পৃথিবীকে রক্ষায় নাসার পরীক্ষায় প্রাথমিক সাফল্য

‘ডিমোরফোস’ নামের এই গ্রহাণুতে আঘাত হেনেছে নাসার নভোযান ডার্ট। এতে গ্রহাণুটির গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি
ছবি: রয়টার্স

গ্রহাণুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় শক্তি প্রয়োগ করে তার গতিপথ পরিবর্তন করা যায় কি না, তার একটি পরীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ১০ মাস আগে নাসার উৎক্ষেপণ করা একটি নভোযান পৃথিবী থেকে ১ কোটি ১০ লাখ কিলোমিটার দূরবর্তী একটি গ্রহাণুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে।

নাসার ওই নভোযানের নাম ‘ডার্ট’। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিটে হাইপারসনিক গতিতে ডার্ট গিয়ে গ্রহাণুটিতে আঘাত হানে। ডার্টের আকার একটি ভেন্ডিং মেশিনের সমান। সে তুলনায় ‘ডিমোরফোস’ নামের গ্রহাণুটি বিশাল—একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের আকৃতির।

সংঘর্ষের আগপর্যন্ত ডার্টে থাকা ক্যামেরায় ধারণ করা গ্রহাণুটির চিত্র সরাসরি নাসার ওয়েবসাইটে দেখানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির কাছে নাসার এই অভিযান পরিচালনাকেন্দ্র থেকে তা সরাসরি দেখানো হয়। প্রতি সেকেন্ডে গ্রহাণুর ছবি আসে। ডার্ট যত কাছাকাছি যাচ্ছিল, ততই বড় হতে থাকে গ্রহাণুর ছবি। এতে নাসার নিয়ন্ত্রণকক্ষে করতালি আর উল্লাসে ফেটে পড়েন সংস্থার বিজ্ঞানীরা।

ডার্ট সফলভাবে আঘাত হানলেও গ্রহাণুটির গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা অবশ্য এখনই জানা যাচ্ছে না। আগামী মাসে পৃথিবী থেকে নাসার টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহাণুটি পর্যবেক্ষণের পরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যদিও হিসাব–নিকাশ মিলিয়ে নাসার কর্মকর্তারা বলছেন, নভোযানটি যে উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল, তা সফল হয়েছে।

গত বছর নভেম্বরে নাসার স্পেসএক্স রকেটের মাধ্যমে ডার্ট উৎক্ষেপণ করা হয়। এই অভিযান পরিচালনায় মোট ৩৩ কোটি ডলার খরচ হয়েছে নাসার। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে প্রায় সাত বছর। অভিযানের সফলতা নিয়ে নাসার উপপ্রশাসক পাম মেলরয় বলেন, ‘এমন কিছু করা (গ্রহাণুতে সংঘর্ষ) আমাদের এই অভিযানের চূড়ান্ত পূর্ণতা এনে দিয়েছে। এখানে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি হয়তো একদিন আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করবে।’

৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল ‘চিক্সুলুব’ নামের একটি গ্রহাণু। তাতে পৃথিবীর মোট গাছপালা ও পশুপাখির চার ভাগের তিন ভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ওই সময়ই বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসর। ওই গ্রহাণুর তুলনায় আকারে অনেক ছোট ডিমোরফোস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিমোরফোসের মতো আকৃতির গ্রহাণুগুলো যদিও পুরো পৃথিবীর জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না, তবে সেগুলোর সরাসরি আঘাতে বড় কোনো শহর নিমেষেই মাটির সঙ্গে মিশে যেতে পারে।