যে কেউই এই ঘটনা ঘটাতে পারত

ডেভিড উইপ্রিন
ডেভিড উইপ্রিন

যে কেউই এই ঘটনা ঘটাতে পারত
ডেভিড উইপ্রিন
নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বিলিম্যান

এই ঘটনা যে কোনো কমিউনিটির ভেতর থেকেই ঘটতে পারত। আপনাকে আলাদা করে বলতে হবে না যে, এটা বাংলাদেশি কোনো মানুষ ঘটিয়েছে। আমি জানি না যে এই
ঘটনা ঘটিয়েছে, তার উদ্দেশ্য কী ছিল, কী কারণে সে উগ্রপন্থা বেছে নিয়েছে, সেটা সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানি না। আমি মনে করি না যে, এটা একটা সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের অংশ। সে আইএস এর নির্দেশিত হয়েই আমেরিকার ক্ষতি করতে চেয়েছে এমনটা আমি মনে করি না। সম্ভবত সে আইএস এর কর্মকাণ্ড দারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজে নিজেই এই কাজে নেমে পড়েছিল।
এটা তার একার কাজ অবশ্যই, পুরো মুসলিম কমিউনিটিকে সে প্রতিনিধিত্ব করে না। এমনকি তার একার ওই কাজ, পুরো বাংলাদেশ কমিউনিটিকেও প্রতিনিধিত্ব করে না। এটা খুবই দুঃখজনক যে এই ঘটনার পর, কিছু মানুষ বাংলাদেশি মানুষকে এবং মুসলিম কমিউনিটিকে আতঙ্কগ্রস্ত করতে শুরু করেছে। সেটা বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে কথা বলতে হবে। আমার মনে হয় আমরা সবাই বলছি যে, আমরা সবাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একমত। এবং এই বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি যে কর্মকাণ্ড করেছে, তাকে আমরা আলাদা করেই ভাবছি, এবং তার কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করছি।
আমাদের এখন দায়িত্ব অবশ্যই মানুষকে সচেতন করা, তবে একই সঙ্গে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশি কমিউনিটি যারা আছে, তারা কিন্তু শান্তিপ্রিয় ও কঠোর পরিশ্রমী। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে এবং আমাদের খুব কাছের মানুষ তারা। আমরা সেভাবেই চিনি বাংলাদেশি কমিউনিটিকে, সেখানে এই হামলাকারীর কারণে, আমাদের কাছে পুরো কমিউনিটির ধারণা বা সংজ্ঞা বদলে যাবে বলে মনে করি না। কেউ যদি সেটা করার চেষ্টা করে, আমরা তার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করব। কারণ আমাদের প্রত্যেক মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে, সন্ত্রাসী একা এবং কেবল-ই একা। তার দায় পুরো কমিউনিটি বা পুরো মুসলিম সমাজ নেবে না, সেটাতে খেয়াল রাখতে হবে।

ড্যানিয়েল ড্রাম
ড্যানিয়েল ড্রাম

এর দায় পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটির নয়
ড্যানিয়েল ড্রাম
সিটি কাউন্সিলর, জ্যাকসন হাইটস

