ইউক্রেন যুদ্ধ থামবে কি না কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যাবে: ট্রাম্প

বৈঠক শেষে যৌধ সংবাদ সম্মেলন করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মার–এ–লাগো অবকাশ যাপনকেন্দ্রেছবি: রয়টার্স

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামবে কি না, তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই যুদ্ধ থামাতে একটি শান্তি চুক্তির জন্য ওয়াশিংটনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।

গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মার-এ-লাগো অবকাশযাপনকেন্দ্রে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ট্রাম্প। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বৈঠক করেন দুই নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘সবকিছু ভালোভাবে এগোলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে (চুক্তি) হয়ে যাবে। আর খারাপভাবে এগোলে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।’ যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি সমঝোতার খুব কাছাকাছি ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

যুদ্ধ বন্ধে নতুন যে শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এটার সত্যিই প্রয়োজন আছে কি না, তা আমি নিশ্চিত নই। তবে এটি যদি প্রতি মাসে ২৫ হাজার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে বা যে কাজেই আসুক না কেন নিশ্চিতভাবে এটি করতে চাইব।’

এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, যুদ্ধ পরবর্তী ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে একটি পৌঁছানো গেছে। তবে এ বিষয়ে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এমন কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইউরোপের দেশগুলো বড় দায়িত্ব পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রায় চার বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার দাবি, যুদ্ধ থামানোর জন্য ইউক্রেনের পুরো দনবাস অঞ্চল কিয়েভকে মস্কোর কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এ অঞ্চলটি প্রায় পুরোটাই বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রিত বাকি অংশেরও দখল চায় মস্কো। যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প যে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন, সেখানেও অঞ্চলটি পুরোপুরি রাশিয়া হাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও এতে নারাজ ইউক্রেন। জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেছিলেন, শান্তি প্রস্তাবের এই দফাটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা নরম হবে বলে আশা করেন তিনি।

গতকালের সম্মেলনে ট্রাম্প ও জেলেনস্কি দুজনই বলেন, দনবাসের ভবিষ্যতের বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। এটি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে একটি সমাধানের বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দনবাস নিয়ে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে একটি সমঝোতা কঠিন বিষয় বলেও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গতকাল জেলেনস্কি ও তাঁর প্রতিনিধিদল ট্রাম্পের অবকাশযাপনকেন্দ্রে পৌঁছানোর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। এই আলাপকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অপরদিকে একে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন ক্রেমলিনের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক কর্মকর্তা ইউরি উশাকভ।

উশাকভ বর্তমানে মস্কোয় অবস্থান করছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ট্রাম্পকে পুতিন বলেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেন যে ৬০ দিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তা যুদ্ধকে আরও দীর্ঘ করবে। উশাকভ এ-ও বলেন, কোনো বিলম্ব ছাড়াই দনবাস ইস্যুতে কিয়েভকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এদিকে জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপের পর পুতিনকে আবার ফোন দেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।