সোমালিয়ার অভিবাসীদের ‘আবর্জনা’ বললেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সোমালিয়ার অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে দেখতে চান না। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা যেখান থেকে এসেছেন, তাঁদের সেখানে ফিরে যাওয়া উচিত এবং তাঁদের দেশের ভালো না থাকার পেছনে একটি কারণ আছে।
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাঁদের আমাদের দেশে চাই না, আমি আপনাদের কাছে সৎভাবে বলছি।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের দেশে আবর্জনা নিতে থাকি, তবে আমরা ভুল পথে যাব।’
সোমালি অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের এই অপমানজনক মন্তব্য এমন সময়ে এল, যখন খবর পাওয়া যাচ্ছে, মিনেসোটা রাজ্যের বৃহৎ সোমালি কমিউনিটিতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ অভিযানের পরিকল্পনা করছে।
মিনেসোটা রাজ্যের কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, এই অভিযানের কারণে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির অভিবাসী ভেবে অন্য দেশ থেকে আসা অনেক মার্কিন নাগরিককেও অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হতে পারে।
মিনিয়াপোলিস এবং সেন্ট পল—‘টুইন সিটিজ’ নামে পরিচিত এই শহরে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সোমালি কমিউনিটির বসবাস।
ট্রাম্পের মন্তব্য
মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত মন্ত্রিসভার দীর্ঘ বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাঁদের আমাদের দেশে চাই না। আমি আপনাদের কাছে সৎভাবে বলছি, ঠিক আছে। কেউ হয়তো বলবেন, আহা, এটা রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয়। আমার কিছু যায় আসে না। আমি তাঁদের আমাদের দেশে চাই না।’
ট্রাম্প সোমালিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘আপনারা জানেন, সোমালিয়া একটি দেশ, তাদের কোনো কিছু নেই। তারা শুধু ঘুরে বেড়ায় এবং একে অপরকে হত্যা করে। সেখানে কোনো কাঠামো নেই।’
এরপর ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ও কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম সোমালি বংশোদ্ভূত মার্কিন ইলহান ওমরের সমালোচনা করেন। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের বেশ কয়েকবার নানা ইস্যুতে বিরোধ দেখা গিয়েছিল।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সব সময় তাঁকে (ইলহান) দেখি। তিনি সবাইকে ঘৃণা করেন। এবং আমার মনে হয়, তিনি একজন অযোগ্য ব্যক্তি।’
আইসের অভিযানের পরিকল্পনা
অভিযানের বিষয়ে জানেন এমন এক ব্যক্তি বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস নিউজকে মঙ্গলবার বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে (আইসিই–আইস নামে বেশি পরিচিত) ‘টুইন সিটিজে’ অনিবন্ধিত সোমালি অভিবাসীদের ধরতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এই সপ্তাহে অভিযান শুরু হলে শত শত মানুষকে নিশানা করা হবে। প্রথম এই অভিযানের খবর প্রকাশ করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
আইসকে তদারকি করা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক মুখপাত্র পরিকল্পিত অভিযান নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে কাউকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে, এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
মার্কিন প্রশাসনের সহকারী মন্ত্রী ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, প্রতিদিন আইস দেশজুড়ে আইন প্রয়োগ করে থাকে। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে আইসের অভিযানের কারণ কারও জাতি বা বংশগত পরিচয় নয়, বরং তাঁরা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন—এটাই মূল কারণ।
স্থানীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
মিনিয়াপোলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আইসের এ ধরনের অভিযান ‘ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়াকে লঙ্ঘন’ করবে।
স্থানীয় নেতাদের মতে, সেখানে প্রায় ৮০ হাজার সোমালি বংশোদ্ভূত মানুষ বসবাস করে এবং তাদের সিংহভাগই মার্কিন নাগরিক।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুজন ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের গুলিতে ২০ বছর বয়সী সারাহ বেকস্ট্রামের মৃত্যু এবং ২৪ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু ওলফের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীবিরোধী অভিযান আরও তীব্র করেছে। খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি মূলত আফগানিস্তানের বাসিন্দা।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছিলেন, সংকটে থাকা দেশগুলোর অভিবাসীদের জন্য চলমান সাময়িক সুরক্ষা ব্যবস্থা (টিপিএস) বাতিল করার পরিকল্পনা করছেন। মিনেসোটার সোমালি বাসিন্দারা এই কর্মসূচির আওতায় সেখানে বসবাস করেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোমও মঙ্গলবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁর সংস্থা মিনেসোটায় ভিসা জালিয়াতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে।
সোমালিয়া বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশ এবং যেসব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন তাঁদের অনেকেই ১৯৯০-এর দশকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় দেশ ছেড়েছিলেন।
মিনেসোটার স্থানীয় নেতারা ট্রাম্প প্রশাসনের এই কথিত পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন।
মিনেসোটা রাজ্যের আইনসভার সিনেটর জয়নাব মোহাম্মদ ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আইস এজেন্টরা যখন এখানে সোমালি অভিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তখন তাঁরা জানতে পারবেন, আমাদের প্রায় সবাই মার্কিন নাগরিক। এটিই আমরা বছরের পর বছর ধরে বলে আসছি।’
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের রানিং মেট ও মিনেসোটার ডেমোক্র্যাট গভর্নর টিম ওয়াৎলস বলেন, আমরা অপরাধ তদন্ত এবং বিচারকে সমর্থন জানাই। কিন্তু নির্বিচারে অভিবাসীদের নিশানা করা সমস্যার আসল সমাধান নয়।’