গাজা প্রশ্নে ‘আনকমিটেড’ ভোট যেভাবে চিন্তায় ফেলবে বাইডেনকে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনফাইল ছবি: এএফপি

আরব-আমেরিকানদের রাজধানী হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির দ্বিতীয় প্রাইমারির (প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট) মুখোমুখি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই ভোটাভুটি ‘যুগান্তকারী’ বলে প্রশংসিত হচ্ছে।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তাঁর এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে শুরু হওয়া সমন্বিত এক উদ্যোগের অংশ হিসেবে মিশিগানের ডিয়ারবর্ন শহরে অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার ‘আনকমিটেড’ (প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়) ভোট পছন্দ করেছেন। গত মঙ্গলবার এ প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারিতে শুধু যে ডিয়ারবর্নের ডেমোক্র্যাট ভোটারদের অবস্থানের চিত্রই এমনটা, তা কিন্তু নয়। গতকাল বুধবার সকালে প্রকাশিত ভোটের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, রাজ্যজুড়ে ১ লাখ ১ হাজারের বেশি ভোটার গাজা প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অবস্থানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ওই আন্দোলনে ব্যালট বক্সের মাধ্যমে অংশ নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আনকমিটেড’ ভোটারের এ সংখ্যা গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ওয়াশিংটনের সমর্থনকে ব্যাপকভাবে নিন্দা জানানোরই প্রতিফলন। যদিও নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্র্যাট দলের জন্য এটিকে এখনই সতর্কসংকেত হিসেবে তাঁরা দেখছেন না।

ফিলিস্তিন–আমেরিকান মানবাধিকার আইনজীবী হুওয়েইদা আররাফ বলেন, ‘আনকমিটেড’ ভোটারের এই সংখ্যা বিপুল। ডেট্রয়েট শহরভিত্তিক এ আইনজীবী অবশ্য বলছেন, মঙ্গলবারের ১ লাখ ১ হাজার ‘আনকমিটেড’ ভোট বাইডেনের নীতি নিয়ে মার্কিনদের ক্রমবর্ধমান হতাশাকে পুরোপুরি চিত্রিত করে না।

বাইডেনের প্রতি মঙ্গলবারের অনাস্থা, তাঁর প্রতি ক্ষোভ এবং চূড়ান্ত রকমের অসন্তোষ প্রকাশে ভোটারদের ব্যালটের ব্যবহার, বাইডেনের দল ও সব ডেমোক্র্যাটের জন্যই খুব, খুব দুশ্চিন্তার।
হুওয়েইদা আররাফ, ফিলিস্তিন-আমেরিকান মানবাধিকার আইনজীবী

হুওয়েইদা বলেন, কিছু ভোটার অন্য প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন বাইডেনের প্রতি তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে। কেননা, ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ জানানো ম্যারিয়ান উইলিয়ামসন ও ডিন ফিলিপস উভয়ই ইতিপূর্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিপস ২০ হাজার ভোট পেয়েছেন। আর মঙ্গলবারের প্রাইমারির আগে মিশিগানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানো উইলিয়ামসন পেয়েছেন ২২ হাজারের বেশি ভোট। এ অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি শেষে উইলিয়ামসন বলেছেন, তিনি আবার তাঁর প্রচার শুরু করবেন।

আরও পড়ুন
দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটের (প্রাইমারি) রাতে একটি মঞ্চে ‘ভোট আনকমিটেড’ চিহ্নের সামনে অধিকারকর্মী নাতালিয়া লতিফ। ডিয়ারবর্ন, মিশিগান, ২৭ ফেব্রুয়ারি
ছবি: রয়টার্স

হুওয়েইদা আরও বলেন, অনেক ভোটারই গাজায় বাইডেনের অবস্থানবিরোধী আন্দোলনে এখনো শরিক হননি। এর কারণ হতে পারে, ‘আনকমিটেড’ প্রচারণা কাজ করছে সীমিত সম্পদ নিয়ে। এটি শুরুও হয়েছে প্রাইমারি শুরুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে।

‘বাইডেনের প্রতি মঙ্গলবারের অনাস্থা, তাঁর প্রতি ক্ষোভ এবং চূড়ান্ত রকমের অসন্তোষ প্রকাশে ভোটারদের ব্যালটের ব্যবহার বাইডেনের দল ও সব ডেমোক্র্যাটের জন্য খুবই, খুবই দুশ্চিন্তার’, হুওয়েইদা আররাফ বলেন আল–জাজিরাকে।

‘আনকমিটেড’ ভোট কাড়ার এ প্রচেষ্টার পেছনে সক্রিয় গোষ্ঠীগুলোর একটি ‘লিসেন টু মিশিগান’। মিশিগানের ভোটের ওই ফলাফল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে উদ্‌যাপন করেছে তারা। পোস্টে তারা লিখেছে, ‘আজ রাতে আমাদের আন্দোলনের জয় হয়েছে এবং এটি আমাদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেছে।’

আগস্টে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের আগপর্যন্ত অন্তত নিজেদের চাপ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে ‘লিসেন টু মিশিগান’। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাশ শেষে আগস্টে দলটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তাদের মনোনীত প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে। তবে ‘লিসেন টু মিশিগান’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের অবস্থান কী হবে—সে সময় বাইডেনকে বর্জনে ভোটারদের প্রতি তারা আহ্বান জানাবে কি না, সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি।

‘ঐতিহাসিক ভোট’
নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের জন্য একেকটি অঙ্গরাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এসব ইলেকটোরাল কলেজ ভোটই নির্ধারণ করবে, কে হোয়াইট হাউসে বসবেন।

সাম্প্রতিক কয়েকটি সাধারণ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ‘দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের’ ফলাফলের ওপর বিজয়ী প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হতে দেখা গেছে।

এমন অঙ্গরাজ্যগুলোর একটি ১ কোটির বেশি জনসংখ্যার মিশিগান। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

‘আনকমিটেড’ ভোট কাড়ার এ প্রচেষ্টার পেছনে সক্রিয় গোষ্ঠীগুলোর একটি ‘লিসেন টু মিশিগান’। মিশিগানের ভোটের ওই ফলাফল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে উদ্‌যাপন করেছে তারা। পোস্টে তারা লিখেছে, ‘আজ রাতে আমাদের আন্দোলনের জয় হয়েছে এবং এটি আমাদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেছে।’

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে মিশিগানে ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে পরাজিত করেন। হোয়াইট হাউসে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ অঙ্গরাজ্যের ফলাফল ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আবার, ২০২০ সালে মিশিগানে ১ লাখ ৫০ হাজার ভোটে বাইডেন ট্রাম্পকে পরাজিত করেন। গত মঙ্গলবারের প্রাইমারিতে এ অঙ্গরাজ্যে যেসব ভোটার বাইডেনকে সমর্থন করেননি, তাঁদের সংখ্যাও মোটামুটি এ রকমই। এই ফলাফল এ ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী সাধারণ নির্বাচনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনকে অতীতের চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে।

আরও পড়ুন

এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান–ডিয়ারবর্নের সহকারী অধ্যাপক স্যালি হাউয়েলের মত হলো, নির্বাচনী  ‘এ অঙ্কের অর্থ, বাইডেনের প্রচারশিবিরকে আগামী নির্বাচনে মিশিগান নিয়ে ভাবতে হবে।’

স্যালি হাউয়েল বলেন, মিশিগানের মোট ভোটারের প্রায় ২ শতাংশ আরব-আমেরিকানরা। আগামী নির্বাচনে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন ৩ শতাংশ অন্যান্য মুসলিম কমিউনিটির ভোটার।

‘আমি মনে করি, এটি ঐতিহাসিক (মিশিগানে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি)। আর আরব–আমেরিকানদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের দিকটি বিবেচনা করলে এটি সত্যিই যুগান্তকারী। আমি মনে করি না, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে তারা এখনকার মতো অতীতে কখনো মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে’, আল–জাজিরাকে বলেন হাউয়েল।

আরও পড়ুন