রাখে আল্লাহ মারে কে!

সুস্মিতা সেন রায়

নির্ঘাত মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছেন নিউইয়র্কের সুস্মিতা সেন রায় (৬২)। কলকাতার সুস্মিতা সেন বাংলাভাষী হিসেবে নগরীর বাংলাদেশি অনেকের কাছে পরিচিত। ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার এলাকার একটি ফ্ল্যাটে একা থাকেন। ৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্ট্রোক হলে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিরকুমারী সুস্মিতা একা থাকেন বলে বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। পরে বন্ধুদের চেষ্টায় তাঁকে বাসা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

৭ সেপ্টেম্বর স্ট্রোক করলেও তাঁর অসুস্থতার বিষয়ে বন্ধুরা খবর পান ৯ সেপ্টেম্বর রাতে। সুস্মিতা সেন রায় স্থানীয় বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে খুবই জনপ্রিয়। এলাকার উল্লেখযোগ্য সংস্কৃতিকর্মী ও কবি মাকসুদা আহমদসহ স্থানীয় বিউটি সেলুনের স্বত্বাধিকারী শারমিন তানিয়ার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর মাকসুদা আহমদ ও শারমিন তানিয়া দিনব্যাপী ফোন করে সুস্মিতার খবর নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরদিন তাঁরা আবার তাঁর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে সুস্মিতার এক আত্মীয়কে ফোন করে তাঁরা জানতে পারেন যে, সুস্মিতার সঙ্গে তাঁদের শেষ কথা হয়েছে ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে। এ খবর পেয়ে কবি মাকসুদা, শারমিন তানিয়া এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক লিংকন ছুটে যান তাঁর বাসায়। আশপাশের ফ্ল্যাটের সবাইকে জিজ্ঞাসা করে কোনো সদুত্তর না পেয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন তাঁরা।

পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে সুস্মিতা সেনকে ভীষণ অসুস্থ অবস্থায় আবিষ্কার করে। এ সময় মির্জা মামুন, কামরান, পল্লব, বান্টিসহ কয়েকজন বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন। এর পর তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরেই তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল। এতে তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। সংকটাপন্ন অবস্থায় এমন মানবিক উদ্যোগ না নিলে হয়তো তাঁকে হারাতে হতো। উপস্থিত পুলিশ, প্যারেমেডিক্স ছাড়াও ভবনটির অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা এমন উদ্যোগ নেওয়ায় মাকসুদা, তানিয়া ও লিংকনকে ধন্যবাদ জানান।

প্রায় একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে সম্প্রতি নিউইয়র্কে কবি আলেয়া চৌধুরীকে হারাতে হয়েছে। এবার কবি মাকসুদা আহমদ ও শারমিন তানিয়ার উদ্যোগের কারণে বেঁচে গেলেন সুস্মিতা সেন রায়। এই ধরনের মানবিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করায় তাঁদের ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে কবি মাকসুদা আহমদ বলেন, ‘মানুষের জন্যই তো মানুষ। এই ঘটনা আবার মনে করিয়ে দিল, রাখে আল্লাহ মারে কে?’