এই দেশটির ইতিহাস হলো, পৃথিবীর সব দেশ থেকে অভিবাসীদের স্বাগত জানানো। আমাদের সবার একই উদ্দেশ্য, এই দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিজেদের ভাগ্য
পরিবর্তন করা, সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। এটা কারও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং কোনো একজন অভিবাসীর মাধ্যমে যদি খারাপ কিছু সংঘটিত হয়, তার অর্থ এই নয় যে আমরা সবাই খারাপ।
এই একটি ঘটনা দিয়ে কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমরা সবাই খারাপ। আমি জানি আমাদের মুসলিম সম্প্রদায় দেশপ্রেমিক, আমরা জানি বাংলাদেশিরা শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায়। তারা তিলে তিলে এই দেশকে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। এ জন্যই আমি এখানে এসেছি তাদের জানাতে যে, বাংলাদেশি ও মুসলিম কমিউনিটি যেন না ভাবে তারা সবাই মিলে অপরাধ করেছে।
আমি যদিও ফেডারেল সরকারের কোনো জনপ্রতিনিধি নই, তবে এতটুকু বলতে চাই, এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি ট্রাম্প প্রশাসন বা অন্য কোনো নীতি নির্ধারক ভাবতে থাকেন যে সব ধরনের অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়া হবে, অথবা সেটাই যৌক্তিক পন্থা, সেটার বিরুদ্ধে আমি নিজে মাঠে থাকব। আমি আবারও স্পষ্ট করে বলছি, এটা মুসলিমের বিষয় নয়, এটা বাংলাদেশিদের বিষয় নয়। আমাদের সবাইকে এক থাকতে হবে, না হলে আমরা যদি এভাবে একজনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিয়ে পুরো কমিউনিটিকে মাপি তাহলে, যারা আমাদের মধ্যে বিভেদ ছড়াতে চায় তারাই সফল হবে। তারা সফল হলে আমেরিকার ক্ষতি হবে। আমরা আমাদের দেশের ক্ষতি চাই না, আমরা আমাদের সম্প্রতির নষ্ট চাই না। আমি এখানে দাঁড়িয়েই বলতে চাই, আমিও আপনাদের দলভুক্ত। আমিও একজন মুসলিম, আমিও একজন বাংলাদেশি। আসুন আমরা সামনে এগিয়ে যাই। 

(১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেস কনফারেন্স দেওয়া বক্তব্য)

কাজী কায়্যুম
কাজী কায়্যুম

তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করি, তারপর ভুলে যাই
মাওলানা কাজী কায়্যুম
অ্যান্টি টেররিজম সচেতনতা ইউনিট, পরিচালক

আমাদের আরও সোচ্চার হওয়া উচিত। আমাদের আরও সজাগ হওয়া উচিত। আমরা কোনো হেট ক্রাইম ঘটলে যেভাবে সোচ্চার হই, প্রতিবাদ করি, সন্ত্রাসবাদী
কোনো ঘটনা ঘটলে ঠিক ততটা হই না। আমাদের মেনে নিতে হবে যে, এরা কোনো না কোনোভাবে কারও দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। একটা ছেলে শুধুমাত্র ইউটিউব দেখেই এমন কাজ করবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে কিছু প্রতিবাদ করি। তারপর ভুলে যাই। এটাই যথেষ্ট নয়। আমরা কোনো মসজিদের সামনে একটা পোস্টার রাখি না, ব্যানার রাখি না যে, আমাদের কী করণীয় আর কীভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। এসব নিয়ে আমাদের কথা বলা দরকার। আমাদের আলাদা করে ভাবতে হবে, এখন আমাদের বসে থাকার সময় নয়।

আলী রিয়াজ
আলী রিয়াজ

এটাকে দেখতে হবে ব্যত্যয় হিসেবে
আলী রিয়াজ
অধ্যাপক, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি

বিষয়টি উদ্বেগের। যেই ঘটনা ঘটেছে সেটি নিন্দনীয় ও ঘৃণার। তবে তার পুরো অপরাধের ভার কমিউনিটি বা বাংলাদেশের সবাইকে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সেটা আমাদের পথচলার গতিকে শিথিল করে দিতে পারে। কেননা, সন্ত্রাসবাদ শুধু এই দেশের সমস্যা নয়, সেটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের কমিউনিটিকে একটু সাবধান থেকে এর প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে বলেই মনে করি আমি। এই একটি ঘটনার কারণে পুরো কমিউনিটির দিকে কেউ যেন আঙুল না তোলেন, সেটা দেখতে হবে আমাদের।
আমি দেখতে পাচ্ছি আকায়েদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে গিয়ে কেউ কেউ তার বাংলাদেশের রাজনীতির পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আমাদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বেশি হওয়া দরকার এখন অনেক বেশি। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটার সুযোগ নিয়ে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা অপরাধ। আকায়েদের ঘটনাটিকে দেখতে হবে একটি ব্যত্যয় হিসেবে। এবং এই ধরনের ব্যত্যয় যেন আর না হয় সে জন্য আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি দরকার। 

সেই প্রস্তুতির পথে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ছাড়া বিকল্প নেই। একমত হওয়া দরকার যেন, এমন ঘটনা অন্তত আমাদের মধ্য থেকে আর কেউ না ঘটাতে পারে। সেই সঙ্গে কেন একজন বিচ্ছিন্ন যুবক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে নাম লেখাতে চাইছে, অথবা নিজে অন্যের ক্ষতি করে নিজে একাই ভালো থাকতে চাইছে সেটার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করতে হবে। সন্ত্রাস বন্ধ হওয়ার উপাদানগুলো বন্ধ করতে পারছি কিনা সেটাও আমাদের দেখতে হবে।
অনেকেই ভাবছেন, এই ঘটনার পর বাংলাদেশ থেকে আর কাউকে আমেরিকায় আসতে দেবে না, অথবা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসীরাষ্ট্র হিসেবে বলা হবে। এটা ভুল ধারণা, কেননা, আমেরিকা এভাবে চলে না। এই দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হলো নাইন ইলেভেন। সেই ঘটনায় সৌদি আরবের অনেক মানুষ জড়িত, তাই বলে সৌদি নাগরিকদের কি প্রবেশাধিকার বাতিল হয়েছে? এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যবসার লেনদেন সৌদি আরবের সঙ্গেই। সুতরাং ভীতি অথবা হীনমন্যতায় না ভুগে বলতে হবে, সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের সমস্যা, সেটা কোনো সম্প্রদায়ের সমস্যা নয়। আকায়েদের মতো মানুষেরা যেন আমাদের সম্প্রদায়ের ভেতর থেকে না বের হয়, সেটা রুখে দিতেই সময় ব্যয় করা উচিত যার যার দায়িত্ব থেকে।

হাসান ফেরদৌস
হাসান ফেরদৌস

সমস্বরে বলতে হবে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে
হাসান ফেরদৌস, লেখক ও সাংবাদিক

আমি মনে করি এই ঘটনার বিরুদ্ধে দারুণ ভাবে প্রতিবাদ এবং সোচ্চার হওয়া উচিত। কেননা, দোষ করেছে একা এক ব্যক্তি কিন্তু নাম এসেছে বাংলাদেশের, নাম এসেছে মুসলিমদের। নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক বিখ্যাত কলামিস্ট এক সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সিদ্ধান্তগত ভুল বা অন্যায় হলে, সব মুসলিম মিলেই সোচ্চার হয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ হলে এদের কম মানুষ-ই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়’। আমাদের এই ধারণায় আঘাত করতে হবে এবং সমস্বরে বলতে হবে, আমরা সকল অপরাধের এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করি। সেটাই আমাদের পরিচিতির একটা বড় দিক হওয়া উচিত।

আমি বলছি এটার সম্মিলিত প্রতিবাদ হওয়া উচিত কেননা, অপরাধটা করেছে এক আকায়েদ। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো পারিবারিক অভিবাসন ব্যবস্থায় আঘাত হানার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারা নাকি ফ্যামিলি মাইগ্রেশন বন্ধ করে দেবে। তাহলে ঘটনাটি দাঁড়াচ্ছে যে, আমরা আমাদের মা বা পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকব এই দেশে? এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেন আমরা কঠোর ভাবে প্রতিবাদ করতে পারি, সে কারণেই অন্তত সবাইকে এক হয়ে দাঁড়াতে হবে, দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে যেন, আর একজনও আমাদের মধ্য থেকে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি সাধনের সাহস বা চিন্তাও না করতে পারে।

কৌশিক আহমেদ
কৌশিক আহমেদ

এখন বড় ভূমিকা নিতে হবে মসজিদগুলোকে
কৌশিক আহমেদ
সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাঙালি

আমি মনে করি না যে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে এটাও বিশ্বাস করি, এটা সংঘবদ্ধ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়। তবে এটাও বড় বাস্তবতা যে আমরা থাকি আমেরিকায়, কিন্তু আমেরিকার মঙ্গল চাই না। আমি এসেছি ২৯ বছর আগে। তখন যা চিত্র দেখেছি, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল আমাদের সমাজ। ধর্ম দিয়েই সবকিছু আমরা বিবেচনা করতে চাচ্ছি। আমাদের পোশাকে আশাক মধ্যপ্রাচ্যের মতোই হয়ে গেছে। সেটা দোষের কিছু না, কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই মানুষগুলোর মধ্যে কেউ কেউ অন্যের স্বার্থসিদ্ধির প্ররোচনায় পা দিচ্ছে। সেটাতে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।
একটা আন্ডারকভার গ্রুপ, যাদের আমরা খুব বেশি চিহ্নিত করতে পারছি না, কিন্তু কিছু মানুষ যে ভেতরে-ভেতরে এই দেশের শত্রু হিসেবে কাজ করছে বা মনে করছে সেটা আমার মনে ভয় হয়। এর আগে আমরা দেখেছি দু-একটা ক্ষেত্রে এমন মগজ ধোলাই হওয়ার পর, কিছু ছেলেমেয়েকে আলাদা করতে পেরেছিল পিতামাতারা। তারা তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়াবিবাদ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। নাইন ইলেভেনের পর ওই প্রবণতা বেড়ে ছিল, এখন যদিও এগুলো কমে এসেছে। তবে এখনো আকায়েদের মতো কিছু মানুষ ভাবছে, দেশের বা আমেরিকার ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে সে ভালো কাজ করছে। অথবা নিরীহ কিছু মানুষকে মেরে সে একাই হয়তো বেহেশতে যেতে চাইছে। এগুলো তো এমনি এমনি হচ্ছে না। কেউ না কেউ এটার পেছনে প্ররোচনার কাজ করছে। এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে এখন মসজিদগুলোকে। কেননা, ধর্মের কথা বলে তারা নিজেরা ভুলপথে পা বাড়াচ্ছে, অথচ ধর্ম ভুল পথে পা বাড়াতে বলে না মানুষকে। সেই জায়গায় আমাদের আরও কাজ করতে হবে, এটার অভাব আছে।

আবু তাহের
আবু তাহের

পরিবার থেকে আওয়াজ তুলতে হবে
আবু তাহের
প্রধান নির্বাহী, টাইম টিভি ও সম্পাদক, বাংলা পত্রিকা

আকায়েদ নামের ছেলেটি আমাদের বড়ই বিব্রত করেছে। আমি সংবাদের প্রয়োজনে ঘটনার পর, ব্রুকলিনে প্রায় এক শ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এদের মধ্যে ২/৩ জন হয়তো বলেছে, যে তারা চেনে ছেলেটিকে, তবে ভালোভাবে নয়। এতেই বোঝা যায় সে আসলে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটির মূল ধারার মধ্যে তার বসবাস ছিল না। কিন্তু একটি ঘটনায়, সারা দিন এবং এমনকি এখনো আমেরিকার মূল ধারার গণমাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার কু কর্মের কারণে। এতে আমরা পুরো বাংলাদেশি সমাজ লজ্জিত বোধ করছি।
এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না আমরা। কেননা, আমরা গত কয়েক দশকে তিলে তিলে আমেরিকার মূল ধারায় জায়গা তৈরির চেষ্টা করছি। সেখানে তার মতো দুই একজনের বিচ্ছিন্ন ঘটনার মাধ্যমে আমাদেরকে মানুষ মূল্যায়ন করুক, সেটা কারও কাম্য নয়। আকায়েদের ঘটনার পর দুভাবে আমাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। স্বল্প মেয়াদে, আমাদের ভিন্নভাবে ভিন্ন চোখে দেখতে পারে আমাদের প্রতিবেশীরা। আগে যখন আমাদের আপন করে দেখত, এখন সেখানে সন্দেহ বা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখা বেড়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে মৌখিক আক্রমণের মুখোমুখি হতে পারে কাউকে কাউকে। দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যাটা আরও বড় হবে।

আমেরিকার মূল ধারায় এত দিন ধরে আমরা যারা বাংলাদেশি কমিউনিটিকে শান্তিপ্রিয় এবং উদার মুসলিম মনোভাবের কমিউনিটি হিসেবে পরিচিত করিয়েছি বা তারা আমাদের সেভাবেই যে চিনত, সেখানে ফারাক তৈরি হতে পারে। সেটা হলেই আসল বিপর্যয় চলে আসবে। সুতরাং আর একটি ঘটনা ঘটার আগে আমাদের সচেতন হবে। মানুষে মানুষে আমাদের আলোচনা বাড়াতে হবে প্রকাশ্যে, যেন আমরা সবাই সবাইকে চিনি। সে ক্ষেত্রে সবচে বড় ভূমিকা হবে আমাদের পরিবারগুলোর। কেননা, আমাদের পরিবারের মধ্যে যদি কাউকে আমরা দেখি যে তার চিন্তা ভাবনায় জেহাদি জোশ আছে, সেখানে আমাদের দেরি না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। কেননা, আমাদের ছোট পরিবারের ক্ষুদ্র স্বার্থের বাইরে, বড় পরিবার তথা বাংলাদেশি কমিউনিটির বড় পরিবারের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। যেই দেশের আলো ছায়ায় আমাদের সন্তানরা বড় হচ্ছে সেই দেশের স্বার্থেই আমাদের সমাজকে কলুষমুক্ত করতে হবে। আকায়েদ এর মতো নিভৃতচারী কারও কারণে যেন, পুরো কমিউনিটির বদনাম না হয় আমেরিকার সমাজে সেটা ঠেকাতে গেলে আমাদের পরিবার থেকেই আগে সোচ্চার হতে হবে। আশার কথা হলো এই যে, এ যাবত যে ২/৩টি ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটিতে পরিকল্পনায় সহযোগী বা নেটওয়ার্কের ভেতরে কমিউনিটির কারও নাম আসেনি বা বাংলাদেশ থেকে সে সহযোগিতা পাচ্ছে এমন কোনো সংবাদ আমরা পাইনি। সুতরাং এটা বলা যায়, আকায়েদরা সমাজ এবং পরিবার দুটো থেকেই বিচ্ছিন্ন। এমন বিচ্ছিন্ন মানুষদের শনাক্ত করতে হবে, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই।

নারগিস আহমেদ
নারগিস আহমেদ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে থাকতে হবে
নারগিস আহমেদ
পরিচালক, দেশি সিনিয়র সেন্টার

এই এক ব্যক্তি আমাদের মাথাটা নুইয়ে দিয়েছে, কেননা অপরাধ করেছে সে একাই, কিন্তু তার অপরাধের পর সে পুরো বাংলাদেশ নামটাকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। আমরা দেখেছি অনন্য সন্ত্রাসী ঘটনার পর, শুধু মুসলিম বা সন্ত্রাসীকে ঘিরেই আলোচনা হয়, কিন্তু এই ঘটনায় সব নিউজে বাংলাদেশ নামটা এসেছে বারবার। কেননা বাংলাদেশকে এই দেশ খুব ভালো করেই জানে। শান্তিপ্রিয় ও কঠোর পরিশ্রমী এবং সামাজিক জাতি হিসেবেই আমাদের সুনাম এখানে। সে কারণেই, সবাই অবাক হয়েছে, কেন বাংলাদেশ?
আমি মনে করি, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তার জন্য আমাদের চেয়েও আমাদের ট্যাক্সের টাকায় যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চলে, তারা বেশি তৎপর। এখন আমাদের শুধু দরকার, নিজেদের স্বার্থেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা। কেননা তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, আমাদের হয়েই তারা কাজ করছে। এখানে যদিও তাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। আমি বলব, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে সহায়তা করা, আমরা যদি কোনো তথ্য জানি, তাহলে তাদের জানানোটাই বড় কাজ। 

এর বাইরে, আমাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে। আমরা যেন অধিক সংখ্যাক মানুষকে চিনি সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা আকায়েদের মতো যারা এই সব ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে, তারা অনেক সময় নিভৃতচারী। এমনকি দেখা যায়, তাদের নিজেদের পরিবারও জানে না, যে তার সন্তান কি ভাবছে, বা কি করছে। সে একাই কুকর্ম করে, কিন্তু বিপদে ফেলে সবাইকে। সেটা বন্ধ হতে হবে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, এমন একটি ঘটনার পর আমাদের নেতৃত্ব যে দুর্বল সেটা দেখা গিয়েছে। একটা সম্মিলিত বড় প্রতিবাদ বা গণসচেতনতা ডাক দিতে পারল না কেউ। বিক্ষিপ্ত ভাবে দু-চারজন নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে, কিন্তু গণপ্রতিবাদ হয়নি। এই দুর্বলতা ভাঙতে হবে।

কবির চৌধুরী
কবির চৌধুরী

জুমার নামাজে আমরা সন্ত্রাসের নিন্দা জানাব
কবির চৌধুরী, প্রেসিডেন্ট, মসজিদ আল আমান, ব্রুকলিন

আমাদের উচিত এই ঘটনাটিকে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করা এবং প্রত্যাখ্যান করা। আমরা সেই করার চেষ্টা করছি আমাদের সামর্থ্যের মধ্য থেকে। ব্রুকলিনের আমান মসজিদে প্রতি শুক্রবার কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করার জন্য। সবাইকে বার্তা প্রদানের এটি একটি বড় জায়গা এবং সেই সুযোগ আমরা নিচ্ছি। শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় আমরা এই সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানাব এবং পরিষ্কার অবস্থান ঘোষণা করে বলব, আমরা সকল ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কোনো কর্মকাণ্ড বা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে হলে, তার সকল রকম গণতান্ত্রিক উপায় আছে।

কাজী ফৌজিয়া
কাজী ফৌজিয়া

বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের লজ্জিত হতে হবে
কাজী ফৌজিয়া
মানবাধিকার কর্মী

ম্যানহাটন পোর্ট অথোরিটি ঘটনার পর আমাদের চিন্তা শুরু হয় আইন কানুন আর ট্রাম প্রশাসন এই ঘটনাকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে কাজে কী করে ব্যবহার করবে? আমাদের বাংলাদেশি তথা মুসলিম সমাজ বা ব্রাউন রঙের মানুষের ওপর আঘাত কোনো দিক থেকে আসবে? আইন কানুন ট্রাম প্রশাসন আর সাদা আধিপত্যবাদীদের ঘৃণা কোনো দিক সামাল দেব। অবাক করা বিষয় বাংলাদেশিদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সর্বপ্রথম আঘাত নিজের সমাজ থেকে আসল!
আমাদের দেশের মানুষজন মিডিয়ায় ইন্টারভিউ, বিভিন্ন সমাবেশ আর প্রেস কনফারেন্স করে বলছেন, বাংলাদেশের মান ইজ্জত শেষ করে দিয়েছে আকায়েদ।! এক আকায়েদ পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে? আমি আপনি আমরা কেউ না বাংলাদেশের? আরেকটি বিষয়, কেউ বলছেন সে সন্দীপের, কেউ বলছে সে সন্দীপে পালিত না ঢাকায় থেকেছে! আমরা কি প্রমাণ করতে চাচ্ছি? মেয়র গভর্নর পুলিশ প্রধান প্রেসিডেন্ট কেউ বলেনি আকায়েদ বাংলাদেশি বা মুসলিম। আমরা বাংলাদেশি লোকজন সারাক্ষণ চিৎকার করে বলছি, ঘৃণা ছড়াচ্ছি একে অপরের বিরুদ্ধে, কেন বলছি কারণ মিডিয়া সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম বলছে। এক মিডিয়া সাদা সন্ত্রাসীর জন্য এমন করে বলে না আর আমরা মিডিয়ার পেছনে ভাগছি। 

