রক্ত জমাট বাঁধা: জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকায় লাগাম টানল যুক্তরাষ্ট্র
রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনায় জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে এই প্রতিষ্ঠানের করোনার টিকার জরুরি ব্যবহারের আওতা সীমিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) বলেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাঁদের এমআরএনএ টিকা গ্রহণ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বা কোনো শারীরিক জটিলতার কারণে এ ধরনের টিকা নেওয়ার সুযোগ নেই, শুধু তাঁরাই জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিতে পারবেন। খবর এএফপির
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন এক ডোজের করোনার টিকা এনেছে। এ টিকা ফাইজার ও মডার্নার টিকার তুলনায় কম সুরক্ষা দেয়। গত বছর ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) নাগরিকদের জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়। আর এবার যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন সীমিত করার ঘোষণা দিল।
এফডিএর বিজ্ঞানী পিটার মার্কস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজকের এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা নজরদারি ব্যবস্থার বলিষ্ঠতা প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান ও তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম, তা নিশ্চিত হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৮ মার্চ পর্যন্ত ৬০ জনের থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম (টিটিএস) ধরা পড়েছে। এতে প্রাণসংশয় হওয়ার মতো সমস্যা রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটে, যদিও সংখ্যায় তা খুব বেশি নয়। টিটিএসে রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে যাঁদের টিটিএস ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসব ঘটনায় দেখা গেছে, টিকা নেওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করেছে। এই সমস্যায় প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবনব্যাপী এর প্রভাব পড়ে। যেসব নারী মেনোপজ শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী অবস্থায় আছেন, তাঁদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়ে উদ্বেগ আগেই ছিল। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এ টিকা নেওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কমই ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৮৭ লাখ ডোজ এই টিকা দেওয়া হয়েছে। যেখানে দেশটিতে মোট করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে ৫৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ।
যুক্তরাষ্ট্রে এ টিকা ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এর কারণ ব্যাখ্যায় এফডিএর বিজ্ঞানী পিটার মার্কস স্বীকার করেছেন, পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বিশ্বজুড়ে এ টিকার ব্যবহারের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তা ছাড়া যাঁদের এমআরএনএ টিকার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে, তাঁদের দিকটাও এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এমআরএনএ টিকা না নেওয়ার পেছনে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত কারণ রয়েছে। এই টিকায় কিশোর-তরুণদের হৃদ্যন্ত্রে প্রদাহের ঘটনা ঘটেছে।
হৃদ্যন্ত্রের প্রদাহসহ নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য অবস্থায় এমআরএনএ টিকা নেওয়া যায় না। জনসন অ্যান্ড জনসন এমআরএনএ টিকা নয়, বরং অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ব্যবহার করে এ টিকা তৈরি হয়েছে।