বন্দুকধারীর মা সেই ক্যাথলিক স্কুলেরই কর্মী ছিলেন: পুলিশ

ম্যারি গ্রেস ওয়েস্টম্যান, রবিন ওয়েস্টম্যান (ডানে)ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় অ্যানানসিয়েশন চার্চ ও ক্যাথলিক স্কুলে হামলাকারী বন্দুকধারীর মা ওই স্কুলেরই কর্মী ছিলেন। পুলিশ জানায়, হামলাকারীর মা ম্যারি গ্রেস ওয়েস্টম্যান দীর্ঘ পাঁচ বছর অ্যানানসিয়েশন ক্যাথলিক স্কুলে সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২১ সালে অবসরে যান।

স্থানীয় সময় বুধবার সকালে মিনিয়াপোলিস শহরে ওই ট্রান্সজেন্ডার বন্দুকধারীর হামলায় ২ শিক্ষার্থী নিহত ও ১৭ জন আহত হন। ২৩ বছর বয়সী হামলাকারী রবিন ওয়েস্টম্যান ঘটনাস্থলেই নিজের গুলিতে আত্মঘাতী হন। এ ঘটনার পর তাঁর পরিবারের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

চার্চের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্লগ ও ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘তিনি (ম্যারি গ্রেস) আন্তরিক আতিথেয়তা, বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার মাধ্যমে গত পাঁচ বছর অ্যানানসিয়েশনে আগত সবাইকে সেবা দিয়েছেন। আমরা আপনার অনুপস্থিতি অনুভব করব। অবসর সময়ের জন্য শুভকামনা!’

ম্যারি গ্রেসের ভাই ও কেন্টাকি জেনারেল অ্যাসেম্বলির সাবেক রিপাবলিকান প্রতিনিধি রবার্ট এল হেলেরিঞ্জার ২০১০–এর দশকে প্রকাশিত একাধিক মতামতধর্মী লেখায় এ পরিবারের কড়া ক্যাথলিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

হেলেরিঞ্জার তাঁর লুইসভিল কুরিয়ার জার্নালে লিখেছেন, তাঁদের মা নিয়মিত স্থানীয় পাদরিদের সম্মানে নৈশভোজ আয়োজন করতেন এবং একসঙ্গে প্রার্থনা করতেন। পাদরিদের সান্নিধ্যে তাঁদের জীবন কীভাবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল, তা–ও তিনি উল্লেখ করেন। এসব লেখায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কেন্টাকিতে বেড়ে ওঠার সময় হেলেরিঞ্জার নিজে চার্চে কাজ করেছেন।

১৯৮০ সালে জেভিয়ার থেকে স্নাতক শেষ হওয়ার অল্প কিছুদিন পর হেলেরিঞ্জার কেন্টাকি জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে একটি আসন লাভ করেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত ওই আসন ধরে রেখেছিলেন তিনি। ওই সময় হেলেরিঞ্জার দেশের ক্যাথলিক–অধ্যুষিত এলাকায় শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করেছিলেন। এর মধ্যে লুইসভিলের কিছু চার্চও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

হেলেরিঞ্জার লিখেছেন, ‘পবিত্র স্থানে ঘটে যাওয়া এসব নির্মম অপরাধের মূল্য শোধ হতে পারে অবশ্যই সামষ্টিকভাবে আমাদের লজ্জিত হওয়াটা।’

ওয়েস্টম্যান আইনগতভাবে নিজের নাম রবার্ট থেকে রবিনে পরিবর্তন করেছিলেন। এর তিন বছর পর ২০২৩ হেলেরিঞ্জার রিপাবলিকান রক্ষণশীলদের এলজিবিটিকিউ-প্লাস সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক অবস্থানের সমালোচনা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, তাঁদের পরিচয় কারও নাক গলানোর বিষয় নয়।

তবে ওয়েস্টম্যানের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে হেলেরিঞ্জার এমন অবস্থান নেননি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন এক সংবাদমাধ্যমকে হেলেরিঞ্জার বলেন, তাঁরা দুজন একে অপরের সম্পর্কে খুবই কম জানতেন। কারণ, তাঁদের পরিবার কয়েকটি অঙ্গরাজ্য দূরে বসবাস করে আসছিল।

এ বন্দুক হামলার ঘটনায় মর্মাহত হেলেরিঞ্জার বলেন, ‘ওয়েস্টম্যান নিরপরাধ স্কুলশিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে আমাকে গুলি করতে পারত...।’

পুলিশের কাছে ওয়েস্টম্যানের নামে এর আগে কোনো অপরাধের রেকর্ড ছিল না বলে সাংবাদিকদের জানান মিনিয়াপোলিস পুলিশের প্রধান ব্রায়ান ও’হারা।

ওয়েস্টম্যান ইউটিউবে কিছু উদ্বেগজনক ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যা পরে তিনি মুছে দেন। ভিডিওতে তাঁর হাতে লেখা পৃষ্ঠাগুলোতে ‘অসুস্থ মানসিকতার’ বিষয়টি উঠে এসেছিল। হামলাকারীর বন্দুকের ম্যাগাজিনে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যা করো’ এবং ‘শিশুদের জন্য’ কথাগুলো শক্ত কিছু দিয়ে ঘষে লেখা ছিল।