সিআইএর গোপন অভিযান: ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ালে পরিণতি কী হবে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস প্রথম এ নির্দেশ দেওয়া নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা।
ট্রাম্প আরও বলেন, তাঁর প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার পরিকল্পনার কথা ভাবছে। সম্প্রতি ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার জাহাজে একাধিক মার্কিন হামলা এবং এ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাদুরো বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আরও উত্তেজনা বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর মাদুরো বলেন, ‘আমরা এমন কোনো সরকার পরিবর্তন চাই না; যা আফগানিস্তান, ইরাক বা লিবিয়ার ব্যর্থ যুদ্ধের মতো হতে পারে। সিআইএ পরিচালিত অভ্যুত্থানও আমরা চাই না। লাতিন আমেরিকা এসব চায় না, এসবের প্রয়োজন নেই এবং এসব প্রত্যাখ্যানও করে।’
তাহলে ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে কী পরিকল্পনা করছেন? তাঁর পদক্ষেপগুলো কি আইনসংগত? ভেনেজুয়েলা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে? লাতিন আমেরিকায় গোপন সিআইএ অভিযান কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে ইতিহাস কী বলে—এমন নানা প্রশ্ন ও বিষয় সামনে আসছে।
ট্রাম্প কী ঘোষণা করেছেন
একজন সাংবাদিক হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন?’
‘আসলে আমি দুই কারণে অনুমোদন দিয়েছি’, ট্রাম্প বলেন। ‘প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে বন্দীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। আরেকটি কারণ, মাদক। ভেনেজুয়েলা থেকে অনেক মাদক যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, বেশির ভাগই সাগরপথে। এটা আপনারা লক্ষ্য করেছেন, কিন্তু আমরা স্থলপথে সেটাও রোধ করতে যাচ্ছি।’
সাংবাদিকেরা যখন জানতে চান, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার অনুমতি সিআইএর আছে কি না; ট্রাম্প এর স্পষ্ট উত্তর দেননি। তিনি সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি অস্বীকারও করেননি।
‘ওহ, আমি এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না…এটা আমাকে জিজ্ঞাসা করা উপহাসের…এটা বিদ্রূপাত্মক প্রশ্ন তা নয়, কিন্তু উত্তর দেওয়া হাস্যকর হতে পারে। তবে আমি মনে করি, ভেনেজুয়েলা এখন চাপ অনুভব করছে’, ট্রাম্প বলেন।
সাংবাদিকেরা যখন জানতে চান, সিআইএর মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার অনুমতি আছে কি না; ট্রাম্প সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি অস্বীকারও করেননি।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে কোন অভিযান চালিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার জলসীমায় অন্তত পাঁচবার জাহাজে হামলা চালিয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই জাহাজগুলোতে মাদক পরিবহন করা হচ্ছিল। হামলায় মোট ২৭ জন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ হামলা মঙ্গলবার ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প তাঁর নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার কর্তৃত্বের অধীন, আজ সকালে সেক্রেটারি অব ওয়ার ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে ইউএসসাউথকম এলাকায় মাদক পাচারে লিপ্ত একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনের (ডিটিও) জাহাজে মারাত্মক হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, জাহাজে থাকা ছয় ‘পুরুষ মাদক সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছেন।
ভেনেজুয়েলার জাহাজে প্রথম মার্কিন হামলা হয়েছিল গত ২ সেপ্টেম্বর। এতে ১১ জন নিহত হন। পরে ১৫ ও ১৯ সেপ্টেম্বর আরও দুটি হামলা হয়। হামলায় তিনজন করে নিহত হন। চতুর্থ হামলা হয় ৩ অক্টোবর; যেখানে চারজন নিহত হন বলে জানান মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
আসলে আমি দুই কারণে অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে বন্দীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। আরেকটি কারণ, মাদক। ভেনেজুয়েলা থেকে অনেক মাদক যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, বেশির ভাগই সাগরপথে। কিন্তু আমরা স্থলপথে সেটাও রোধ করতে যাচ্ছি।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
তবে এ পর্যন্ত ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন কোনো প্রমাণ দেয়নি, জাহাজগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে মাদক পাঠানো হচ্ছিল।
প্রেসিডেন্ট কি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া গোপন বা সামরিক অভিযান চালাতে পারেন
বিশেষজ্ঞরা আগে আল-জাজিরাকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা সম্ভবত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং তা মার্কিন সংবিধানের বিরোধী।
