হাতে খাবারের খালি বাটি, পিঠে পুলিশের বাড়ি

এক অভিবাসনপ্রত্যাশীর ওপর চড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশছবি: রয়টার্স

হাজার হাজার মানুষের ভিড়। হাতে বাটি বা পলিথিন নিয়ে একমুঠো খাবারের আশায় ছুটছেন তাঁরা। কেউ নেমেছেন কোমরপানিতে। কেউ আবার গলাপানিতে। খাবার পেতে মরিয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীরা মানছেন না নিজেদের সীমানা। আর সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার সম্মুখীনও হচ্ছেন। কখনো শার্টের কলারে তাদের হাত পড়ছে। কখনো ঘোড়ায় চড়া পুলিশের চাবুকের বাড়ি পিঠে পড়ছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রিও গ্রান্দে নদীর পারে। ডেল রিও শহরের সেতুর নিচে কয়েক দিন ধরেই জড়ো হয়েছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই এসেছেন হাইতি থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল ও মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান একটি নদী এই রিও গ্রান্দে।

জনসিতো জেন নামের ৩৭ বছরের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা ফাঁদে পড়ে গেছি।’ তিনি তিন দিন ধরে স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে সেতুর নিচে মাটিতে কাগজ বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এখন অনুতাপ করছেন জনসিতো। জানান, সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। পানি ও খাবার কেনার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাঁদের।

কোমরসমান পানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
ছবি: রয়টার্স

অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বলছেন, নদীটির যুক্তরাষ্ট্রের অংশে সেতুর নিচে খাদ্য ও সহায়তা অপর্যাপ্ত। মার্কিন কর্মকর্তারা গত কয়েক দিনে ওই অংশ থেকে তাঁদের সরিয়ে দিচ্ছেন। গতকাল রোববার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী মেক্সিকোর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে।

নদীটির দুই পারে ১২ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাঁরা অভিবাসনপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বিশালসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে শিবির থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার হাইতিতে ফিরে গেছেন।

অনেক চেষ্টার পরে জুটেছে খাবার
ছবি: রয়টার্স

এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে রয়টার্সের। তাঁরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাস করার সুযোগ পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা।

এমনই একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী ম্যাককিনলে পিয়েরে (২৫)। গত জুলাই মাসে হাইতি ছেড়ে চলে এসেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী, দুই বছরের মেয়ে ও এক স্বজন। সহিংসতার কারণে হাইতি ছেড়ে চলে আসেন তিনি। সেখানে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কোনো কাজও পাচ্ছিলেন না। গত জুলাই মাসে হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়। আগস্ট মাসে দেশটিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও ঝড় আঘাত হানে। স্থানীয় এক অধিবাসীর দেওয়া খাবার খেতে খেতে পিয়েরে বলেন, খিদেয় মারা যেতে না চাইলে কাজ করতে হবে।

তবে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ডেল রিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার পেট্রল চিফ রাউল ওরতিজ বলেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তাঁরা খাবার, পানি, বহনযোগ্য শৌচাগার ও জরুরি চিকিৎসাসহায়তা দিচ্ছেন।

ওরতিজ আরও বলেন, ‘আগামী ছয় থেকে সাত দিনের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য হলো সেতুর নিচে থাকা ১২ হাজার ৬৬২ অভিবাসনপ্রত্যাশীর বন্দোবস্ত করা। সেতুর নিচে জড়ো হওয়া অভিবাসীদের যাতে আমরা সামাল দিতে পারি, সে জন্য আরও অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন ঠেকানোর চেষ্টা করছি।’

নদীতে নামা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে দেখা গেছে কয়েকজন মার্কিন পুলিশ সদস্যকে। ঘোড়ায় চড়ে চাবুকের মতো একটি জিনিস হাতে মার্কিন এক পুলিশ সদস্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গতিরোধের চেষ্টা করছিলেন।

আরেকজন মার্কিন পুলিশকে এক অভিবাসনপ্রত্যাশীর শার্টের কলার ধরে টানাটানি করতে দেখা গেছে। ওই অভিবাসী খাবার সংগ্রহের জন্য ব্যাগ হাতে নদীর তিরে ছোটাছুটি করছিলেন।