এয়ার ইন্ডিয়া বোমা হামলা মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে কানাডায় একজনের যাবজ্জীবন
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক শিখ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মামলার দুই আসামির একজনকে কানাডার আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০ বছর পর্যন্ত তাঁর পেরোলে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
দণ্ডপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির নাম ট্যানার ফক্স (২৪)। গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ কলম্বিয়া সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন।
২০২২ সালে শিখ ব্যবসায়ী রিপুধামান সিং মালিককে হত্যা করা হয়। তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে বোমা হামলার মামলার আসামি ছিলেন। অবশ্য পরে তিনি খালাস পান।
গত বছরের অক্টোবরে রিপুধামান সিং মালিককে হত্যার দায় স্বীকার করেন ট্যানার ফক্স ও হোসে লোপেজ। আগামী শুক্রবার লোপেজের সাজা ঘোষণা করা হবে।
একটি আবেগঘন সকালের পর ট্যানার ফক্সের সাজা ঘোষণা করা হয়, যখন রিপুধামান সিং মালিকের স্বজনেরা ফক্সের প্রতি অনুরোধ জানান, যেন তিনি রিপুধামানকে হত্যার জন্য কারা তাঁকে ভাড়া করেছিল, সেই তথ্য প্রকাশ করেন।
নিউ ওয়েস্টমিনস্টারের ওই আদালতকক্ষের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যমতে, রিপুধামানের পুত্রবধূ সন্দীপ কর ঢালিওয়াল ফক্সের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা আপনার কাছে অনুরোধ করছি, আপনাকে যারা নিয়োগ করেছেন, তাদের নাম প্রকাশ করুন।’
রিপুধামান হত্যার বিচারের প্রাক্কালে অভিযুক্ত ওই দুই ব্যক্তি তাঁদের দোষ স্বীকার করে নেন।
২০২২ সালের ১৪ জুলাই কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া অঙ্গরাজ্যের সারে শহরে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে নিজ গাড়ির ভেতরে রিপুধামানকে বেশ কয়েকবার গুলি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছেই একটি পুড়ে যাওয়া গাড়ি খুঁজে পায়।
আইনজীবী ম্যাথিউ স্টেসি আদালতকে বলেন, ফক্স ও লোপেজ শিখ ব্যবসায়ী রিপুধামান সিং মালিককে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যার’ পরিকল্পনা করেন। তিনি আরও বলেন, রিপুধামানকে হত্যার জন্য তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এর একটি ছিল কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এই হামলা মামলার আসামি ছিলেন রিপুধামান। মামলাটি থেকে খালাস পাওয়ার এক দশকের বেশি সময় পর তাঁকে হত্যা করা হয়।
কানাডা থেকে ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার পথে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আয়ারল্যান্ডের উপকূলে বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজটি। এতে উড়োজাহাজে থাকা ৩২৯ জন নিহত হন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন কানাডার নাগরিক। ভারতে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
একই দিন জাপানে এয়ার ইন্ডিয়ার আরেকটি উড়োজাহাজে বোমা হামলা হয়। তবে ওই বোমা ঠিকভাবে বিস্ফোরিত হয়নি। এ ঘটনায় দুই ব্যাগেজ বহনকারী নিহত হন।
১৯৮৪ সালে ভারতে শিখধর্মের পবিত্রতম মন্দির হিসেবে খ্যাত স্বর্ণমন্দিরে ভয়াবহ হামলার প্রতিশোধ হিসেবে কানাডার শিখরা এ বোমা হামলা চালিয়েছিল বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়। এটি কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দুই বছর বিচারকাজ চলার পর ২০০৫ সালে রিপুধামান এবং আজেইব সিং বাগরি ওই দুই বোমা হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হত্যা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে খালাস পান। ওই দুজনের বিরুদ্ধে দেওয়া সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়—এক বিচারকের এমন আদেশের পর তাঁদের খালাস দেওয়া হয়।
ধারণা করা হয়, রিপুধামানকে হত্যার জন্য ফক্স ও লোপেজকে ভাড়া করা হয়েছিল। কে বা কারা তাঁদের ভাড়া করেছে, সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মালিকের পরিবার ফক্স ও লোপেজের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, যেন তাঁরা হত্যার নির্দেশদাতাকে বিচারের আওতায় আনতে পুলিশকে সহযোগিতা করে।
গতকাল আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রিপুধামানের পুত্রবধূ বলেছেন, এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায় তাঁদের পরিবার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তিনি ট্যানার ফক্সকে বলেন, ‘কে তোমাদের ভাড়া করেছে, তা না জানার কারণেই এই ভয় ও উদ্বেগ কাজ করছে। এরপর কি আমরা (হামলার শিকার হব)?’
ফক্সের আইনজীবী রিচার্ড ফাউলারের মতে, তাঁর জন্ম থাইল্যান্ডে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অ্যাবটসফোর্ডের একটি দম্পতি তিন বছর বয়সে তাঁকে দত্তক নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যৌবনে পথ হারিয়ে বা কোনো ভুল পথে পা বাড়ানোর কারণে এই ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়েছেন কি না, তা বলা মুশকিল।
আদালতে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ফক্স। তিনি বলেছেন, ‘আমি যে সব ব্যথা ও আঘাতের কারণ হয়েছি, তার জন্য দুঃখিত।’