অসুস্থ যাত্রীকে কিডনি দান করলেন উবারচালক
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি শহরের বাসিন্দা বিল সুমিয়েল। বয়স ৭৩ বছর। বহু আগে থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। একপর্যায়ে অকেজো হয়ে যায় তাঁর কিডনি। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হতো। শেষমেশ চিকিৎসকেরা তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।
পরে এক দিনের ঘটনা। ডায়ালাইসিস শেষে হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফেরার জন্য রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার কল করেন সুমিয়েল। উবারের যে গাড়িটি তাঁকে নিতে এসেছিল, সেটির চালক ছিলেন টিম লেটস নামের এক ব্যক্তি। পথে গল্পে মেতে ওঠেন দুজন।
গল্পের একপর্যায়ে সুমিয়েল জানতে পারেন উবারচালক টিম সাবেক সেনাসদস্য। সপ্তাহান্তে বাড়তি উপার্জনের জন্য উবার চালান। আলাপের ফাঁকে টিমকে শারীরিক অবস্থার কথা খুলে বলেন সুমিয়েল। জরুরি ভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপনে চিকিৎসকের পরামর্শের কথাও বলেন তিনি।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুমিয়েল বলেন, ‘টিম খুবই বন্ধুবৎসল ছিলেন। এ কারণে আমার জীবনে কী ঘটছে, তা খুব সহজেই টিমকে খুলে বলি।’
সুমিয়েল জানান, তাঁর কথা শুনে টিম কিডনিদানের সিদ্ধান্ত নেন। সুমিয়েলকে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছানোর পর টিম তাঁকে জানান, তিনি সত্যিই কিডনি দান করতে চান। পরে যোগাযোগের জন্য নিজের নাম ও ফোন নম্বরও দিয়ে যান তিনি।
টিমের এমন প্রস্তাবে খুব খুশি হন সুমিয়েল। পাশাপাশি এই ভেবেও উদ্বিগ্ন হন যে দুজনের কিডনি যদি না মেলে! তবে কয়েক দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় দুজনের কিডনিতে মিল রয়েছে। পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দুই দফা অস্ত্রোপচারের পর সুমিয়েলের শরীরে সফলভাবে টিমের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।
গত ডিসেম্বর ছিল সুমিয়েল ও টিমের সফল অস্ত্রোপচারের বছরপূর্তি। এ উপলক্ষে ফেসবুকে দুজনের একটি আবেগঘন ছবি পোস্ট করেন সুমিয়েল। ছবিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের সময় হাসপাতালের শয্যায় তোলা হয়েছিল। দুজনের হাস্যোজ্জ্বল ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টিম লেটস সেই ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (সুমিয়েল) আমার গাড়িতে ওঠেন। তাঁর মধ্যে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিল। কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গে থাকার পর স্পষ্ট হয়, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও দয়ালু ব্যক্তি।’
টিম বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করেন। এরপরও তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সুমিয়েল। টিম সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গাড়ি চালানোর সময় আয়নায় তাঁকে দেখে হতাশাগ্রস্ত মনে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল তিনি জীবনের শেষ প্রান্ত চলে এসেছেন।’
হৃদয়স্পর্শী এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই তাঁদের প্রশংসায় মুখর হয়েছেন। যেমন ইনস্টাগ্রামে একজন লিখেছেন, ‘কী সুন্দর! বর্তমান পৃথিবীতে এমন ঘটনা আরও বেশি দরকার।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘এটি আমার শোনা সবচেয়ে নিঃস্বার্থ উদারতা ও আশ্চর্যজনক কাজ। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সৃষ্টিকর্তা তাঁদের মঙ্গল করুন।’