দাবি না মানলে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বর্জনের হুমকি শিক্ষার্থীদের

গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সামনে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাঁদের হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড ও ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যায়। গত শুক্রবারের ছবিছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ। বিক্ষোভকারীদের হটাতে মারমুখী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো কোনোটি পিছিয়ে দিচ্ছে।

বিক্ষোভে উত্তাল চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি সপ্তাহের শেষে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি মাসে অথবা আগামী জুনে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বাধা দিতে পারেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। এ কারণে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের দাবি মানা না হলে এসব আয়োজন বর্জন ও অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসাসহ বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন তাঁরা।

গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ এবং ইসরায়েল বা ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি দাবি জানিয়ে গত ১৭ এপ্রিল প্রথম আন্দোলনে নামেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। এরপর দেশটির ৪৫টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় ১৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের হটাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর জানা গেছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের অস্থায়ী তাঁবু ভেঙে দিয়েছে। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী নয়, এমন গ্রেনেড এমনকি গুলির ব্যবহার করা হয়েছে।

এভাবে বিক্ষোভ দমন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন অধিকারকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।

নিউইয়র্ক ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নিমাত মিনোশে এক বিবৃতিতে বলেছেন, আসন্ন স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে কি না, এ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি (আইইউ) ক্যাম্পাস থেকে দুই দফায় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বর্জনের ডাক দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই গতকাল ও আজ রোববার স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব কানেটিকাট। অনুষ্ঠানে বাধা এলে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীদের।

স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তবে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার সময় সবাইকে তল্লাশি করা হবে।

আজ রোববার স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট টেড কার্টার সতর্ক করে বলেছেন, যেকোনো আয়োজন, ক্লাস, পরীক্ষায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে নিয়ম মেনে তা প্রতিহত করা হবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করেছে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া। আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠান বাতিল নয়তো পেছানোর পরিকল্পনা করছে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে স্নাতক সমাপনী আয়োজনে কতটা প্রভাব পড়ছে—এ নিয়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রয়টার্স। আট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান নিয়ে তাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

ফটকে পুলিশ, আকাশে ড্রোন

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান এ আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ দাঙ্গা পুলিশ ডেকে এনে বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে দাঙ্গা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দক্ষিণ ফটকের সামনে পুলিশ সশস্ত্র অবস্থান নেয়। এ সময় ফটকের সামনে রাখা ছিল কারাবন্দীদের বহনের জন্য সাতটি বাস। ওপরে উড়ছিল ড্রোন। ক্যাম্পাসে ঢুকেই চড়াও হয় পুলিশ। অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করে।

সেদিন সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়া ও ক্যাম্পাসে ঢোকা বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ।

শুধু কলাম্বিয়া নয়, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে আগে থেকেই অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। ওই দিন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও ৩০ জন। তাঁরা দাঙ্গা পুলিশের পোশাকে ছিলেন। তাঁদের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণই ছিল। পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের দিকে এগোতে শুরু করেন। পুলিশ এসেই বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ।

সমঝোতার চেষ্টা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের

দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন দমনে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মারমুখী অবস্থান নিলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছে।

একই শর্তে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে ইলিনয়ের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, রাটগার্স ইউনিভার্সিটি, এভারগ্রিন স্টেট কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটির মতো আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁবু গেড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।