শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কানাডা
কানাডার বেশির ভাগ পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কানাডা। সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের আওতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রোববার কানাডা সরকারের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা এসব কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপকে অবৈধ ও অন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
কানাডার পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ঘোষণার জবাবে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এমন কথা জানালেন ওই কর্মকর্তা। নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা অটোয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ট্রাম্প তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো জ্বালানি পণ্য ছাড়া সব ধরনের কানাডীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার জ্বালানি আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। ২৫ শতাংশ শুল্ক মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। আর জ্বালানি খাতের শুল্ক ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
জবাবে কানাডা ১ হাজার ২৫৬টি মার্কিন পণ্য, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা মোট পণ্যের ১৭ শতাংশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। মঙ্গলবার থেকে এ ঘোষণা কার্যকর হবে। পণ্যগুলোর মধ্যে আছে কমলার জুস, পিনাট বাটার, ওয়াইন, বিয়ার, মোটরসাইকেল, প্রসাধনী এবং আরও অনেক কিছু। অর্থাৎ আমদানি থেকে তিন হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত শুল্ক আয় হবে।
কানাডীয় সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা আরেকটি তালিকা প্রকাশ করবে। এতে যাত্রীবাহী যান, ট্রাক, বৈদ্যুতিক যান পণ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর মধ্যে আছে বৈদ্যুতিক যানবাহন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, সুনির্দিষ্ট ফল ও শাকসবজি এবং মহাকাশ–সংক্রান্ত পণ্য।
কানাডীয় ওই কর্মকর্তা বলেন, তাঁর দেশের সরকার ট্রাম্পের পদক্ষেপকে অবৈধ বলে মনে করে। এটা তাদের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধীন দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে।
অন্য কোনো আইনি পথ পেলে সেগুলোও বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এবং কানাডার নেওয়া পাল্টা ব্যবস্থা দেশটির (কানাডা) অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। তবে কী প্রভাব পড়বে, তা তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলতে রাজি হননি।
রোববার কানাডা সরকার বলেছে, প্রতিশোধমূলক শুল্ক থেকে কানাডীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্তি দিতে একটি কর্মসূচি চালাবে। এ প্রক্রিয়ার আওতায় নির্দিষ্ট শত পূরণ সাপেক্ষে কানাডার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক থেকে মুক্তি পেতে বা রিফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে।
মেক্সিকো, কানাডা ও চীন থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের এ ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের দাবি, দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল মাদকের প্রবাহ ঠেকাতে তারা যেন ব্যবস্থা নেয়। কানাডা ও মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ঢল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপের কারণে এমন এক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
মেক্সিকো ও কানাডা হলো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দুই বাণিজ্য সহযোগী।