উড়োজাহাজে-ট্রেনে চড়ে, গোপনে ২৪ ঘণ্টায় কিয়েভে পৌঁছান বাইডেন

ঝটিকা কিয়েভ সফরে এসে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলিঙ্গন করছেন জো বাইডেন
ছবি : এএফপি

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে গতকাল সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর এ সফর ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে বাইডেন কিয়েভে যেতে পারেন, এমন গুঞ্জন ছিল আগে থেকেই। তবে তিনি কিয়েভে পৌঁছানোর আগে ঘুণাক্ষরেও কেউ এ সফর সম্পর্কে জানতে পারেনি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, সফরের কয়েক ঘণ্টা আগেই নাকি বিষয়টি রাশিয়াকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

তবে মার্কিন প্রশাসন কীভাবে বাইডেনের এ গুরুত্বপূর্ণ সফরের তথ্য গোপন রাখল, কীভাবে বাইডেন ওয়াশিংটন থেকে কিয়েভ অবধি যাত্রা করলেন, এসব নিয়ে জনমনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

বাইডেন যাত্রা শুরু করেন ওয়াশিংটন থেকে। স্থানীয় সময় রোববার ভোররাত চারটার দিকে ওয়াশিংটনের পার্শ্ববর্তী অ্যান্ড্রুজ বিমানঘাঁটি থেকে মার্কিন বিমানবাহিনীর বোয়িং ৭৫৭ উড়োজাহাজে চেপে বসেন ৮০ বছরের বাইডেন। এ উড়োজাহাজ সি-৩২ নামে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানের চেয়ে বেশ ছোট। উড়োজাহাজটির সব কটি জানালায় পর্দা দেওয়া ছিল।

আরও পড়ুন
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

মিনিট ১৫ পরে অল্প কয়েক নিরাপত্তা কর্মী, ছোট একটি চিকিৎসা দল, কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে কিয়েভের উদ্দেশে যাত্রা করেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হন দুজন সাংবাদিকও। তাঁরা বাইডেনের এ সফরের খবর ‘সঠিক সময়ের আগে’ প্রকাশ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

বাইডেনের সফরসঙ্গী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদক সাবরিনা সিদ্দিকি জানান, রাত ২টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই তিনি ও অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) আলোকচিত্রী ইভান ভুচি বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এরপর তাঁদের মুঠোফোন নিয়ে নেওয়া হয়। পরে তাঁরা সেগুলো ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পর কিয়েভে পৌঁছে ফেরত পান।

ওয়াশিংটন থেকে যাত্রা শুরু করে বাইডেনের প্রাথমিক গন্তব্য ছিল পোল্যান্ড। তবে বাইডেনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি জ্বালানি নেওয়ার জন্য জার্মানির রামস্টেইনে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে থামে। সেখানেও উড়োজাহাজের জানালা খোলা হয়নি। আরোহীদের কেউ নামেননি। পরে সেখান থেকে উড়াল দিয়ে উড়োজাহাজটি পোল্যান্ডের রেজেসজো-জাসিওঙ্কা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিমানবন্দরটি ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র ও মানবিক সহায়তার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন

এ বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে বাইডেন যান ইউক্রেন সীমান্তে। তবে সাবরিনা সিদ্দিকি জানান, গাড়িবহরের সামনে ও পেছনে সাইরেন বাজানো হয়নি। দেখে কেউ বুঝতে পারবে না, এ বহরে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আছেন। পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের একটি রেলস্টেশনে গিয়ে বাইডেন কিয়েভ অভিমুখী ট্রেনে উঠেন।

মজার বিষয় হলো, ওয়াশিংটন থেকে জার্মানি হয়ে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের সীমান্ত এলাকায় ট্রেনে চেপে বসা পর্যন্ত একই উড়োজাহাজে ভ্রমণ করলেও বাইডেনের দেখা পাননি সাবরিনা ও ইভান। সাবরিনা আরও বলেন, নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল পুরো স্টেশন–ট্রেন।

পোল্যান্ডের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ট্রেনটি সোমবার সকাল ৮টার পর কিয়েভে পৌঁছায়। যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো কিয়েভে পৌঁছান বাইডেন। সবশেষ তিনি কিয়েভ সফর করেছিলেন বারাক ওবামার আমলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়।

আরও পড়ুন

কিয়েভে পৌঁছে বাইডেন বলেন, ‘আবারও এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে।’
সফরকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন বাইডেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুদ্ধ যত দিন ধরেই চলুক না কেন ইউক্রেনের পাশে থাকবে ওয়াশিংটন।

এদিকে বাইডেনের কিয়েভ সফরকে কেন্দ্র করে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, ‘আমরা কয়েক ঘণ্টা আগে সফরের বিষয়টি রাশিয়াকে জানিয়েছিলাম, যেন কোনো সংঘাতের মধ্যে না পড়তে হয়। এ ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রকৃতি সংবেদনশীল হওয়াও একটা কারণ।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি অ্যাডভাইজার জন ফিনার জানান, কয়েক মাস ধরেই বাইডেনের ইউক্রেন সফরের বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সফরটি করা হবে কি না, এ বিষয়ে গত শুক্রবারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন