যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ব্রেওনা নিহতের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তার ৩৩ মাসের কারাদণ্ড
যুক্তরাষ্ট্রে একটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানোর সময় পুলিশের গুলিতে এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী নিহত হওয়ার ঘটনায় কেন্টাকি পুলিশের এক সাবেক কর্মকর্তাকে ৩৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
নিহত ওই নারীর নাম ব্রেওনা টেলর। ২০২০ সালে পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যান।
গত বছরের নভেম্বরে এক ফেডারেল জুরি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ব্রেওনা টেলরের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ব্রেট হ্যাঙ্কিসনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
গতকাল সোমবার রায় ঘোষণার মাত্র কয়েক দিন আগে ট্রাম্প প্রশাসন বিচারককে ব্রেট হ্যাঙ্কিসনকে মাত্র এক দিনের সাজা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের এ অবস্থান মামলাটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কেলি গুডলেট স্বীকার করেছেন, তিনি এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে ব্রেওনা টেলরের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর জন্য ব্যবহৃত হলফনামা জালিয়াতি করেছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর নিজেদের কর্মকাণ্ড আড়াল করার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। আগামী বছর গুডলেটের সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।
ব্রেওনা টেলরের বাড়িতে অভিযানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা হ্যাঙ্কিসনই একমাত্র কর্মকর্তা, যিনি এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
আরেক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কেলি গুডলেট স্বীকার করেছেন, তিনি এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে ব্রেওনা টেলরের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হলফনামা জালিয়াতি করেছিলেন এবং তাঁর (ব্রেওনা) মৃত্যুর পর নিজেদের কর্মকাণ্ড আড়াল করার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। আগামী বছর গুডলেটের সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।
আমার মনে হয়, বিচারক তাঁর হাতে থাকা সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাজা ভোগের পর ব্রেট হ্যাঙ্কিসনকে আরও তিন বছর নজরদারিতে থাকতে হবে।
ব্রেওনার মা ট্যামিকা পামার ও তাঁর পরিবারের পক্ষের আইনজীবীরা গতকাল সাজা ঘোষণার পর বক্তব্য দেন।
ট্যামিকা পামার বলেন, ‘আমার মনে হয়, বিচারক তাঁর হাতে থাকা সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ তবে তিনি ফেডারেল প্রসিকিউটরদের সমালোচনা করেছেন। এই কৌঁসুলিরা কম শাস্তির পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন।
টেলর নিহত হওয়ার দিন সাদাপোশাকের পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে ‘নো-নক’ তল্লাশি পরোয়ানা কার্যকর করেন। যখন পুলিশ আসে, তখন ভোর। টেলর ও তাঁর প্রেমিক ওয়াকার ঘুমিয়ে ছিলেন। পুলিশ অতর্কিতে টেলরের অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করে।
ব্রেওনার প্রেমিক কেনেথ ওয়াকার অভিযানের রাতে তাঁর সঙ্গে একই অ্যাপার্টমেন্টে ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘আমরা সামান্য হলেও ন্যায়বিচার পেয়েছি, তাতেই কৃতজ্ঞ।’
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন ব্রেওনা। পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু এবং ওই বছর গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার রক্ষার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ওই আন্দোলনের ছড়িয়ে পড়ে। পরে অন্যান্য দেশেও এ আন্দোলন ছড়িয়ে যায়।
ব্রেওনা নিহত হওয়ার দিন সাদাপোশাকের পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে ‘নো-নক’ তল্লাশি পরোয়ানা কার্যকর করেন। যখন পুলিশ আসে, তখন ভোর। ব্রেওনা ও তাঁর প্রেমিক ওয়াকার ঘুমিয়ে ছিলেন। পুলিশ অতর্কিতে অ্যাপার্টমেন্টটিতে প্রবেশ করে।
নো-নক তল্লাশি পরোয়ানায় পুলিশ দরজায় নক না করে কারও বাড়িতে সরাসরি প্রবেশের অনুমতি পায়। সাধারণত এ ধরনের পরোয়ানা দ্রুত তল্লাশি বা প্রমাণ নষ্ট করা রোধে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি নিয়ে বিতর্কিত রয়েছে। কারণ, এতে বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও অধিকারহানির আশঙ্কা থাকে।
পুলিশ নিজেদের পরিচয় দেয়নি। তাই আমি তাদের দুষ্কৃতকারী ভেবেছিলেন।
পুলিশ সেদিন ব্রেওনার সাবেক প্রেমিকের খোঁজে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করতে এসেছিল। পুলিশের বিশ্বাস ছিল, তাঁর সাবেক প্রেমিক মাদকদ্রব্য লুকিয়ে রাখার জন্য অ্যাপার্টমেন্টটি ব্যবহার করছিলেন।
পুলিশ দরজা ভেঙে প্রবেশ করলে ওয়াকার একবার গুলি চালান। গুলি পুলিশ সদস্য জন ম্যাটিংলির পায়ে লাগে। ওয়াকার দাবি করেন, পুলিশ নিজেদের পরিচয় দেয়নি। তাই তিনি ভেবেছিলেন তারা দুষ্কৃতকারী।
ওয়াকারের গুলির পর পুলিশের তিন সদস্য পাল্টা গুলি ছোড়েন। সেদিন টেলরের ফ্ল্যাটে পুলিশ ৩২টি গুলি ছুড়েছিল। বিচার চলাকালে হ্যাঙ্কিসন স্বীকার করেন, সহকর্মীদের রক্ষা করতে সেদিন তিনি টেলরের অ্যাপার্টমেন্টে ১০ বার গুলি চালিয়েছিলেন।
ওয়াকারের গুলির পর পুলিশের তিন সদস্য পাল্টা গুলি ছোড়েন। সেদিন ব্রেওনার অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশ মোট ৩২টি গুলি ছুড়েছিল। বিচার চলাকালে হ্যাঙ্কিসন স্বীকার করেন, সহকর্মীদের রক্ষা করতে সেদিন তিনি ব্রেওনার অ্যাপার্টমেন্টে ১০ বার গুলি চালিয়েছিলেন।
হ্যাঙ্কিসনের ছোড়া গুলি সেদিন কারও গায়ে লাগেনি। তবে সেগুলো পাশের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে পড়ে। অ্যাপার্টমেন্টটিতে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী, পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশু ও একজন পুরুষ ঘুমিয়ে ছিলেন।
প্রসিকিউটররা বলেন, হ্যাঙ্কিসন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছেন ও প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের সবচেয়ে মৌলিক নিয়মগুলোর একটি লঙ্ঘন করেছেন। যদি তাঁরা যাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছেন, তাঁকে দেখতে না পান, তবে গুলি চালানো তাঁদের উচিত হয়নি।
গতকাল আদালতের বাইরে রায় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বিক্ষোভকারীরা ব্রেওনা টেলরের নাম ধরে স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ব্রেওনার এক স্বজনসহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে।