বাফেট এখনো ১৯৫৮ সালে ৩১ হাজার ডলারে কেনা বাড়িতে থাকেন
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। চলতি বছরের শেষ দিকে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহীর (সিইও) পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন। বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হলেও সাদামাটা জীবন যাপন করতে ভালোবাসেন বিশ্বসেরা এই বিনিয়োগকারী। দানশীলতার জন্য সুপরিচিত ৯৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি প্রচলিত কোনো ধর্ম অনুসরণ করেন না। তবে দীর্ঘ জীবনে তিনি আধ্যাত্মিকতা নিয়ে ব্যাপক চিন্তাভাবনা করেছেন। সিএনএনে সাম্প্রতিক প্রকাশিত এ–সংক্রান্ত মতামত কিছুটা সংক্ষেপে অনুবাদ করা হলো।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনীদের একজন ওয়ারেন বাফেট ২০০৮ সালে নিজের কোম্পানির অংশীজনদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। এ সময় এক সাহসী তরুণ একটি প্রশ্ন করে বসেন। ওই তরুণ জানতে চেয়েছিলেন, ‘আপনি কি যিশুখ্রিষ্ট সম্পর্কে জানেন এবং তাঁকে বিশ্বাস করেন? তাঁর সঙ্গে কি আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে?’
জবাবে ধনকুবের বাফেট বলেন, ‘না। আমি একজন অজ্ঞেয়বাদী। তবে আমি ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছি। আপনি যদি এই প্রশ্ন আমার মা-বাবাকে করতেন, তাহলে ভিন্ন উত্তর পেতেন। আমি প্রকৃত অর্থেই একজন অজ্ঞেয়বাদী। আমি না ঈশ্বরবাদীর কাছাকাছি, না নাস্তিকের। সত্যিই আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। কোনো একদিন হয়তো জানব, হয়তো জানবই না। কিন্তু অজ্ঞেয়বাদী হওয়ার স্বভাবটাই এমন।’
বাফেট হয়তো ধার্মিক নন। কিন্তু সারা জীবনে তিনি আধ্যাত্মিক ‘স্টক’-এ বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন। ৯৫ বছর বয়সী বাফেট চলতি বছরের শেষের দিকে বহুমুখী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহীর (সিইও) পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিহাসের অন্যতম সফল এই বিনিয়োগকারীর সম্পদের অর্থমূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলার। আর্থিক খাতে তিনি যে জাদু দেখিয়েছেন, অনেকে সেটার প্রশংসা করে থাকেন।
অনুসারীরা বাফেটের সঙ্গে দেখা করার জন্য সাক্ষাৎসূচি (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) নেন না; বরং চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দূরদূরান্ত থেকে তীর্থযাত্রার মতো করে তাঁর ওমাহার সাধারণ বাড়িতে আসেন এবং বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অংশীজনদের সভায় অংশ নেন।
বাফেট এক জীবনে কেবল বিপুল সম্পদ গড়েছেন, তা কিন্তু নয়। তিনি এমন এক আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞার উত্তরাধিকারও রেখে যাচ্ছেন, যা মানুষকে কেবল অর্থ নয়, জীবনের নানা ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। তিনি জেন বৌদ্ধধর্ম, কনফুসিয়াস, স্টোইক (গ্রিক দার্শনিক জেনোর মতাবলম্বী) দার্শনিকদের ভাবনা, এমনকি নিউ টেস্টামেন্ট থেকেও অন্তর্দৃষ্টি নিয়েছেন। তাঁর এসব অন্তর্দৃষ্টি মানুষকে শুধু পুঁজিবাজারের সূচকের ওঠানামাই নয়; বরং জীবনের কঠিন সময় পাড়ি দেওয়ারও পথ দেখায়।
ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা গবেষক ও অনুশীলনকারীরা বলে থাকেন, বাফেট কেবল ব্যবসাজগতের একজন আইকনই নন; বরং তিনি একজন ‘জেন মাস্টার’। জেন মাস্টার বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি ‘জেন বৌদ্ধধর্মের’ সাধনায় গভীর প্রজ্ঞা, আত্মসংযম ও মননশীলতার বিশেষ স্তরে পৌঁছেছেন। আর ‘জেন’ বৌদ্ধধর্মের একটি শাখা, যা মূলত চীনের ‘চান’ ধর্ম থেকে উদ্ভূত। পরে তা জাপানে বিস্তৃতি লাভ করে।
দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, বাফেট কোনো জায়গায় উপস্থিত হলে তাঁর চারপাশে একধরনের আধ্যাত্মিক আভা বা দ্যুতি (অরা) ছড়ায়। অনুসারীদের কাছে তিনি ‘ওরাকল অব ওমাহা’ নামে পরিচিত। ওমাহা যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা রাজ্যের একটি শহর। বাফেটের বাড়ি ও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সদর দপ্তর এখানে অবস্থিত।
এ জায়গায় ওরাকল অব ওমাহা বলতে, অর্থনীতি ও বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ওমাহা শহরের বাসিন্দা বাফেটকে বোঝানো হয়েছে।
আমি না ঈশ্বরবাদীর কাছাকাছি, না নাস্তিকের। সত্যিই আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। কোনো একদিন হয়তো জানব, হয়তো জানবই না।
অনুসারীরা বাফেটের সঙ্গে দেখা করতে সাক্ষাৎসূচি (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) নেন না; বরং চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দূরদূরান্ত থেকে তীর্থযাত্রার মতো করে তাঁর ওমাহার সাধারণ বাড়িতে আসেন এবং বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অংশীজনদের সভায় অংশ নেন। একজন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক বাফেটকে ‘বিনিয়োগ দেবতা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
লেখকেরা বাফেটকে নিয়ে এমন সব ব্যবসায়িক বই লিখেছেন, যেগুলো ধীরে ধীরে উপদেশমূলক বক্তৃতায় রূপ নিয়েছে। এমন দুটি বই হলো ‘দ্য নিউ টাও অব ওয়ারেন বাফেট’ ও ‘ইনভেস্টমেন্ট মন্ত্রস অব ওয়ারেন বাফেট’।
বাফেট এক জীবনে কেবল বিপুল সম্পদ গড়েছেন, তা কিন্তু নয়। তিনি এমন এক আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞার উত্তরাধিকারও রেখে যাচ্ছেন, যা মানুষকে কেবল অর্থ নয়, জীবনের নানা ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
তবে বাফেট নিজেই তাঁর আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে জানার সবচেয়ে ভালো উৎস। তিনি একধরনের আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞার ভান্ডার গড়ে তুলেছেন, যা একান্তভাবে তাঁর। বিনিয়োগকারী ও সাধারণ মানুষ–নির্বিশেষে সবাই তাঁর উপদেশ ও প্রবাদ গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়েন।
যেমন ‘আজ কেউ একজন ছায়ায় বসে আছেন। কারণ, অনেক আগে কেউ একটি গাছ লাগিয়েছিল।’ অথবা ‘সম্পদ আপনাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় পরিবেশে থাকতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু কত মানুষ আপনাকে ভালোবাসে বা আপনি কতটা সুস্থ, সেটা বদলাতে পারে না।’
বাফেটের এসব সংবেদনশীল উপমা-সংবলিত প্রবাদে জেন বৌদ্ধ সাধক লিও বাবাউতা রীতিমতো মুগ্ধ। তাঁর মতে, বাফেটের মনোভাব জেনের মতোই সংযত ও গভীর।
বাবাউতা ‘দ্য পাওয়ার অব লেস: দ্য ফাইন আর্ট অব লিমিটিং ইয়োরসেলফ টু দ্য এসেনশিয়াল… ইন বিজনেস অ্যান্ড ইন লাইফ’ বইয়ের লেখক। সিএনএনকে এই জেন বৌদ্ধ সাধক বলেন, ‘তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের একজন। তা সত্ত্বেও আমি সত্যিই মনে করি না, তিনি সম্পদ উপার্জনকেই নিজের জীবনের পরম ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন।’
তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের একজন। তা সত্ত্বেও আমি সত্যিই মনে করি না, তিনি সম্পদ উপার্জনকেই নিজের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন।
বাবাউতা বলেন, ‘তিনি (বাফেট) এমন মানুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন, যাঁরা অর্থ উপার্জনের দিকেই নিবিষ্টচিত্তে মনোনিবেশ করে থাকেন। এতে মানুষ কীভাবে বিভ্রান্ত হন, তিনি তা দেখেন। এটি জেনদের একটি কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য। বৈশিষ্ট্যটি হলো এই—আমরা সবাই এমন এক মায়াময় জীবন যাপন করছি, যা আমাদের সুখী করবে বলে মনে হয়।’
বাফেটের কাছে একজন ভালো বিনিয়োগকারী হওয়া এবং একজন ভালো মানুষ হওয়া বিচ্ছিন্ন কিছু নয়; বরং বিষয় দুটি পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
একটি গল্প প্রচলিত আছে, একবার বাফেট ম্যাকডোনাল্ডসে বিল গেটসকে মধ্যাহ্নভোজের দাওয়া দিয়েছিলেন। খাবারের মূল্য পরিশোধ করেছিলেন কুপনের মাধ্যমে, অর্থাৎ তিনি মূল্য ছাড়ের সুবিধা নিয়েছিলেন।
‘ঈর্ষা ও লোভ হাত ধরাধরি করে চলে’
বাইবেলের ১০টির আদেশের একটি হলো ‘লোভ কোরো না।’ খ্রিষ্টানদের এই ধর্মীয় গ্রন্থে ঈর্ষাকে সাতটি মহাপাপের একটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক পুঁজিবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রমের একটি বড় অংশ ঈর্ষার ওপর ভিত্তি করে চলে। আমরা প্রায় সময় অন্যের কাছে থাকা কিছু প্রত্যাশা করি। অধিকাংশ সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিছু চাই।
বাফেট বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী হলেও অনেক ধনকুবের যেসব জিনিসপত্রের পেছনে ছোটেন, তিনি তেমন কিছুর জন্য হাহুতাশ করেন না। তিনি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যে ১৯৫৮ সালে ৩১ হাজার ৫০০ ডলারে কেনা পাঁচ বেডরুম ও দুই বাথরুমের বাড়িতে থাকেন। তিনি এখনো ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে যান এবং একটা সময় ২০ বছরের পুরোনো গাড়ি চালাতেন, যার লাইসেন্স প্লেটে লেখা ছিল ‘থ্রিফটি’। থ্রিফটি অর্থ মিতব্যয়ী।
একটি গল্প প্রচলিত আছে, একবার বাফেট ম্যাকডোনাল্ডসে বিল গেটসকে মধ্যাহ্নভোজের দাওয়াত দিয়েছিলেন। খাবারের মূল্য পরিশোধ করেছিলেন কুপনের মাধ্যমে, অর্থাৎ তিনি মূল্য ছাড়ের সুবিধা নিয়েছিলেন।
বাফেট ঈর্ষাকে সাতটি মহাপাপের মধ্যে একমাত্র এমন পাপ বলে মনে করেন, যার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়া বেশ বোকামি। কারও অমঙ্গল কামনা বা অন্যের মতো সফল হতে চাইতে গেলে আপনার দিনকাল কেবল খারাপ যাবে। তাঁদের কোনো ক্ষতি বা অসুবিধা হবে না। যদি (সাতটির মধ্য থেকে) কোনো পাপ বেছে নিতে হয়, তাহলে যৌনকাম বা অতিরিক্ত খাওয়ার মতো কিছু বেছে নিন। এতে অন্তত সপ্তাহান্তে মনে রাখার মতো কিছু থাকবে।’
বাফেটের এ মনোভাব আরেকটি জেন নীতির প্রতিফলন বলে মনে করেন জেন বৌদ্ধ সাধক বাবাউতা। জেন নীতিটি হলো, যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারার ক্ষমতা। বাবাউতা বলেন, অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা একধরনের বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। এতে ভোগান্তি ও কষ্ট আরও বৃদ্ধি পায়।
অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা ব্যক্তির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খারাপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি বেশি। বাফেটের জেন সংবেদনশীলতা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধে বাবাউতা লেখেন, তিনি একজন সংযমী বিনিয়োগকারী। তিনি দ্য নেক্সট হট থিং বা সাময়িকভাবে জনপ্রিয় বিষয়ে বিনিয়োগে এতটা অধীর হয়ে পড়েন না। তিনি নিজের সীমাবদ্ধতা জানেন।
বাবাউতা বলেন, বাফেট প্রযুক্তি কোম্পানিতে খুব বিনিয়োগ করেছেন। কারণ, তিনি সেগুলো ভালোভাবে বোঝেন না। সন্তুষ্টির কারণে তাঁর মধ্যে একধরনের শৃঙ্খলা চলে এসেছে।
তিনি (বাফেট) সত্যিই দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের বিষয়ে আন্তরিক। তিনি সমাজকে কিছু দিতে চান। এটা খুব আধ্যাত্মিক ব্যাপার। ধনকুবেরদের মধ্যে এমন মানুষের সংখ্যা কম।
‘নেওয়ার চেয়ে দেওয়াতেই বেশি পুণ্য’
২০০৬ সালের জুনে ওয়ারেন বাফেট এক ব্যতিক্রমী ঘোষণা দেন। একাধিক চিঠিতে তিনি জানান, নিজের বিপুল সম্পদের বড় অংশ তিনি বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করবেন। গত মাসে অংশীজনদের উদ্দেশে লেখা নিজের শেষ চিঠিতেও তাঁর এ দাতব্য মানসিকতার প্রতিফলন দেখা গেছে।
সেখানে বাফেট বলেছেন, তাঁর হাতে খুব অল্প সময় আছে। তাই তিনি তাঁর পরিবারের চারটি ফাউন্ডেশনে প্রায় ১০০ কোটি ডলার অনুদানের কার্যক্রম আরও দ্রুততর করবেন।
নিউ টেস্টামেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হলো, ‘নেওয়ার চেয়ে দেওয়াতেই বেশি পুণ্য।’ যুক্তরাষ্ট্রে ধনী মানুষেরা এটা তেমন একটা মেনে না চললেও বাফেট তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম।
বাফেটের দানের অভ্যাস যুক্তরাষ্ট্রের কর পরামর্শ এবং কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড আর ব্লকের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে রবার্ট এল. ব্লখকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ‘দ্য ওয়ারেন বাফেট বুক অব ইনভেস্টিং উইজডম’ নামের একটি বই লিখেছেন।
ব্লখের বইয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের ৩৫০টি উক্তি আছে। তিনি সিএনএনকে বলেন, কৃতজ্ঞতা ও দানশীলতা বাফেটের জীবনের ‘মূল আধ্যাত্মিক ভিত্তি’।
ব্লখ বলেন, তিনি (বাফেট) সত্যিই দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের বিষয়ে আন্তরিক। তিনি সমাজকে কিছু দিতে চান। এটা খুব আধ্যাত্মিক ব্যাপার। ধনকুবেরদের মধ্যে এমন মানুষের সংখ্যা কম।
‘স্টোইক’ বাফেট
ব্লখ প্রবীণ বাফেটের মধ্যে আদর্শ খ্রিষ্টানের গুণ খুঁজে পেয়েছেন। অনেকে দানশীল এই ধনকুবেরের মধ্যে প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক জেনোর মতাবলম্বী স্টোইকদের সংবেদনশীলতা লক্ষ করেছেন।
এপিকটেটাস ও মার্কাস অরেলিয়াসের মতো স্টোইক দার্শনিকেরা বিশ্বাস করতেন, নৈতিকভাবে বাঁচা ছাড়া সুখী জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। ধন-সম্পদের প্রতি আসক্তি আত্মসংযমে বাধা দেয়।
স্টোইক দর্শন নিয়ে জনপ্রিয় বইয়ের লেখক রায়ান হলিডে লেখেন, রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস সাম্রাজ্যের ঋণ শোধ করতে এবং নাগরিকদের বোঝা কমাতে নিজের প্রাসাদের অনেক আসবাব বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
আজ কেউ একজন ছায়ায় বসে আছেন। কারণ, অনেক আগে কেউ একটি গাছ লাগিয়েছিল।
বাফেটের স্টোইক সংবেদনশীলতা নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন রায়ান হলিডে। এতে তিনি লেখেন, বস্তুগত জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারার ক্ষমতা বাফেটকে নৈতিক বিষয় নিয়ে স্পষ্ট করে ভাবার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ফলে পুঁজিবাজার ধসে পড়লেও তিনি সুখী থাকতে পারবেন।
হলিডে লিখেছেন, ‘আমরা যতই বেশি কিছু চাই, তা অর্জন বা রক্ষার জন্য আমাদের তত বেশি কাজ করতে হয়। আমরা যতই এসবে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, আমাদের জীবন তত কম উপভোগ্য এবং কম স্বাধীন হয়ে পড়ে।’
বাফেট এখনো নেব্রাস্কায় ১৯৫৮ সালে ৩১ হাজার ৫০০ ডলারে কেনা পাঁচ বেডরুম ও দুই বাথরুমের বাড়িতে থাকেন।
ভালোবাসা নিয়ে বাফেট
বিনিয়োগজগতের প্রায় উল্টো বিষয় ‘ভালোবাসা’ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বাফেট। একবার তিনি বলেছিলেন, ভালোবাসা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো নিজেকে ভালোবাসার উপযোগী করে তোলা।
কারণ, কোটি কোটি ডলার খরচ করেও ভালোবাসা কিনতে পাওয়া যায় না। বাফেটের মতে, যত ভালোবাসা দিতে থাকবেন, প্রতিদান হিসেবে তত ভালোবাস পাবেন।
বাফেট কোকাকোলা, ওয়েলস ফার্গো বা ক্রাফট হাইনজের মতো বড় বড় কোম্পানিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু তাঁর বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার সম্ভবত ভালোবাসা। যে কয়েকজন ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সর্বজনীনভাবে সম্মান করেন, বাফেট তাঁদের অন্যতম।
শুধু সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য নয়; বরং মানুষের সঙ্গে যে আচরণ করতেন, সেটিই বাফেটকে সব মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলেছে। তাই বলতে হয়, ভালোবাসাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেখানে বাফেট বিনিয়োগ করে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন।