যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলি লবিস্ট গ্রুপ আইপ্যাক থেকে কেন দূরে সরে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী প্রভাবশালী সংগঠন আইপ্যাক থেকে নিজেদের দূরে রাখছেন অনেক ডেমাক্র্যাট নেতা। কেন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রতি সমর্থন কমছে—এসব নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন অ্যানি কার্নি। ২ অক্টোবর লেখাটি তাদের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট–দলীয় কংগ্রেস সদস্য ও সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস ১৭ বছর ধরে ‘জে স্ট্রিট’–এর সঙ্গে সৌজন্যমূলক বৈঠক করে আসছেন। জে স্ট্রিট হলো মধ্যবামপন্থী একটি লবিং গ্রুপ, যারা মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে সম্পর্ক তৈরির এই দীর্ঘ সময়ে হাকিম জেফ্রিস কখনোই নির্বাচনে এই গ্রুপটির আনুষ্ঠানিক সমর্থন চাননি। তিনি বরং যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’—এআইপিএসির (আইপ্যাক নামে বেশি পরিচিত) সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
আইপ্যাক হলো কট্টর ইসরায়েলপন্থী লবিষ্ট সংগঠন, যারা জেফ্রিসকে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিকভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। অতীতে তাদের সমর্থিত আইনপ্রণেতাদের এমন কোনো গ্রুপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হতে নিরুৎসাহিত করা হতো, যারা ইসরায়েলের ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করে থাকে।
তবে গত মাস থেকে এই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করেছে। হাকিম জেফ্রিস প্রথমবারের মতো যখন জে স্ট্রিটের আনুষ্ঠানিক সমর্থন গ্রহণ করেন, তখন এই পরিবর্তন চোখে পড়েছে।
জেফ্রিসের এই সমর্থন গ্রহণ ‘জে স্ট্রিট’–এর জন্য একটি বড় সাফল্য ছিল। কারণ, তারা বর্তমান ইসরায়েলি সরকারের তীব্র সমালোচক। ক্যাপিটল হিলে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত কর্মকাণ্ডের সমালোচক মূল ধারার কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
জে স্ট্রিটের পক্ষ থেকে হাকিম জেফ্রিসকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি ক্যাপিটল হিলে তেমন কোনো সাড়া ফেলেনি। কারণ, এই গ্রুপটি এরই মধ্যে কংগ্রেসের অর্ধেকেরও বেশি ডেমোক্র্যাট সদস্য এবং কংগ্রেসের বাকি ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বকে সমর্থন করেছে।
হাকিম জেফ্রিস আইপ্যাকের সঙ্গে এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত যে, রেডিও হোস্ট শার্লামেন থা গড সম্প্রতি তাঁকে উপহাস করে ‘আইপ্যাক শাকুর’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাই, এই ডেমোক্র্যাট নেতার এমন পদক্ষেপ কংগ্রেসে ইসরায়েল ও কয়েক দশক ধরে মার্কিন রাজনীতিতে সবচেয়ে শক্তিশালী ইসরায়েলপন্থী গ্রুপটির ক্ষেত্রে যে বড় এক পরিবর্তন ঘটছে, সেটা মোটামুটি আঁচ করা যাচ্ছে।
জেফ্রিস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতারক লোকটা শার্লাটন আসলে কী বলছেন, সেটা তিনি নিজেই জানেন না। সংগীত জগতের বড় নাম যেমন বার্ডম্যান, বিনি সিগেল, ফ্রেড্রো স্টার আর এনবিএ ইয়াংবয় তারকারা তা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’
গাজায় নির্বিচার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি সরকারের প্রতি যখন মার্কিন জনগণের সমর্থনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি সমর্থন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে, তখন ক্যাপিটল হিলের কিছু ডেমোক্র্যাট নেতার কাছে আইপ্যাক ক্রমশ একটি ‘টক্সিক ব্র্যান্ডে’ পরিণত হচ্ছে।
এটি কংগ্রেসে ইসরায়েল নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সাম্প্রতিক প্রমাণ, যেখানে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা বহু বছরের পুরোনো দ্বিদলীয় ঐক্যমত থেকে সরে আসছেন। এক সময় ক্যাপিটল হিলে (মার্কিন কংগ্রেস) ইহুদি রাষ্ট্রটিকে নিঃশর্ত সমর্থন দেওয়া হতো।
একসময় ডেমোক্র্যাট নেতারা আইপ্যাককে তাঁদের অন্যতম প্রধান দাতা হিসেবে গণ্য করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় তাঁরা এই গ্রুপের অনুদান নিতে অস্বীকার করছেন। আইপ্যাকের বার্ষিক ইসরায়েল সফরকে অনেক আইনপ্রণেতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
একসময় প্রথম মেয়াদের বেশির ভাগ কংগ্রেস সদস্য আইপ্যাকের আয়োজনে ইসরায়েল সফরে যেতে বেশ উৎসাহিত ছিলেন। কিন্তু সেই ইসরায়েল সফরে এখন ডেমোক্র্যাটদের উপস্থিতি কমে গেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিনেটের ডেমোক্রেটিক ককাসের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে আইপ্যাকবিরোধী একটি প্রস্তাবিত আইনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
আইপ্যাক দীর্ঘদিন ধরে ক্যাপিটল হিলে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণকারী আইনপ্রণেতাদের পরাজিত করতে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর মিসৌরির সাবেক কংগ্রেস সদস্য কোরি বুশ এবং নিউইয়র্কের জামাল বোম্যানকে পরাজিত করতে আইপ্যাক ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছিল। এই দুই প্রগতিশীল নেতা ইসরায়েলকে নিঃশর্ত মার্কিন সহায়তার তীব্র বিরোধী ছিলেন।
এ ছাড়া অরেগন রাজ্যে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে (প্রাথমিক বাছাই) আইপ্যাক ১০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ ঢেলেছিল। সেখানে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী সুশীলা জয়পালের বিরুদ্ধে ম্যাক্সিন ই ডেক্সটারকে সমর্থন জুগিয়েছিল। সুশীলা জয়পাল কাউন্টির সাবেক কমিশনার এবং কংগ্রেসের সদস্য প্রমিলা জয়পালের বোন। প্রমিলা কংগ্রেসনাল প্রগ্রেসিভ ককাসের সাবেক চেয়ারপারসন।
ডেক্সটার জয়ী হলে আইপ্যাক সেই বিজয় নিয়ে বেশ উল্লাস প্রকাশ করেছিল। তারা তখন বলেছিল, মিসেস ডেক্সটারের ‘ইসরায়েলবিরোধী’ প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভারমন্টের নির্দলীয় সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং জে স্ট্রিট সমর্থন করেছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে গত দুই বছরে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার। এ সময় যুদ্ধ নিয়ে জনমত পরিবর্তিত হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা যখন এই সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ক্রমবর্ধমান সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, তখন আইপ্যাক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি অবিচল আনুগত্য প্রকাশ করে যাচ্ছে।
আইপ্যাক গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে হামাসের বিরুদ্ধে একটি ‘ন্যায়সংগত ও নৈতিক’ যুদ্ধ হিসেবে দাবি করছে। তারা আরও দাবি করে আসছে, সেখানকার বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগের জন্য একমাত্র হামাসই দায়ী।
তবে ডেমোক্র্যাটরা এখন আইপ্যাকের এই অবস্থানের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে আগের চেয়ে কম ইচ্ছুক।
আগে নির্বাচনী প্রচারের জন্য আইপ্যাকের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট–দলীয় এমন তিন সদস্য গত কয়েক সপ্তাহে জানিয়েছেন, তাঁরা আর এই গ্রুপের কাছ থেকে অনুদান নেবেন না। এই তিন সদস্য হলেন কেন্টাকির মরগান ম্যাকগার্ভি, নর্থ ক্যারোলাইনার ডেবোরা কে রস এবং নর্থ ক্যারোলাইনার ভ্যালেরি পি ফৌশি।
গত বছর অরেগনে প্রাইমারি জিততে আইপ্যাকের আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভর করেছিলেন মিসেস ডেক্সটার। সেই ডেক্সটারই সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবিলম্বে ইসরায়েলে আক্রমণাত্মক অস্ত্রের চালান বন্ধ করা উচিত এবং গাজায় দ্রুত, পর্যাপ্ত ও টেকসই মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা উচিত।
ডেক্সটার ‘ব্লক দ্য বম্বস অ্যাক্ট’-এর একজন সহ-পৃষ্ঠপোষকও। এই আইনে ইসরায়েল নির্দিষ্ট মানবাধিকার শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত দেশটিতে কিছু বিশেষ অস্ত্র বিক্রি সীমিত করার কথা বলা হয়েছে।
আইপ্যাক এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যেসব প্রার্থীকে সমর্থন করেছে, তাঁদের তালিকায় ডেক্সটারের নাম নেই। এ বিষয়ে জানতে তাঁর একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
জে স্ট্রিটের প্রেসিডেন্ট জেরেমি বেন-অ্যামি বলেন, এসব পরিবর্তন ইসরায়েল সম্পর্কে বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে।
এক সাক্ষাৎকারে বেন-অ্যামি বলেন, ‘গাজায় গত দুই বছরে যা ঘটেছে, তার কারণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ এক সন্ধিক্ষণে রয়েছি। আইপ্যাক এখনও মনে করে, ইসরায়েল সরকারকে সমর্থন করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। তবে তারা এখন বাধার মুখে পড়েছে।’
আইপ্যাকের মুখপাত্র মার্শাল উইটম্যান দাবি করেন, অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট এখনও বোঝেন, ইসরায়েলপন্থী হওয়া একই সঙ্গে ভালো রাজনীতি এবং ভালো নীতি।
তবে আইপ্যাকের গ্রীষ্মকালীন ইসরায়েল সফরে ডেমোক্র্যাটদের উপস্থিতি কমে যাওয়া নতুন এক প্রবণতাকে তুলে ধরছে।
আইপ্যাকের শিক্ষা শাখা আয়োজিত এই সফর কংগ্রেস সদস্যদের ইসরায়েল সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়তা করে। এর ফলে ইসরায়েলি হামলায় নিয়মিত বেসামরিক মানুষ হতাহত হওয়া এবং খাদ্য সরবরাহ বন্ধের কারণে দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টির যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ এখনো তেল আবিবের যুদ্ধংদেহী আচরণের পক্ষে কথা বলেন।
মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট–দলীয় কংগ্রেস সদস্য ও আইপ্যাকের এই সফরের দীর্ঘদিনের অনানুষ্ঠানিক নেতা স্টেনি এইচ হয়ার গত আগস্টে ইসরায়েল সফরের সময় আইপ্যাকের জন্য একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। এতে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বিশ্বজুড়ে প্রচলিত মতামতের বিপরীতে গিয়ে হামাসের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন বেসামরিক নাগরিকদের ন্যূনতম ক্ষতি নিশ্চিত করতে ইসরায়েল সম্ভাব্য সবকিছু করছে।’
অতীতে কংগ্রেসে প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সদস্যদের বেশির ভাগই এই সফরে অংশ নিতেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে জেফ্রিসসহ ডেমোক্র্যাট–দলীয় ২৪ জন কংগ্রেস সদস্য আইপ্যাকের সঙ্গে ইসরায়েল ভ্রমণ করেছিলেন। সে বছর প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সদস্য ছিলেন ৩৪ জন।
চলতি বছর প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট–দলীয় ৩৩ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১১ জন ইসরায়েল সফরে অংশ নিয়েছেন। নিয়মিত সফরে যাওয়া জেফ্রিসও এই বছর যাননি। আরও সাতজন ডেমোক্র্যাট সদস্য গত আগস্টের সফরে যেতে এতটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন যে, আইপ্যাক তাঁদের জন্য ইসরায়েলে যাওয়া টিকিটও কিনে ফেলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফর থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন।
ডেমোক্র্যাট–দলীয় যেসব নতুন সদস্য আইপ্যাকের সঙ্গে ইসরায়েল গিয়েছিলেন, তাঁরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট–দলীয় সদস্যদের মধ্যে এই পরিবর্তন জনমতের বৃহত্তর এক পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করছে। নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন অনেকটা কমে গেছে। ভোটাররা গাজায় হামলা নিয়ে ইসরায়েলি সরকারের প্রতি নেতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছেন।
ক্যাপিটল হিলে এই প্রবণতা বেশ কিছুদিন ধরেই নীরবে তৈরি হচ্ছিল।
গত জুলাইয়ে ডেমোক্র্যাটিক ককাসের ২৭ জন সিনেটর ইসরায়েলে অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি আটকাতে বার্নি স্যান্ডার্সের একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। এর চেয়ে সামান্য কম সদস্য ইসরায়েলে বোমা বিক্রি আটকানোর একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
এই সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি হতে পারত। মিশিগানের ডেমোক্র্যাট–দলীয় সিনেটর এলিসা স্লটকিন সেসব ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি বলেন, উপস্থিত থাকলে তিনিও এসব প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতেন। অন্তত আরেকজন মূলধারার ডেমোক্র্যাট নেতা বলেছেন, তিনিও এসব প্রস্তাবে সমর্থন করার কথা বিবেচনা করবেন।
ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট–দলীয় আরেক সিনেটর ক্রিস কুনস গত সপ্তাহে সাধারণ পরিষদের এক অনুষ্ঠানে মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওসকে বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রশাসনের দিক থেকে কোনো পরিবর্তন না আসলে আমি প্রথমবারের মতো গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করব।’
আইপ্যাকের মুখপাত্র উইটম্যান দাবি করেন, অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট নেতা বোঝেন, ইসরায়েল হামাসের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ন্যায্য ও নৈতিক যুদ্ধ করছে। তিনি কুনসের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উইটম্যান সম্প্রতি কংগ্রেসের এক ভোটাভুটির দিকে ইঙ্গিত করেন। আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে ৪২২-৬ ভোটে ইসরায়েলকে দেওয়া ৫০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সহায়তা কাটছাঁটের একটি চেষ্টা নাকচ হয়েছিল।
উইটম্যান এই উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বোঝাতে চান, মার্কিন আইনপ্রণেতারা এখনো আইপ্যাকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। গত বছর আইপ্যাক-সমর্থিত ডেমোক্র্যাটদের ৯৫ শতাংশ তাঁদের নিজ নিজ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সহায়তা কাটছাঁটের প্রস্তাবটি ব্যর্থ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী শিবিরেও একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে কিছু রিপাবলিকান ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের কতটা সহায়তা করা উচিত—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জর্জিয়ার কট্টর-ডানপন্থী রিপাবলিকান প্রতিনিধি মার্জোরি টেলর গ্রিন এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন। তিনি গাজার পরিস্থিতিকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
আগামী বছর টেলরের পুনর্নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নামার বিষয়ে আইপ্যাক নাকি এখন চিন্তা–ভাবনা শুরু করেছে।
মিসেস টেলর গ্রিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনভিত্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন, যাঁরা এখন ইসরায়েলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাম্প থেকে সরে আসার মনোভাব দেখাচ্ছেন।
সম্প্রতি মেগিন কেলির এক পডকাস্টে মিসেস টেলর গ্রিন ও মিসেস কেলি ইসরায়েল সফরে যোগ দিতে আইপ্যাকের পক্ষ থেকে তাঁদর ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, তা নিয়ে আলোচনা করেন। মিসেস গ্রিন বলেন, আইনপ্রণেতাদের প্রথম দিকে আকৃষ্ট করার একটি উপায় ছিল এই সফর, যাতে তাঁরা পরবর্তী সময়ে তাদের পক্ষ নেন।
মিসেস গ্রিন বলেন, ‘তারা আপনাকে টেনে নিতে চায়। কারণ, তারা আপনাকে তাদের পক্ষে টানতে চায়।’