
বাংলাদেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো নিউইয়র্ক-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের পুনর্মিলনী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা আর মনোরম লেক সংলগ্ন নিউইয়র্কের ফ্ল্যাশিং মেডো পার্কে ১৪ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। ক্লাবের নতুন-পুরোনো সদস্যদের পাশাপাশি প্রবাসের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি মিলন মেলায় রূপ নেয়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অ্যাটর্নি ব্রুশ ফিসার, ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান এবং হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্ট ও জাস্ট নিউজ বিডি.কম-এর সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
নিউইয়র্ক-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদ এ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও র্যাফল ড্রয়ের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবেক সাংসদ ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, লেখক ও কলামিস্ট মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ক্লাবের সদস্যসচিব শিবলী চৌধুরী কায়েস।
কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির পুনর্নির্বাচিত সভাপতি আবদুর রব ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট হাসানুজ্জামান হাসান ও ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সংগীতশিল্পী মরিয়ম মারিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি ব্রুশ ফিসার চমৎকার পরিবেশে সাংবাদিকদের পুণর্মিলনী অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে বলেন, জ্যাকসন হাইটসে গেলেই অনেক পত্রিকার দেখা মেলে। বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে বিপুলসংখ্যক পত্রিকার প্রকাশ হয়।
সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান বলেন, ‘ঢাকা তথা বাংলাদেশের ন্যায় প্রবাসেও সাংবাদিকদের বিভক্তি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেই সাংবাদিক দম্পতি ‘সাগর-রুনী’ হত্যার বিচার হচ্ছে না। আমরা ঐক্যের কথাব বললেও আন্তরিকভাবে ঐক্য চাই না বলেই সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য হচ্ছে না।’
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, একেকজনের একেক মত থাকতেই পারে। তবে সাংবাদিকদের একাধিক প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের জন্য, পেশার জন্য ভালো দেখায় না, সুন্দর লাগে না। ঢাকায় সাংবাদিকেরা ইউনিয়নগতভাবে বিভক্ত থাকলেও প্রেসক্লাব একটিই। তাই নিউইয়র্কে একটি প্রেসক্লাব হলে ভালো লাগবে।
ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন বলেন, ‘আমি দেশে রাজনীতি করলেও প্রবাসে কোনো রাজনীতি করি না। তবে ঠিকানার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির সেবা করার চেষ্টা করছি। আমরা সাংবাদিকদের ঐক্য চাই। আর এ জন্য আমার কোনো কিছু করার থাকলে আমি তা করব।’ পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেন, একাধিক প্রেসক্লাব হলেও সাংবাদিকদের মধ্যে ন্যূনতম সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার।
টাইম টিভির সিই ও বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জন্য ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান এবং সাংবাদিকদের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, শ্রদ্ধাবোধ আর পেশাদারি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বর্ণমালার প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রশংসা করে প্রেসক্লাবকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক নিয়াজ মাখদুম বলেন, দীর্ঘদিন পর প্রবাসের সাংবাদিকদের একসঙ্গে পেয়ে ভালো লাগছে। এভাবেই আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারলে সাংবাদিকদের মর্যাদাও বৃদ্ধি পাবে।
নিউইয়র্কের বাফেলোতে বসবাসকারী নিয়াজ মাখদুম সেখানে বসবাসরত হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির চাহিদার কথা বিবেচনা করে বাফেলো বাংলা নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার এটি বাজারে আসবে বলে তিনি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদ এ খান সুন্দর ও সার্থকভাবে অনুষ্ঠানটি সফল করার জন্য প্রেসক্লাবের সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং পৃষ্ঠপোষক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন সাপ্তাহিক দেশ বাংলা ও বাংলা টাইমস-এর সম্পাদক ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান, হাবিবুর রহমান (বাংলা পত্রিকা), এ বি এম সালাহউদ্দিন আহমেদ (দৈনিক ইনকিলাব), খন্দকার এ কাইয়ুম (সাপ্তাহিক বর্ণমালা), এ বি এম সালেউদ্দীন (অর্থনীতি), মমিনুল ইসলাম মজুমদার (সাপ্তাহিক বাংলাদেশ), সৈয়দ ইলিয়াস খসরু (টাইম টেলিভিশন), আবিদ রহমান (চ্যানেল আই), মেহেরুন্নেসা জোবায়দা (টাইম টেলিভিশন), পুলক মাহমুদ (এনটিভি ইউএসএ), সাজিদ হক (চ্যানল ২৪), রশীদ আহমদ (ইয়র্ক বাংলা), সামিউল ইসলাম (টাইম টেলিভিশন)। এ ছাড়া আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে)সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইমরান আনসারী, মোহাম্মদ জামিল আনসারী (ইয়র্ক বাংলা), ফটো সাংবাদিক এ হাই স্বপন ও রিংকু উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের নতুন সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, সাহেদ আলম (টাইম টেলিভিশন), মাহাথির ফারুকী (ফ্রিল্যান্সার), চৌধুরী মোহাম্মদ আলী কাজল (দ্য ডেইলি সিটিজেন টাইমস), মোহাম্মদ আরীফ হোসাইন (বিএনিউজ২৪.কম), এস এম জাহিদ রহমান (নিউজবিডি ইউএসএ.কম), টি এম মামুনুর রশীদ (সময় টিভি ইউএসএ), সোহেল হোসাইন (টাইমস২৪.নেট) এবং এস এম সোলায়মান (সাপ্তাহিক বাংলাদেশ)।
র্যাফল ড্রয়ের প্রথম পুরস্কার ছিল কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও টাঙ্গাইল সোসাইটির অন্যতম সংগঠক আশরাফুল আলম জঙ্গির সৌজন্যে টেলিভিশন। দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর সৌজন্যে ল্যাপটপ। এ ছাড়া আরও তিনটি পুরস্কার ছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্য, সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই সপরিবারে অংশ নেন।