ট্রাম্প কি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবেন, নিয়ম কী বলছে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন। নোবেল কমিটির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি। সেই চিঠি অনলাইনেও প্রকাশ করেছেন।
চিঠিতে নেতানিয়াহু লিখেছেন, ‘ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় ও ব্যতিক্রমধর্মী অঙ্গীকার প্রদর্শন করেছেন।’
নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মাননা বলে বিবেচিত হয়। মানবজাতিকে সম্প্রীতির পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়।
১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ছয়টি বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়, যার একটি শান্তি।
ট্রাম্প গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তান সংঘাতে জড়িয়ে ছিল। চার দিনব্যাপী লড়াইয়ের পর দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তাঁর মধ্যস্থতায় দেশ দুটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।
নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মাননা বলে বিবেচিত হয়। মানবজাতিকে সম্প্রীতির পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়।
গত মাসে পাকিস্তান বলেছিল, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিরসনে সহায়তার জন্য তারা ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে।
আগেও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। সেবার তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও হয়েছিল। এবারও নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে বিতর্ক হচ্ছে।
এ নিয়ে কোনো ধরনের রাখঢাক না করে সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘নেতানিয়াহু প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পকে তোষামোদ করছেন।’
ট্রাম্পকে তোষামোদ করে নেতানিয়াহু যে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন, সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। ট্রাম্পকে এমন তোষামোদ করতে চাওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
বাস্তবে যে কেউ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন। এ পুরস্কারের ইতিহাসে দেখা যায়, এটি বিশ্বের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকেই দেওয়া হয়।জোরগেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস, নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান
ট্রাম্প যদি সত্যি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে যান, তবে তিনি হবেন এ সম্মান পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট, উড্রো উইলসন, জিমি কার্টার ও বারাক ওবামা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে একমাত্র জিমি কার্টার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন না।
এ প্রেসিডেন্টদের সবার ক্ষেত্রেই নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা হয়েছিল। ওবামা তো ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
কারা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য, সে বিষয়ে সুইডিশ নোবেল ফাউন্ডেশনের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। কোন নিয়মে বিজয়ী বেছে নেওয়া হয়, তা–ও স্পষ্ট করে বলা আছে। সেসব বিবেচনায় ট্রাম্প আসলেই কি শান্তিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্য—উঠেছে এমন প্রশ্ন।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে থাকা পরিচিতিতে শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান জোরগেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস বলেছেন,‘বাস্তবে যে কেউ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন। এ পুরস্কারের ইতিহাসে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, এটি বিশ্বের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকেই দেওয়া হয়।’
নোবেল শান্তি পুরস্কারে অনেক সময়ই একটি রাজনৈতিক বার্তা থাকে। নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পুরস্কারপ্রাপ্ত কয়েকজন ছিলেন ‘অত্যন্ত বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তি’। তবে এ পুরস্কার আন্তর্জাতিক কিংবা জাতিগত সংঘাতের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
সেই বিচারে ট্রাম্প তো শান্তিতে নোবেল পেতেই পারেন। কিন্তু আসলেই কি তা-ই?
প্রতিবছর অক্টোবর মাসে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। তবে মনোনয়নপ্রক্রিয়া এর আগেই, অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে বন্ধ হয়ে যায়।
এর মানে, নেতানিয়াহু পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে যে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেটা অন্তত এ বছরের জন্য আর বিবেচনায় নেওয়া সম্ভব নয়।
একটি রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে নেতানিয়াহুর মনোনয়ন কি বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারে? এ প্রশ্নও উঠতে পারে।
জবাব হলো, হাজার হাজার মানুষ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিতে পারেন। তিনি হতে পারেন সরকারের কেউ; পার্লামেন্ট সদস্য; রাষ্ট্রপ্রধান; ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, আইন ও দর্শনের অধ্যাপক; আগে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা। তবে নিজে নিজেকে মনোনয়ন দেওয়া যায় না।
মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা ৫০ বছর গোপন রাখা হয়, যদিও যাঁরা মনোনয়ন দেন, তাঁদের নিজের সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশে কোনো বাধা নেই।
(শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়ে) নেতানিয়াহু প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পকে তোষামোদ করছেন।কার্ল বিল্ড, সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
নরওয়ের নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বেছে নেয়। নরওয়ের পার্লামেন্ট পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে দেয় এবং এ কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সদস্যরা চাইলে নিজেরাও মনোনয়ন দিয়ে তালিকায় নতুন নাম যুক্ত করতে পারেন।
গত বছর শান্তিতে নোবেলের জন্য ২৮৬ জন মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ বছর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩৮। এর মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি ও ৯৪টি সংস্থা।
কমিটি প্রথমে যাচাই-বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে। এরপর প্রত্যেক প্রার্থীকে স্থায়ী উপদেষ্টাদের একটি দল ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়।
কমিটি সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে প্রয়োজনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সাধারণত পুরস্কার ঘোষণার কয়েক দিন আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নোবেল শান্তি পুরস্কারে অনেক সময়ই একটি রাজনৈতিক বার্তা থাকে। নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পুরস্কারপ্রাপ্ত কয়েকজন ছিলেন ‘অত্যন্ত বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তি’, তবে এ পুরস্কার আন্তর্জাতিক কিংবা জাতিগত সংঘাতের ওপর জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া নিয়ে বিতর্কের জেরে কমিটির সদস্যদের পদত্যাগের উদাহরণও আছে।
প্রতিবছর ডিসেম্বরে নোবেল বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।