শিশুটির বাড়িতে একে একে এল লাখ টাকার খাবার

বাবার সঙ্গে শিশু ম্যাসন স্টোনহাউস
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

চিংড়ি, সালাদ, শর্মা, স্যান্ডউইচ, চিলি চিজ ফ্রাইজ, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন রকমের খাবার অর্ডার করেছিল ছোট্ট ম্যাসন স্টোনহাউস। একে একে প্রায় এক হাজার ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ টাকার বেশি) খাবার অর্ডার করে বসে সে। এর মধ্যে পিৎজাই ছিল ৪০০ ডলার মূল্যের (প্রায় ৪৩ হাজার টাকা)।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। ছয় বছরের শিশু ম্যাসন স্টোনহাউস রাতে ঘুমানোর আগে তার বাবার মুঠোফোন নিয়ে খেলছিল। হঠাৎই যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন খাবারের প্রতিষ্ঠান গ্রাবহাবের অ্যাপসে ঢুকে পড়ে সে। এরপর অনলাইনে একের পর এক খাবার বাছাই করে অর্ডার দিতে থাকে।

গত বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়, গত শনিবার রাত নয়টার দিকে ডিট্রয়েটের কাছে চেস্টারফিল্ড টাউনশিপে ম্যাসনদের বাড়িতে খাবার আসতে শুরু করে।

এত বেশি খাবারের অর্ডার করা হয়েছিল যে ম্যাসনের বাবা কিথের ব্যাংক থেকে তাঁর মুঠোফোনে একটি সতর্কবার্তা (ফ্রড অ্যালার্ট) পাঠানো হয়। পিৎজার অর্ডার তিনিই দিয়েছেন, তা নিশ্চিত করতে এ বার্তা দেওয়া হয়।

ম্যাসন স্টোনহাউসের বাড়ির ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, সেদিন তার বাড়ির দরজায় একের পর এক খাবারের ডেলিভারি আসছে। আর তা দেখে ম্যাসনের বাবা কিথ হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন।

মিশিগানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডব্লিউডিআইভি-টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিথ বলেন, ‘আমি বলছিলাম, কী হচ্ছে? আপনারা আমার জন্য খাবার নিয়ে আসছেন কেন?’

পরে কিথের মাথায় আসে, ম্যাসনতো তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোনটি নিয়েছিল!
কী ঘটেছে, বুঝতে পারার পর কিথ অর্ডারগুলো বাতিল করার জন্য গ্রাবহাব অ্যাপসভুক্ত রেস্তোরাঁগুলোকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে রেস্তোরাঁগুলোর কর্তৃপক্ষ তাঁকে এ ব্যাপারে গ্রাবহাবের সঙ্গে কথা বলতে বলে।

এমলাইভ ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিথ বলেন, ‘সব খাবার আসতে শুরু করার পর আমি বিষয়টা বুঝতে পারলাম। এ নিয়ে কথা বলতে ম্যাসনের কাছে গেলাম। আর পুরো ঘটনার এই পর্বে এসে আমার হাসি পেল। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে ও যা করেছে, তা ঠিক নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ও তখন ওর হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিল এবং বলল, বাবা, পেপারনি পিৎজা এখনো আসেনি? আমি ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে এলাম। আমি কি উন্মাদ হয়ে যাব, নাকি হাসব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’

এত বেশি খাবার জমে গিয়েছিল যে পরে তা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়ে দেন কিথ।
ম্যাসন স্টোনহাউসের এ কাণ্ড জেনে তার বাড়িতে গিয়েছিল গ্রাবহাব কর্তৃপক্ষ। তার পরিবারকে এক হাজার ডলার মূল্যের একটি গ্রাবহাব গিফট কার্ড দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ম্যাসনের মা-বাবা বলেছেন, সন্তানের খেলাচ্ছলে খরচ করে ফেলার এ ঘটনার মধ্য থেকে তাঁরা শিক্ষা নিয়েছেন। সন্তানকেও এর মধ্য দিয়ে অর্থ ব্যবস্থাপনার শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ম্যাসনের খেলনা ব্যাংকে জমা থাকা কয়েনগুলো বের করে নিয়েছেন তাঁরা। এক একটি কয়েন বের করে ম্যাসনকে বলেছেন, ‘এটা পিৎজার দাম, এটা চিংড়ির দাম।’

ম্যাসনের মা ক্রিস্টিন স্টোনহাউস সন্তানকে বলেছেন, ‘আমরা জানি, খেলনা ব্যাংকটি তোমার জন্য অনেক কিছু। যা খরচ হয়েছে, এটি তার সামান্য ভগ্নাংশমাত্র।’

ম্যাসনের মা-বাবা বলেছেন, হাতে ফোন ফেরত পেতেও এখন তাঁদের সন্তানকে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।