দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ট্রাম্পের প্রতি রিপাবলিকান দাতাদের জোরালো সমর্থনের প্রতিশ্রুতি

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি জোরালো সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী দাতারা। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে তাঁকে লাখ লাখ ডলারের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়। মামলায় গতকাল নিউইয়র্কের একটি আদালত ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন নথিপত্র জাল করার অপরাধে সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।

রক্ষণশীল ভাবধারার অনেক দাতা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখে থাকেন। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করছেন, নির্বাচন সামনে রেখে ডেমোক্র্যাট শিবির তাঁকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। আর তাঁর এ কথার সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন ওই দাতারা। তবে বাদীপক্ষের কৌঁসুলিরা তাঁর এ দাবিকে অসত্য বলে নাকচ করে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

গতকাল রায় ঘোষণার পর যেসব বড় দাতা ট্রাম্পকে জোর সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ধনকুবের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও হটলিয়ার রবার্ট বিগলো। তাঁদের প্রতিশ্রুত আর্থিক অনুদান গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের পক্ষে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার, দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা ও ফোন ব্যাংকিং সেবা গতিশীল করবে।

গতকালের রায় ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের কিছু দাতাকেও তাঁর পক্ষে অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসতে প্ররোচিত করেছে।

রায় ঘোষণার পর যেসব বড় দাতা ট্রাম্পকে জোর সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ধনকুবের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও হটলিয়ার রবার্ট বিগলো। গতকালের রায় ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের কিছু দাতাকেও তাঁর পক্ষে অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসতে প্ররোচিত করেছে।

রবার্ট বিগলো সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থকদের একজন। ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া একটি গোষ্ঠীকে বিগলো এরই মধ্যে ৯০ লাখ ডলারের অনুদান দিয়েছেন। বিগলো বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার চলমান প্রক্রিয়া ‘মর্যাদাহানিকর’।

রয়টার্সকে বিগলো বলেছেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট (সাবেক) ট্রাম্পের কাছে তাঁকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরও ৫০ লাখ ডলার পাঠাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

জ্যামাইকায় ট্রাম্পের সাবেক প্রতিনিধি ডন টাপিয়া বলেছেন, তিনি, একটি ছোট পারিবারিক নেটওয়ার্ক ও বন্ধুরা নির্বাচনে ট্রাম্পকে সহায়তা করতে আড়াই লাখ ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। গতকাল রায় ঘোষণার পর টাপিয়া রয়টার্সকে বলেন, তাঁদের লক্ষ্য, ট্রাম্প–সমর্থক গ্রুপ এমএজিএ ইনকরপোরেটকে ১০ লাখ ডলারের বেশি দেওয়া। তাঁর জন্য তাঁরা সবকিছু করবেন।

রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেট টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগকারী শন ম্যাগুয়ার ট্রাম্পকে সহায়তা করতে তিন লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ট্রাম্পকে এর আগে অনুদান দেননি বলে জানান তিনি।

আদালতের ওই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেন। আগামী ১১ জুলাই এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। তাতে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, তাঁকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।

গতকাল রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, এটা তাঁর জন্য মর্যাদাহানিকর। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।

আরও পড়ুন

৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়। তাঁর হাতে এ অর্থ তুলে দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তবে ব্যবসায়িক নথিপত্রে এ লেনদেনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন ট্রাম্প।

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ শুনানির পর এ রায় ঘোষণা করেন ১২ জন বিচারকের একটি বেঞ্চ। এর আগে তাঁরা রায় নিয়ে ১১ ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা করেছেন। এমন সময় এ রায় ঘোষণা করা হলো, যখন কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার প্রেসিডেন্ট পদে আসতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে রায়ের কারণে তাঁর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো বাধা আসবে না।

আরও পড়ুন