শহরজুড়ে গরম ছাইয়ের স্তূপ, আছে শুধু বটগাছটি

বাড়ির ধ্বংসাবশেষে জিনিসপত্র খুঁজছেন হাওয়াইয়ের এক বাসিন্দা
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের লাহাইনা শহরে ১৬ বছর ধরে থাকেন অ্যান্টনি লা পুয়েন্টে। সম্প্রতি শহরটিতে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার পর পুয়েন্টে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। গতকাল শুক্রবার নিজ এলাকায় ফিরে দেখেন, সেখানে এখন আর বলতে গেলে কিছুই নেই। লাহাইনার অন্য অনেক বাসিন্দার মতো তাঁর বাড়িটিও দাবানলে পুড়ে গেছে।

শহরজুড়ে এখনো গরম ছাইয়ের স্তূপ জমে আছে। কয়েক দিন আগেও যে বাড়িগুলোয় মানুষের বসতি ছিল, সেগুলো এখন ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। তবে এত ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকারের একটি বটগাছ। লাহাইনার এই বটগাছের বয়স ১৫০ বছর। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো গাছ। তবে গাছটি এখনো টিকে থাকলেও যে শহরটিকে এটি এত দিন আগলে রেখেছিল সেটিই এখন আর নেই।

৪৪ বছর বয়সী পুয়েন্টে এএফপিকে বলেন, ‘আমি শুধু বলব, কষ্ট পাচ্ছি। নিজের আবেগের জায়গায় আঘাত লেগেছে। আশপাশে যে জিনিসগুলো ছিল, যেসব জিনিসের সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে আছে, সেগুলো না দেখতে পাওয়াটা বেদনার।’
৮ আগস্ট মাউই দ্বীপের পশ্চিম উপকূলীয় জঙ্গলে দাবানল শুরু হয়।  দ্রুত সেটি সমুদ্রতীরবর্তী শহর লাহাইনায় ছড়িয়ে পড়ে। শহরটির বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হন।

গতকাল দাবানলের তীব্রতা কমার পর এসব বাসিন্দাদের অনেককে লাহাইনাতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। লা পুয়েন্টে তেমনই একজন।
লাহাইনাতে ১২ হাজার মানুষের বসবাস। মাউই দ্বীপের এ শহরে একসময় হাওয়াইয়ের রাজপরিবারের বাড়িও ছিল।

এএফপির একটি প্রতিনিধিদল গতকাল লাহাইনাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় আগুনে ঝলসে যাওয়া বিড়াল, পাখি আর জীবজন্তু পড়ে থাকতে দেখেছেন তাঁরা। ভেঙে পড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে তার ঝুলে থাকতে দেখা গেছে।

চেয়ার থেকে লোহার একটি অংশ নিয়ে তা দিয়ে বাড়ির ধ্বংসাবশেষের ভেতর কোনো জিনিস অক্ষত আছে কি না, তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন পুয়েন্টে। ধ্বংসাবশেষে একটি পানির মগ খুঁজে পেলেও ছবিসহ বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে তাঁর প্রয়াত বাবার রেখে যাওয়া কিছু মূল্যবান জিনিসপত্রও ছিল।

পুয়েন্টে বলেন, ‘বাবার জিনিসগুলো আমি প্যাকেটে ভরে গুছিয়ে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম যখনই ইচ্ছে হবে বের করে দেখতে পাব। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হবে না। সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।’

এদিকে বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবেশীদের জীবিত দেখে আনন্দে আত্মহারা হচ্ছেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন।

এমনই একজন চিনা চো। প্রতিবেশী আম্বের লাংডনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘আমি আপনাকে খুঁজছিলাম।’

তবে সবার বাড়িঘরই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। কেউ কেউ এলাকায় ফিরে বসতবাড়ি অক্ষত অবস্থায় পাচ্ছেন। নিজের বাড়িটি অক্ষত অবস্থায় পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন কিথ টোড। তিনি দেখেন, বাড়ির সোলার প্যানেল থেকে এখনো রান্নাঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে।

এএফপিকে টোড বলেন, ‘আমার এটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না।’
টোডের বাড়িটি অক্ষত থাকলেও প্রতিবেশীর বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

এএফপির প্রতিনিধিরা লাহাইনা শহরটি ঘুরে ঘুরে দেখেন। তাঁরা দেখতে পান, ওয়েইনে স্ট্রিটের ওপর ছাই জমে আছে। তবে সে ছাইয়ের স্তূপের মধ্যেই অক্ষত অবস্থা দাঁড়িয়ে আছে মারিয়া লানাকিলা ক্যাথলিক গির্জা।

ঐতিহাসিক হালে পাহাও কারাগারের পাথরের দেয়ালগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তবে কাঠের যে ভবনটিতে অবাধ্য নাবিকদের সাজা দেওয়া হতো, সেটি এখন আর নেই। এর মধ্য দিয়ে ১৭০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক চিহ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে।

কিছু দূর এগোলেই ফ্রন্ট স্ট্রিট। সেখানে ছিল কিছু রেস্তোরাঁ ও কাপড়ের দোকান। এগুলোতে দাঁড়িয়ে বন্দর দেখা যেত। সব কটি এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
কয়েক দিন আগে যে নৌকাগুলো বন্দরে নোঙর করে রাখা হয়েছিল, সেগুলো এখন পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।