আদালতকে ভয়ভীতি দেখানো বন্ধ করতে বললেন আইসিসি

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি করিম খান বলেছেন, গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে তাঁর দলছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলির দপ্তর তার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। দপ্তর বলেছে, এ ধরনের হুমকি বিশ্বের এই স্থায়ী যুদ্ধাপরাধ আদালতের ‘বিচার প্রশাসনের’ বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল হতে পারে।  

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি করিম খান গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁর দপ্তরের কর্মীদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা, তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো বা তাঁদের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটানোর সব ধরনের চেষ্টা অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

বিবৃতিতে ইসরায়েলের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে এ বিবৃতি এমন এক সময় দেওয়া হলো, যার আগে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ফলাফলের বিষয়ে আইসিসিকে সতর্ক করে দেন মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

করিম খানের দপ্তর বলেছে, রোম সনদের অধীন এ আদালতের স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বৈধ ক্ষমতা রয়েছে। এই কর্তৃত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করতে চায় এ দপ্তর।  

আদালতের বিবৃতি এমন এক সময় দেওয়া হলো, যার আগে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ফলাফলের বিষয়ে আইসিসিকে সতর্ক করে দেন মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, তবে যখন কারও পক্ষ থেকে আদালত বা তাঁর কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের হুমকি দেওয়া হয়, তখন এ স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়। আদালতের উচিত তাঁর বৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করা, নিজ এখতিয়ারের অধীন দায়ের করা মামলা বা তদন্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

আদালত আরও বলেন, রোম সনদে আইসিসির কাঠামো ও এখতিয়ারের ক্ষেত্র উল্লেখ করা আছে। সেই সঙ্গে আদালত ও তাঁর কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

গত সপ্তাহে গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের তাণ্ডব চলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন আইসিসি।

যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে ব্যক্তিবিশেষকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেন আইসিসি। গত ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু করা ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় অভিযানে এরই মধ্যে সেখানে ৩৫ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নির্বিচার বোমা হামলায় উপত্যকাটির বড় অংশ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

এ অবস্থায় ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইসিসির সম্ভাব্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় দেশটি ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সামনে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ। এ আদালতেই চলছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি
ফাইল ছবি: রয়টার্স
আরও পড়ুন

গত মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় এ আদালতের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল আশা করে, মুক্ত বিশ্বের নেতারা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের বিরুদ্ধে আইসিসির ‘জঘন্য হামলার’ বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়াবেন।

এদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির যেকোনো পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করা ও তা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের কয়েকজন আইনপ্রণেতা।

এর আগে আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ২০২১ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেটি তুলে নেন।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র রোম সনদ অনুমোদন করেনি। তবে জাতিসংঘের ‘স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার গ্রহণ করেছে।
দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি নৃশংসতার তদন্ত করছেন আদালত। করিম খান বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তদন্ত করছে তাঁর দল।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন