতার কথা জানানো হয়েছিল। গাড়ি নির্মাণ কারখানায় কর্মী সংকটের কারণেও উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণের সঙ্গে যোগ হয়েছে গত মাসের শেষ সপ্তাহে এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের ঘূর্ণিঝড় আইডার প্রভাব। লুইজিয়ানা থেকে টেক্সাসসহ অন্যান্য রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ গাড়ি। গাড়ি বিক্রির জন্য ডিলারশিপে রাখা গাড়ির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নিউইয়র্ক নগর থেকে ৩০ মাইল উত্তরে বসবাস করেন রুথ স্টেইনবার্গ নামের একজন স্কুলশিক্ষক। গত বছর হোন্ডা একুরা গাড়ি কিনেছিলেন। গত সপ্তাহের আকস্মিক বন্যায় তাঁর গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডিলারশিপে যোগাযোগ করেন। ডিলারশিপ থেকে জানানো হয়েছে, আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ৮৫ শতাংশ গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে কেনার জন্য নতুন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। পুরোনো গাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। দুই বছর আগে কেনা গাড়ি এখন লাভে বিক্রি করা যাচ্ছে।

জেডি পাওয়ার নামক একটি সংস্থার ব্যবস্থাপক ডেভিড প্যারিস বলেছেন, এমনিতেই যেকোনো বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পর পুরোনো গাড়ির বিক্রি বেড়ে যায়। এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহামারির জের ধরে গাড়ির ডিলারগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি নেই।

কারফ্যাক্স নামের গাড়ি কেনা-বেচা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আইডার কারণে আড়াই লাখের বেশি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির বিমা ক্ষতিপূরণ রয়েছে মাত্র ৭৮ শতাংশের। বিমা ক্ষতিপূরণ পাওয়া গেলেও ক্রয়ের জন্য নতুন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না।

কারফ্যাক্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির বাজারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি গাড়ি রয়েছে। পুরোনো গাড়ি কিনতে গিয়ে বেশি মূল্য মনে হলে সতর্ক থাকার জন্য ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়েছে কারফ্যাক্স। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি প্রকৃত বাজার মূল্য থেকে হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রি করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে এবং এসব গাড়ি কেনার পর ক্রেতাকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সিএনএন বিজনেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুব সহসা গাড়ির বাজার ক্রেতার অনুকূলে আসার সুযোগ নেই। উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে আসা এবং বর্তমান সংকট কাটিয়ে নতুন ও পুরোনো গাড়ির বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা আসার জন্য বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।