জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা নিয়ে ট্রাম্পের আদেশ বৈধ কি না, দেখবেন সুপ্রিম কোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধানকে কঠোর করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন, সেটির বৈধতা খতিয়ে দেখতে সম্মত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল শুক্রবার আদালত এ সম্মতি দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কড়াকড়ি করার পদক্ষেপ হিসেবে ট্রাম্প ওই নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। এটি মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই তিনি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দম্পতিদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া বন্ধে ওই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি নিম্ন আদালত একের পর এক রায় দিয়ে সে সিদ্ধান্তকে আটকে দেন। এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের করা আপিল গ্রহণ করেছেন।

ট্রাম্পের আদেশে বলা হয়েছিল, যদি কোনো শিশুর মা–বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী) না হন, তবে দেশটির সংস্থাগুলো সেই শিশুর মার্কিন নাগরিকত্ব স্বীকার করবে না।

কিন্তু নিম্ন আদালত রায় দিয়েছিলেন যে ট্রাম্পের এ নীতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী ও জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার সংরক্ষণ করা ফেডারেল আইন উভয়ই লঙ্ঘন করছে। ট্রাম্পের নীতির কারণে নাগরিকত্ব হারানোর হুমকিতে থাকা লোকজনের পক্ষে নিম্ন আদালতে মামলা করা হয়েছিল।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব চ্যালেঞ্জ করে করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য এখনো কোনো তারিখ ঠিক করা হয়নি। মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ঠেকাতে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পরপরই তা আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। এ সময় ফেডারেল আদালতের কয়েকজন বিচারক রায় দেন যে এটি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। একই সময়ে দুটি ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত ওই আদেশ কার্যকর করার ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর আওতায় প্রায় ১৬০ বছর ধরে এ নীতি প্রতিষ্ঠিত যে দেশটিতে জন্মগ্রহণকারী যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে বিবেচিত হবে। তবে শুধু কূটনীতিক ও বিদেশি সামরিক বাহিনীর সন্তানদের ক্ষেত্রে এ নীতিটা আলাদা।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে কিংবা অস্থায়ী ভিসায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের সে দেশে জন্ম নেওয়া সন্তানদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেশের অভিবাসনব্যবস্থায় সংস্কার আনতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিস্তৃত চেষ্টার অংশ হিসেবে এটি করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার ওপর উল্লেখযোগ্য হুমকি মোকাবিলা করাই এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য।

মামলায় বাদীপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) নামের সংগঠন। এর জাতীয় আইনি পরিচালক সেসিলিয়া ওয়াং বিবিসির মার্কিন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিবিএসকে বলেন, ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে নাগরিকত্বের যে মৌলিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা কোনো প্রেসিডেন্ট বদলে দিতে পারেন না।

এক বিবৃতিতে ওয়াং বলেন, ‘আমাদের আইন এবং জাতীয় ঐতিহ্য অনুসারে ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্মানো প্রত্যেকেই জন্মসূত্রে নাগরিক বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমরা আশা করছি, এ দফায় সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান হবে।’

গৃহযুদ্ধ শেষে মুক্তি পাওয়া দাস ও তাঁদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী আনা হয়েছিল। সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বিদেশিদের সন্তান বা অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য এটি আনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মালেই নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে—এ ধারণা ভুল।
ডি জন সাওয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের সলিসিটর জেনারেল

বিশ্বে প্রায় ৩০টি দেশ আছে, যারা নিজেদের সীমানার মধ্যে জন্ম নেওয়া যেকোনো শিশুকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র তেমনই একটি দেশ।

অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ঠেকাতে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পরপরই তা আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। এ সময় ফেডারেল আদালতের কয়েকজন বিচারক রায় দেন যে এটি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। একই সময়ে দুটি ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত ওই আদেশ কার্যকর করার ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।

এরপর ট্রাম্প এ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান। গত জুনে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়ে বলেন যে নিম্ন আদালতগুলো যে স্থগিতাদেশ জারি করেছেন, তা তাঁদের এখতিয়ারের সীমা ছাড়িয়েছে। তবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মূল প্রশ্নে আদালত কোনো মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন

১৪তম সংশোধনী পাস হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের পর। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো সাবেক দাসদের নাগরিকত্বের প্রশ্ন চূড়ান্তভাবে সমাধান করার জন্য এ সংশোধনী আনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ার বলেন, গৃহযুদ্ধ শেষে মুক্তি পাওয়া দাস ও তাঁদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই সংশোধনীটি আনা হয়েছিল। সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বিদেশিদের সন্তান বা অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য এ সংশোধনী আনা হয়নি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মালেই নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে—এ ধারণা ভুল।

গত মে মাসে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ২৭ লাখ ও ২০৭৫ সালের মধ্যে তা ৫৪ লাখ বাড়তে পারে।

গত মে মাসে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ২৭ লাখ ও ২০৭৫ সালের মধ্যে তা ৫৪ লাখ বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন