নিউইয়র্ক নগরের ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এলাকার সাম্প্রতিক বিশেষ কাউন্সিল নির্বাচনে চারজন বাংলাদেশি প্রার্থী হেরে গেছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে একক প্রার্থী থাকলে জয়ের ভালো সম্ভাবনা ছিল বলে আলোচনা রয়েছে। তবে অনেকে বলছেন, এই নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থীদের হারার কারণ আরও গভীরে। নিউইয়র্কের রাজনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের চতুর খেলাই এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এবারই প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের নির্বাচনে ‘র্যাঙ্ক চয়েস’ নামের বিশেষ বিধি চালু করা হয়েছে। ভোটার তাঁর পছন্দের অগ্রাধিকার দিয়ে একাধিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার এই পদ্ধতি চালু করা হয়। বলা হয়েছিল, এর ফলে বিশেষ স্বার্থ গোষ্ঠী ও কোনো প্রার্থীকে লক্ষ্য করে নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধ হবে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। হয়েছে উল্টো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বিশেষ নির্বাচনে একজন বাংলাদেশি প্রার্থী চরম নেতিবাচক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী দেখিয়ে দিয়েছে, নিউইয়র্কের রাজনীতিতে তারাই নিয়ন্ত্রক। এ নিয়ন্ত্রকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বাইরে থেকে যত সহজ মনে হয়, কার্যত সেটি ততটা সহজ নয়।
গথামিস্ট ডট কম নামের একটি স্থানীয় অনলাইনে এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কমন সেন্স এনওয়াইসি’ নামের একটি স্বতন্ত্র সংগঠন নগরের ডিস্ট্রিক্ট-২৪–এর বিশেষ নির্বাচনে দুই লাখ ২১ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। ক্যাম্পেইন ফাইন্যান্স নামের প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থের অর্ধেকই ব্যয় হয়েছে বেতার, অনলাইনসহ নানা গণমাধ্যমে প্রচারণায়। আর এই প্রচারণা চালানো হয়েছে নিউইয়র্ক ডেমোক্রেটিক দলের প্রাতিষ্ঠানিক প্রার্থী হিসেবে পরিচিত জেমস জেনেরোর পক্ষে।
এই অর্থের অতিরিক্ত আরও ৯৫ হাজার ডলার বাংলাদেশি তরুণ প্রার্থী মৌমিতা আহমেদের বিপক্ষে প্রচারণায় ব্যয় করা হয়েছে। সরাসরি তাঁকে লক্ষ্য করে চালানো প্রচারণায় বলা হয়েছে, মৌমিতা সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের প্রিয় প্রার্থী। তিনি পুলিশের তহবিল কর্তনের পক্ষে এবং ইসরায়েল–প্যালেস্টাইন ইস্যু নিয়ে তিনি সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থক।’ ব্যাপক নেতিবাচক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘বয়কট ইসরায়েল’ স্লোগানের সমর্থক বলে তাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘কমন সেন্স এনওয়াইসি’ নামের স্বতন্ত্র সংগঠনের মূল চাঁদা দাতারা নগরের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালী গ্রুপ। এঁদের একজন স্টিফেন রস। তিনি নগরের আবাসন ব্যবসায়ী, হাডসন ইয়ার্ডসের মতো স্থাপনার মালিকানার সঙ্গে জড়িত। জ্যাক কাইরই নগরের বহু খুচরা স্থাপনার মালিক তিনি। আরেক চাঁদাদাতা আইজ্যাক অ্যাশ বড় অ্যাপারেলস কোম্পানির মালিক।
মৌমিতার বিরুদ্ধে প্রচারণায় বলা হয়েছে, ‘এখন ভোট দাও, নইলে কাল কাঁদতে হবে।’ নিউইয়র্ক নগরের ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এলাকা বাংলাদেশি ও হিস্পানিক বর্ধিঞ্চু এলাকা। ইহুদি প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচনী এলাকায় অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশি ও হিস্পানিকরা এখনো নিজেদের সংগঠিত করতে পারেনি। ভোটার নিবন্ধন ও ভোটদানে এখনো ইহুদি এবং আগে থেকে বসবাসরত মানুষ এগিয়ে রয়েছে। এই প্রচার চালিয়ে ইহুদিদের ভোট বাগিয়ে নিয়েছেন জেমস জেনেরো। ইহুদি অধ্যুষিত এলাকার ভোটের ৬৫ শতাংশই পেয়েছেন তিনি।
বিশেষ এই নির্বাচনে মৌমিতা বাংলাদেশি মার্কিনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন। ফলে তাঁকে লক্ষ্য করে প্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীর প্রচারণা ছিল বেশি। তাতে তারা সফলও হয়েছে।
মৌমিতা বলেন, কমিউনিটির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য মরিয়া এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আবার তাদের অপকর্মে সফল হয়েছে।