লাভরভের সঙ্গে ‘খোলামেলা’ আলাপ হয়েছে, দাবি ব্লিঙ্কেনের

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম নিজেদের মধ্যে আলাপ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। গতকাল শুক্রবার দুই নেতার এই ফোনালাপকে ‘খোলামেলা’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এমন সময় ব্লিঙ্কেন এ মন্তব্য করলেন, যখন রাশিয়ায় দুই আমেরিকান বন্দীকে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। খবর এএফপি

ব্লিঙ্কেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও লাভরভকে এড়িয়ে চলেছেন তিনি। দুই মার্কিন বন্দীকে মুক্ত করতে রাশিয়াকে বন্দী বিনিময়ে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন।

সাংবাদিকদের ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে খোলামেলা ও সরাসরি আলোচনা হয়েছে। পল হুইলান ও ব্রিটনি গ্রিনারকে মুক্তি দিতে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, তা গ্রহণ করতে ক্রেমলিনকে আমি জোর দিয়ে বলেছি।’

‘ক্যানাবিস অয়েল’ পরিবহনের দায়ে বাস্কেটবল তারকা গ্রিনার আর গোয়েন্দাগিরির দায়ে সাবেক মেরিন সেনা হুইলান রাশিয়ায় কারাভোগ করছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হুইলান। এই দুই বন্দীকে দেশে ফেরাতে জনগণের ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবিলা করে আসছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

লাভরভের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, তা জানাতে অস্বীকার করেন ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি কতটুকু এগিয়েছে বলে আমি ভাবছি, সেই মূল্যায়ন আমি আপনাদের দিতে পারি না। বরং এটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এ বিষয়ে তিনি সরাসরি আমার কাছ থেকে শুনেছেন।’

ফোনালাপের বিষয়ে এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ জোরালোভাবে প্রয়োজন। সম্ভাব্য রুশ ও মার্কিন বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে রুশ পক্ষ জোর দিয়েছিল যে আমরা বিচক্ষণ কূটনীতির কাঠামোতে সংবাদমাধ্যমের জল্পনামুক্ত পেশাদার সংলাপের ধারায় ফিরে আসি।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করায় মার্কিন সেনাবাহিনী ও দেশটির নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর নিন্দা জানিয়েছেন লাভরভ। তিনি বলেন, এটি কেবলই কিয়েভ সরকারের মর্মবেদনা বাড়াবে, সংঘাত এবং ভুক্তভোগীর সংখ্যা বিস্তৃত করবে।

কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই বন্দী বিনিময় প্রস্তাব রাশিয়ায় পাঠানো হয়। এতে দণ্ডিত রুশ অস্ত্র চোরাচালানকারী ভিক্টর বাউটের বিনিময়ে দুই আমেরিকান বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এপ্রিলেও দুই দেশের মধ্যে একই ধরনের বন্দী বিনিময় হয়েছিল।

ফোনালাপে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে তুরস্কের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত চুক্তির প্রতি রাশিয়া যাতে সম্মান দেখায়, তা লাভরভকে জোর দিয়ে বলেছেন ব্লিঙ্কেন।

এ ছাড়া ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর দখল করা ভূখণ্ড রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হলে বিশ্ব সেটার স্বীকৃতি দেবে না বলে লাভরভকে জানান ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে রাশিয়ার আমাদের কাছ থেকে সরাসরি শুনেছে এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেবল এটি গ্রহণই করা হবে না তা নয়, এই পথে এগোলে ফল হিসেবে আরও যথোপযুক্ত মাশুল রাশিয়ার ওপর চাপানো হবে।’

জুলাইয়ের শুরুর দিকে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান ব্লিঙ্কেন। আগামী সপ্তাহে কম্বোডিয়ায় সাউথ-ইস্ট এশিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও লাভরভের সঙ্গে ব্লিঙ্কেন বৈঠক করবেন না বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস।

আরও পড়ুন: চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্লিঙ্কেন, বাদ লাভরভ