রাশিয়া তদন্তে নতুন প্রশ্ন: আঁতাত না ষড়যন্ত্র?

ডোনাল্ড ট্রাম্প, রবার্ট ম্যুলার ও রুডি জুলিয়ানি। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প, রবার্ট ম্যুলার ও রুডি জুলিয়ানি। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এত দিন দাবি করে এসেছেন, ২০১৬ সালে নির্বাচনে জিততে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো রকম গোপন আঁতাত (কল্যুশন) করেননি। আঁতাত করতে অন্য পক্ষ লাগে, আমার কোনো ‘অন্য পক্ষ’ ছিল না, ট্রাম্প দাবি করেছেন।

এখন ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি দাবি করছেন, আঁতাত যদি হয়েও থাকে, সেটা কোনো অপরাধ নয়। আইনের হিসাবে আঁতাত কোনো প্রমাণযোগ্য অপরাধ নয়। অন্যদিকে, ষড়যন্ত্র (কন্সপিরেসি) একটি প্রমাণযোগ্য অপরাধ, কিন্তু তা প্রমাণ করতে হলে দেখাতে হবে ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে রাশিয়ার সঙ্গে বা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন অথবা এই কাজে অর্থ জুগিয়েছেন।

গতকাল সোমবার সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জুলিয়ানি মন্তব্য করেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির কম্পিউটার ব্যবস্থায় যে হ্যাকিং হয়, সেটি একটি অপরাধ, কিন্তু ট্রাম্প সেই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি তো হ্যাকিং করেননি। পরে ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তি দেখান, আঁতাত কোনো অপরাধ হতে পারে না, আইনের কোনো বইয়েই আঁতাত বা যোগসাজশকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।

২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে বিচার বিভাগের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নটি তলিয়ে দেখছেন। ইতিমধ্যে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যুক্ত দুই ডজনের বেশি ব্যক্তিকে তিনি এই অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছেন, যাঁদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি নিজের অপরাধ স্বীকার করে ম্যুলারের তদন্তের সঙ্গে সহযোগিতায় সম্মতও হয়েছেন। হোয়াইট হাউস থেকে কোনো রকম আঁতাত বা যোগসাজশ হয়নি বলে দাবি করা হলেও যে পরিমাণ প্রমাণ ইতিমধ্যে সংগৃহীত হয়েছে, তাতে আঁতাতের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। সম্ভবত, সে কারণেই ট্রাম্পের কৌঁসুলিরা তাঁদের মনোযোগ আঁতাতের বদলে বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধার প্রশ্নটিকে কেন্দ্রীয় করে তুলতে চাইছেন। জুলিয়ানির বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, ম্যুলার হয়তো আঁতাতের বিষয়টি প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন, কিন্তু আঁতাত তো আদৌ কোনো অপরাধ নয়। ফলে এই নিয়ে অব্যাহত তদন্তের কোনো মানে নেই।

তদন্ত সমাপ্ত করার আগে ম্যুলার ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতে আগ্রহী। জুলিয়ানি জানিয়েছেন, ট্রাম্প ম্যুলারের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতে প্রস্তুত, কিন্তু বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের বিষয়টি সেখানে উত্থাপন করা যাবে না। এটি তাঁর তদন্তের বিষয় নয়। সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জুলিয়ানি ফের সেই একই যুক্তি তুলে ধরেন। ট্রাম্প ও তাঁর আইনজীবীরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানে অভিযুক্ত করা যায় না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের নির্বাহী দায়িত্ব পালনে তিনি যা কিছু করেন, তার সবই আইনসম্মত।

এদিকে সিএনএনের সঙ্গে একই সাক্ষাৎকারে অন্য আরেকটি বিষয়ে কথা বলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জুলিয়ানি। এত দিন বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্প জুনিয়র ও ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের কর্মকর্তারা একজন রুশ আইনজীবীর সঙ্গে যে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন, ট্রাম্প নিজে সে বিষয়ে কিছু জানতেন না। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন জানান, ট্রাম্প শুধু জানতেনই না, তাঁর (কোহেনের) উপস্থিতিতে ট্রাম্প এই বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে কথাও বলেন।

ট্রাম্প বরাবর এই বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন। কোহেনের নতুন দাবি প্রকাশিত হওয়ার পর এক টুইটে তা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সন্দেহ ঘোচেনি। ভাবা হচ্ছে, এই বৈঠকের ব্যাপারে ট্রাম্প জানতেন, সে কথার বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ ম্যুলার সম্ভবত সংগ্রহ করেছেন। আর সেই কারণেই ট্রাম্পের আইনি বিশেষজ্ঞেরা নতুন কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জুলিয়ানি এখন বলছেন, ট্রাম্প সেই বৈঠক বিষয়ে জানতেন কি না, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, তিনি সে বৈঠকে ছিলেন কি না। জুলিয়ানি সিএনএনকে জোর দিয়ে বলেন, না, ট্রাম্প সেখানে ছিলেন না। ‘আমি রবার্ট ম্যুলারকে আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে এই বৈঠকে ট্রাম্প ছিলেন না।’ অতএব রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নে তাঁকে অভিযুক্ত করা যায় না।