ভেনেজুয়েলায় কোনো স্থল অভিযান চালালে, সেটা সিআইএ বা মার্কিন সেনা যে–ই করুক; প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনগত ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য সমুদ্রপথে হামলার চেয়ে কঠিন হবে।
নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সালভাদর সান্তিনো রেগিলমে গত মাসে আল-জাজিরাকে বলেছেন, সমুদ্রে প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়ে কারও জীবন নেওয়ার আগে তাঁর বাঁচার অধিকারকে স্বীকার করতে হবে। সেনারা শুধু তখন শক্তি ব্যবহার করবেন, যখন তা সত্যি দরকার এবং ঠিক যতটুকু দরকার, ততটুকুই ব্যবহার করতে হবে।
রেগিলমে বলেন, ‘সমুদ্র আইনসংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ (ইউএনক্লস) ও ১৯৮৮ সালের জাতিসংঘ মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ সনদ জাহাজ হঠাৎ ধ্বংস করা নয়; বরং সামুদ্রিক কাজে সহযোগিতা করা, জাহাজে অভিযান ও সম্মতি নেওয়ার পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেয়। কোনো অভিযানে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নিহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত করা উচিত।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্রুস ফেইন মার্কিন সামুদ্রিক অভিযানের সমালোচনায় আরও বেশি স্পষ্ট। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র বা এর বাহিনীর ওপর কেউ সরাসরি আক্রমণ না করে, তবে প্রেসিডেন্ট স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে পারেন না, কংগ্রেসের অনুমতি লাগবে। কথিত ভেনেজুয়েলার মাদক পাচারকারীদের ওপর হামলা সংবিধানবিরোধী।’
১৯৭৩ সালের ফেডারেল আইন ‘দ্য ওয়ার পাওয়ারস রেজল্যুশন’ প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধে নামতে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, কোনো সামরিক অভিযান শুরু করলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে জানাতে হবে।
ফেইন আরও বলেছেন, এমন হামলার অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসে গণভোট প্রয়োজন; যা এখন পর্যন্ত হয়নি।
প্রেসিডেন্ট মেয়াদের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার মাদক চক্রগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আগস্টে আল-জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ফেইন বলেন, ওই ঘোষণা ‘অবৈধ; কারণ, এটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার যোগ্যতার আইনি মানদণ্ডের বিরোধী।’
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংগঠনকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য তা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের হতে হবে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতে হবে ও মার্কিন নাগরিকদের বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী হতে হবে।
ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেছেন, মাদুরোর প্রশাসন ভেনেজুয়েলার মাদক চক্রগুলোর পেছনে রয়েছে; যদিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা নিজেও বলেছে, এর কোনো প্রমাণ নেই।
ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া কী ছিল
ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য, ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনে অভিযান চালানোর বৈধতা তৈরি করা। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য, দেশের সব সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
মাদুরোও বিশ্বের নানা জায়গায় সিআইএর সম্পৃক্ততার সমালোচনা করেছেন। যদিও সরাসরি ট্রাম্পের অনুমোদনে সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালানোর অনুমতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি তিনি।
ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কার্লোস পিনা বলেন, ট্রাম্পের এ ঘোষণার ফলে দেশে মাদুরোর রাজনৈতিক প্রভাব সুসংহত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আজ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট আবারও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছেন ও বিশেষভাবে এমন এক ঔপনিবেশিকতাবিরোধী বক্তব্য জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন, যা অতীতে লাতিন আমেরিকার বহু বামপন্থী সরকার এবং দল নিজেদের দেশে ওয়াশিংটনের প্রভাব ঠেকাতে ব্যবহার করেছে।’
তবে পিনা সতর্ক করেন, ‘বাস্তবে ট্রাম্পের এ ঘোষণা ভেনেজুয়েলা সরকারের ভেতরে নজরদারি ও দমননীতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে; যদি তা নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায়।’
ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য, ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনে অভিযান চালানোর বৈধতা তৈরি করা। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য, দেশের সব সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলো কী বলেছে
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বুধবার ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানান এবং এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেন।
কলম্বিয়ার দক্ষিণের পুতুমায়ো প্রদেশে এক অনুষ্ঠানে পেত্রো বলেন, ‘সত্যি বলতে, ভেনেজুয়েলার বর্তমান সরকারের নীতির ভক্ত আমি নই...কিন্তু আমি জানি, এমন কিছু হলে কলম্বিয়ায় কী হতে পারে। যদি ওখানে ক্ষেপণাস্ত্র পড়া শুরু হয় বা আজ যেমনটা বলা হচ্ছে, সিআইএ এজেন্ট বা মার্কিন মেরিনরা স্থলপথে কোনো সহিংস অভিযান শুরু করে কিংবা যদি নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, তাঁরা মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত হোক বা না হোক—তবে তার দায় আমার দেশের ওপরই পড়বে।’
পেত্রো আরও বলেন, ‘এটা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধী হবে, যা সমস্বরে কলম্বিয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল।’ তিনি ২০১৬ সালের এক চুক্তির কথা বলছিলেন। এটি কলম্বিয়া সরকার ও বিদ্রোহী সংগঠন ফার্ক (এফএআরসি-ইপি) এর মধ্যে দীর্ঘ সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছিল।
লাতিন আমেরিকায় সিআইএর অতীত কেমন
সিআইএর ইতিহাস খুবই বিতর্কিত। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের এ গোয়েন্দা সংস্থা ভেনেজুয়েলায় কী করতে চায়, তা পরিষ্কার নয়। তবে ইতিহাস বলছে, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাদের কার্যকলাপ ছিল এককথায় নোংরা।
১৮০০ সালের শেষদিক থেকে ২০ শতকের শুরুর দশকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে একের পর এক সামরিক অভিযান চালায়। এটি ‘ব্যানানা ওয়ারস’ নামে পরিচিত। এসব অভিযান ছিল মূলত ওই অঞ্চলে মার্কিন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য।
১৯৩৪ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ‘গুড নেইবার পলিসি’ (সুপ্রতিবেশীসুলভ নীতি) চালু করেন। এর লক্ষ্য ছিল, লাতিন আমেরিকার কোনো দেশ দখল বা দমন না করা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। তবে যুক্তরাষ্ট্র বেশি দিন ‘ভালো প্রতিবেশী’ হয়ে থাকেনি।
শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নির্বাচিত বামপন্থী নেতাদের অপসারণে অভিযান চালায় এবং তাতে অর্থায়ন করে। উদাহরণ হিসেবে ১৯৫০ এর দশকে গুয়েতেমালা, ষাটের দশকে কিউবা, ব্রাজিল ও ইকুয়েডর, ষাট ও সত্তুরের দশকে বলিভিয়া এবং সত্তুরের দশকে চিলিতে অভিযান, একই দশকে লাতিন আমেরিকার ছয় দেশে ‘অপারেশন কনডোর’, আশির দশকে এল সালভেদর, গ্রানাডা ও পানামায় চালানোর অভিযানের কথা বলা যায়।
যদি দুই পক্ষের মধ্যে সত্যিকারের যুদ্ধ শুরু হয়, তবে নতুন করে আরও এক দফা শরণার্থী সংকট তৈরি হবে, যার পরিমাণ এখনই অনুমান করা অসম্ভব।কার্লোস পিনা, ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
ভেনেজুয়েলা ও এ অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি কী
বিশ্লেষক কার্লোস পিনা আল-জাজিরাকে বলেছেন, ট্রাম্পের নির্দেশ ও হুমকির পর লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ এখন সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে, যেমন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এবং আলবা জোটের কয়েকটি দেশ—কিউবা, নিকারাগুয়া, বলিভিয়া, হন্ডুরাস ও কিছু ক্যারিবীয় দ্বীপ।
পিনা বলেন, এমন পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে ব্যাপকভাবে টানাপোড়েন বাড়াবে। কিন্তু মাদুরো ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর অনেক কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করেছেন। তাই এখন বেশির ভাগ দেশ চুপ থেকে পরিস্থিতি সামলাতে চাইছে।
২০২৪ সালের ২৮ জুলাইয়ের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা ফলাফল মানেনি। কার্টার সেন্টার ও জাতিসংঘের এক তদন্ত দল জানায়, ওই ভোট আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের মানদণ্ড পূরণ করেনি। নয়টি লাতিন আমেরিকার দেশও স্বাধীন পর্যবেক্ষণে ফলাফল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।
পিনা বলেন, ‘এখন কিছু দেশ হয়তো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু আপাতত যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলা দুপক্ষই আলোচনা থেকে অনেক দূরে রয়েছে।’ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখন চাপ বাড়াবে; যাতে মাদুরো শান্তিপূর্ণভাবে পদ ছাড়েন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উপস্থিতি জোরদার করবে। তবে মাদুরোও সহজে পিছু হটবেন না।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি সত্যি যুদ্ধ বেধে যায়, তার প্রভাব পুরো লাতিন আমেরিকায় পড়বে।’
ইতিমধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক সংকটের জেরে ২০১৪ সাল থেকে তেলসমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলা ছেড়ে ৮০ লাখের বেশি মানুষ অন্য দেশে চলে গেছেন।
‘যদি দুই পক্ষের মধ্যে সত্যিকারের যুদ্ধ শুরু হয়, তবে নতুন করে আরও এক দফা শরণার্থী সংকট তৈরি হবে, যার পরিমাণ এখনই অনুমান করা অসম্ভব,’ বলেন পিনা।