আমার বক্তব্য হলো, এক ঘটনা মিডিয়াকে ভুলে যেতে দেন। রোজ ঘৃণার বীজ ছড়ানো বন্ধ করেন। না হলে এক হিসেবে আপনিই এই ঘটনাটিকে তাজা রাখছেন। ম্যানহাটনের আগের ঘটনা লোক ভুলে গেছে। কারণ সমাজ রোজ ঘৃণার উৎসব চালিয়ে ঘটনাকে তাজা রাখেনি। ট্রাম তার বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন, তিনি পুরো ইমিগ্রেশন পলিসির পরিবর্তন চান। তাতে সব দেশের লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের এক লজ্জিত হতে হবে।

সোহেল মাহমুদ
সোহেল মাহমুদ

আরও আকায়েদ নেই হলফ করে বলতে পারেন?
সোহেল মাহমুদ
অভিবাসন অধিকার কর্মী, ব্রুকলিন

ব্রুকলিনের আকায়েদ উল্লাহ এখন যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশে সর্বত্র ভিলেন। আমেরিকার সাধারণ মানুষের কাছে যত না, তার অনেক অনেক গুণ বেশি বাংলাদেশের মানুষের কাছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলি আর সংবাদমাধ্যম, আকায়েদ জুড়ে আছে বিরাট একটা জায়গা। আমরা যা বলছি আর বোঝাচ্ছি এখন, “আকায়েদ সন্ত্রাসী। তার কারণে জাত যায়।” একি আমাদের স্থির-ভাবনা? আকায়েদ সন্ত্রাসী কি না বলার সময় আসেনি। সত্য হচ্ছে, বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে তার গায়ে থাকা অবস্থায়। সে নিজের সিদ্ধান্তে একক চিন্তায় এ কাজ করেছে, নাকি কারও মাধ্যমে মগজধোলাইয়ের শিকার হয়ে করেছে, এর কোনটি নিয়ে আমরা নিশ্চিত নই। আকায়েদ তদন্ত দলকে যা বলেছে, সেটি আদালত দিয়ে জারিত হয়ে তারপর আপাত-বিশ্বাসযোগ্য হবে। এই জন্য কোনো ঘটনায় যদি রাষ্ট্রীয় বা গোষ্ঠী স্বার্থ যোগ যায়, সেটির প্রকৃত নেপথ্য সাধারণ মানুষ কখনোই জানতে পারেন না।
এটাতো সত্য যে, ছেলেটা আমাদের এখানকার বাংলাদেশ কমিউনিটির মাঝে একটা শূন্যতা দেখিয়ে দিয়েছে। বন্ধনের শূন্যতা। দ্বৈত সংস্কৃতির যে চাপ, যে মনস্তাপ-আকায়েদ সেটির বলি নয় তো? এ সমাজে আরও আকায়েদ যে নেই, বা হওয়ার যোগ্য কেউ নেই, হলফ করে বলতে পারেন? আকায়েদের ঘটনার পর অনেকেই প্রতিবাদে নেমেছেন। সমাজকে এক করার কথা বলছেন। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলছেন। ভালো। সেটাই জরুরি। ‘চেইন মাইগ্রেশন’ বন্ধ হলে ব্যক্তিগতভাবে আপনার কোনো ক্ষতি যদি নাও হয়, এটা কমিউনিটির জন্য বড় ক্ষতি। নিজের ক্ষতির অঙ্ক করার চেয়ে ভাবুন কমিউনিটি নিয়ে। আজ চেইন মাইগ্রেশন, কাল সব মাইগ্রেশন বন্ধ হতে পারে। তাই, আকায়েদ তৈরির পথ বন্ধ করতে হবে।

মিনহাজ আহমেদ
মিনহাজ আহমেদ

আমাদের নিজেদের প্রমাণ করতে হবে
মিনহাজ আহমেদ
সংগঠন, গণজাগরণ মঞ্চ, যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্কের এক বিপথগামী বাংলাদেশির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের নাম ওঠায় লজ্জা, ক্ষোভ, নিন্দা, উদ্বেগ এবং ভয়ে কেঁপে উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি। ‘এক সন্ত্রাসী পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে না’, ‘বাংলাদেশিরা সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়’, ‘বাংলাদেশিরা সন্ত্রাসে নয়, মানবিকতায় বিশ্বাসী’, ‘সন্ত্রাস রুখতে বাংলাদেশিরা প্রয়োজনে সবকিছু করতে রাজি’ ইত্যাদি প্রমাণের জন্য প্রবাসে বাংলাদেশিদের অনেক সংগঠন সভা-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করছেন। বাংলাদেশ ও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের বাংলাদেশিরাও এ ঘটনায় স্থানীয় বাংলাদেশিদের পরিণতির কথা ভেবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সতর্ক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এমন প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হলো প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির অভিবাসনগত, আর্থ-সামাজিক-আইনি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা। যে কমিউনিটি নিজ দেশে রাজপথে সন্ত্রাসী হামলায় ধর্মহীন বা ধর্মত্যাগী বা ভিন্নমতাবলম্বী নিহত হলে সেটাকে অনিবার্য পরিণতি বলে মনে করে, হিন্দু-বৌদ্ধ-ইহুদি-খ্রিষ্টান নিহত হলে, ধর্ষিত হলে সামান্যতম করুণা প্রদর্শন করে না, সে কমিউনিটি বিদেশের মাটিতে অনুরূপ ঘটনায় ভিন্ন শিবিরে অবস্থান নেবে, আমি ভাবতেই পারি না। আমরা দেখছি সাম্প্রতিককালে আমাদের কমিউনিটিতে জাতিবিদ্বেষ, উগ্রতা ও অন্ধবিশ্বাস প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক ও ধর্মীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত আছে এবং তা অবাধে লালিত হচ্ছে।

কামাল হোসেন মিঠু
কামাল হোসেন মিঠু

নিজেকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে
কামাল হোসেন মিঠু
জ্যামাইকার বাসিন্দা, লেখক

আমরা অনেক সময় আমাদের সন্তানদের ধর্মভীরু বানাতে চাই। সেটা করতে গিয়ে নিজেই অথবা আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ আমার সন্তানের ভেতরে বপন করছে ধর্মীয় কট্টরপন্থার বীজ। যে বীজ একসময় বিষবৃক্ষে পরিণত হচ্ছে। ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটিকে বাড়তি কাপড়ে ঢেকে দিচ্ছি মাথা, চোখ, মুখ। এটাই কি আমাদের সংস্কৃতি, এই কি আমাদের শিক্ষা? ধর্মান্ধতার কালো ধোঁয়ায় ওদের মাথা নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে ভবিষ্যৎ। আমার ঘরের সন্তান নাম লেখাচ্ছে মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে।
আমরা কি এই চাইছি? আমরা কি এর জন্যই দেশ থেকে এত দূরে শরীরের রক্ত পানি করে ডলার কামাই করছি। ভেবে দেখার সময় এসেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে আজ নিজেকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে। সারা বিশ্বের কাছে কি আমরা পরিচিত হব মৌলবাদী দেশ হিসেবে? লুণ্ঠিত হবে আমাদের সম্মান? বিফলে যাবে সকল পরিশ্রম?
আমরা কয়জন আমাদের সন্তানকে একজন জাওয়াদ করিম, একজন স্যার ফজলে হাসান আবেদ, একজন সালমান খান, একজন সুমাইয়া কাজির কথা বলি? আজ আমরা লজ্জা পাচ্ছি। বিজয়ের মাসে লাল সবুজের পতাকা লজ্জা পাচ্ছে। সব অর্জন ছাপিয়ে একজন আকাইদ উল্লাহর পরিচয় আজ বাংলাদেশ। এ তো হতে পারে না। কিছুতেই না। বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথের, নজরুলের, জীবনানন্দের। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর।