মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র হত্যাকাণ্ড নিয়ে গোপন নথি প্রকাশ করল ট্রাম্প প্রশাসন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বর্ণবাদবিরোধী ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশ কিছু গোপন নথি প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে লুথার কিংয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের নজরদারির তথ্যসংক্রান্ত নথিও আছে।
এসব নথি প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার পৃষ্ঠার। ১৯৭৭ সাল থেকে আদালতের এক আদেশে এগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা নিষিদ্ধ ছিল। এবার ট্রাম্প প্রশাসন তা প্রকাশ করেছে।
তবে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সন্তানেরা এ নথি প্রকাশের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর জীবিত থাকা দুই সন্তান এক বিবৃতিতে বলেন, বাবার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টায় এ নথিগুলো অপব্যবহারের যেকোনো চেষ্টার নিন্দা জানান তাঁরা।
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল ৩৯ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিস শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। এ হত্যার ঘটনায় জেমস আর্ল রে নামের এক পেশাদার অপরাধী দোষ স্বীকার করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি সেই স্বীকারোক্তি ফিরিয়ে নেন।
লুথার কিংয়ের জীবিত দুই সন্তান হলেন তৃতীয় মার্টিন ও বার্নিস। গোপন নথি প্রকাশের আগেই তাঁদের এ ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে মার্টিন ও বার্নিস বলেছেন, ‘নথিগুলো প্রকাশের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, তাঁরা যেন আমাদের পরিবারের বয়ে বেড়ানো শোকের প্রতি সহানুভূতি, সংযম ও সম্মান রেখে বিষয়টি দেখেন।’
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মাত্র ৩৯ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিস শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। এ হত্যার ঘটনায় জেমস আর্ল রে নামের এক পেশাদার অপরাধী দোষ স্বীকার করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি সেই স্বীকারোক্তি ফিরিয়ে নেন।
এই নথিগুলোর প্রকাশকে অবশ্যই পুরোপুরিভাবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ বিবেচনা করতে হবে বলে মনে করেন মার্টিন ও বার্নিস। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের বাবা বেঁচে থাকতে তাঁকে ঘিরে গোপন নজরদারি ও মিথ্যা রটনা চালানো হয়েছিল। তখন জে এডগার হুভারের পরিকল্পনায় এফবিআই এসব কাজ করেছিল। তিনি ছিলেন সংস্থাটির সাবেক ও প্রথম পরিচালক।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের নজরদারির কারণে মার্টিন লুথার কিং সাধারণ নাগরিক হিসেবে যে সম্মান আর স্বাধীনতা পাওয়ার কথা ছিল, তা পাননি।
পরিবারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ১৯৯৯ সালে এক দেওয়ানি মামলার রায়ে বিচারক বলেছিলেন, কিং শুধু একজন বর্ণবিদ্বেষী বন্দুকধারীর হাতে মারা যাননি; বরং এটি ছিল একটি বড় ষড়যন্ত্রের ফল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্টিন লুথার কিং, সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এবং রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড–সংক্রান্ত নথিগুলো প্রকাশ করার নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্টিন লুথার কিং, সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এবং রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড–সংক্রান্ত নথিগুলো প্রকাশ করার নির্দেশ দেন।
গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নথিগুলো দশকের পর দশক সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পড়ে ছিল, ধুলো জমছিল।
এই নথি প্রকাশের কাজটি এফবিআই, বিচার বিভাগ, জাতীয় আর্কাইভ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ একসঙ্গে মিলে করেছে।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, আমাদের দেশের এক মহান নেতার ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের এত বছর পরও মানুষ সত্য জানার অধিকার রাখে।
তবে এই নথি প্রকাশ নিয়ে লুথার কিংয়ের পরিবারের সব সদস্য যে হতাশ হয়েছেন, তা নয়। মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে ‘চাচা’ উল্লেখ করে আলভেডা কিং বলেন, ‘স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান গ্যাবার্ডের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
আলভেডা আরও বলেন, ‘আমরা এখনো তাঁর মৃত্যুর শোক করছি; কিন্তু এই গোপন নথিগুলো প্রকাশ করা সত্যের পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি জানার অধিকার মার্কিন নাগরিকদের আছে।’
ট্রাম্পবিরোধীরা বলছেন, এ নথি প্রকাশ আসলে একধরনের নজর ঘোরানোর চেষ্টা। কারণ, এমন সময়ে এটি প্রকাশিত হয়েছে, যখন কিনা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফ্রি এপস্টেইনের মৃত্যুর নথি নিয়ে স্বচ্ছ আচরণ না করার অভিযোগ উঠেছে।
তবে ট্রাম্পবিরোধীরা বলছেন, এ নথি প্রকাশ আসলে একধরনের নজর ঘোরানোর চেষ্টা। কারণ, এমন সময় এটি প্রকাশ হয়েছে, যখন কিনা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফ্রি এপস্টেইনের মৃত্যুর নথি নিয়ে স্বচ্ছ আচরণ না করার অভিযোগ উঠেছে। এপস্টেইন ২০১৯ সালে জেলে মারা যান। পরে বলা হয়, তিনি কারাগারে আত্মহত্যা করেছেন।
মার্টিন লুথার কিং হত্যায় দোষী সাব্যস্ত খুনি জেমস আর্ল রে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কানাডা, পর্তুগাল ও যুক্তরাজ্যে পালিয়ে বেড়ান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি আদালতে দোষ স্বীকার করেন এবং তাঁকে ৯৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তবে পরে আর্ল রে দাবি করেন, তাঁকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে এবং তিনি নিজের স্বীকারোক্তি ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু আদালত বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন।
জেমস আর্ল রে ১৯৯৮ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান।