ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা ‘পুরোপুরিই বন্ধ’ বলে বিবেচনা করুন

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। নরওয়ের নেসোডেন শহর ও বিগডয়ের দ্বীপের কাছে। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ভেনেজুয়েলা ও এর আশপাশের আকাশপথ ‘পুরোপুরিই বন্ধ’ বিবেচনা করতে সব এয়ারলাইনসসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে করে লাতিন আমেরিকার দেশটির বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান উত্তেজনা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

ট্রাম্প পোস্টে লিখেছেন, ‘সব এয়ারলাইনস, পাইলট, মাদক কারবারি এবং মানব পাচারকারীদের প্রতি আহ্বান থাকবে—অনুগ্রহ করে ভেনেজুয়েলার ওপরের এবং আশপাশের আকাশপথকে পুরোপুরিই বন্ধ বলে বিবেচনা করুন।’ কিন্তু এর দ্বারা কী বুঝিয়েছেন, তা ট্রাম্প ব্যাখ্যা করেননি।

জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলার ওপর চাপ তৈরি করতে সম্প্রতি ক্যারিবীয় অঞ্চলে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অঞ্চলটিতে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ মোতায়েন করা হয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরি।

ওয়াশিংটনের দাবি, মাদকের পাচার ঠেকাতে এই সামরিক শক্তি মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু কারাকাসের দাবি, মাদুরো সরকারকে উৎখাত করাই ওয়াশিংটন আসল উদ্দেশ্য।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে ২০টির বেশি ‘মাদকবাহী’ নৌযানে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলায় ৮০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব নৌযান ভেনেজুয়েলার বলেও দাবি করা হচ্ছে।

কিন্তু এসব নৌযান মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। তা ছাড়া নৌযানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছিল, এমন কোনো প্রমাণও তারা দিতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিযান এবং সামরিক শক্তি মোতায়েনের কারণে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুন

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষ ভেনেজুয়েলার আকাশসীমায় চলাচলকারী বেসামরিক উড়োজাহাজকে ‘সতর্কতা অবলম্বনের’ নির্দেশ দিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, ‘ভেনেজুয়েলা ও আশপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এবং সামরিক তৎপরতা বেড়েছে।’

এই সতর্কবার্তার পর দক্ষিণ আমেরিকার আকাশপথে চলাচলকারী ছয়টি বড় এয়ারলাইনস ভেনেজুয়েলাগামী নিজেদের সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। এয়ারলাইনসগুলো হলো—স্পেনের ইবেরিয়া, পর্তুগালের টিএপি, কলম্বিয়ার অ্যাভিয়াঙ্কা, চিলি ও ব্রাজিলের ল্যাটাম (এলএটিএএম), ব্রাজিলের গোল (জিওএল) এবং তার্কিশ এয়ারলাইনস।

ফ্লাইট স্থগিতে ক্ষুব্ধ কারাকাস এসব এয়ারলাইনসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ভেনেজুয়েলার অভিযোগ, এসব কোম্পানি ‘মার্কিন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে।’

শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিকোলা মাদুরো ফোনে কথা বলেছেন। দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য এক বৈঠক নিয়েও আলোচনা করেছেন।

ট্রাম্প-মাদুরো ফোনালাপের খবর প্রকাশের আগের দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, স্থলপথে ভেনেজুয়েলার মাদক পাচার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র খুব শিগগির পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর ওয়াশিংটন-কারাকাস উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

আরও পড়ুন