যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে কিশোরী মায়েদের জন্য চালু হওয়া স্কুলে নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি সঠিক যৌনতার পাঠ ও শিশু লালন-পালনের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। টেক্সাসে লিংকন পার্ক নামের এ হাইস্কুলের সব শিক্ষার্থীই কিশোরী। তাঁদের কেউ কিশোরী মা, আবার কেউবা মা হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
হতাশা কাটিয়ে কীভাবে জীবনকে নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তারও পাঠদান হয় এই স্কুলে। এই স্কুলেরই এক শিক্ষার্থী হেলেন। ২০২১ সালের শুরুর দিকে হেলেন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি খাবার খাচ্ছিলেন। এত খিদে বেড়ে যাওয়ার কারণ আঁচ করতে পারছিলেন না মাত্র ১৫ বছর বয়সী হেলেন। এত বেশি খাবার খাওয়া স্বাভাবিক কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন বড় বোনের কাছে। বড় বোনও জানিয়েছিলেন, এমনটা হতেই পারে।
কিন্তু হেলেন বুঝতে পারেন, তাঁর মানসিকতারও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অল্পতেই পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া লেগে যাচ্ছে। একসময় বুঝতে পারেন, তাঁর মাসিকও বন্ধ হয়ে আছে। এরপর তাঁর জন্মদিনে তিনি জানতে পারেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছিলেন না হেলেন।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে হেলেনের বন্ধুরা তাঁকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন। হেলেনের অনাগত সন্তানের বাবার পরিচয় নেই অভিযোগ তুলে এক সহপাঠী তাঁর সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দেন।
হেলেন জানান, এমন পরিস্থিতিতে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে লড়াই করতে চাননি। শেষমেশ গর্ভাবস্থার শেষ দিকে তিনি স্কুল পরিবর্তন করে অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেক্সাসে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের কাছে ব্রাউন্সভিলের লিংকন পার্ক স্কুলটি বাইরে থেকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো হাইস্কুলের মতোই। অন্য স্কুলের মতো সামনে বালু ও ইট স্তূপ করে রাখা, পার্ক করা স্কুলবাস ও ওপরের দিকে জাতীয় পতাকা উড়ছে। কিন্তু ভেতরের পরিবেশ ঠিক অন্য স্কুলগুলোর মতো নয়।
কারণ, ভেতরে কিশোরীদের শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার শব্দের পাশাপাশি শিশুদের কান্নাকাটি ও আধো আধো বোলও শুনতে পাওয়া যায়। স্কুলের দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে গর্ভাবস্থা পরিষেবা ও প্যারেন্টিং বিষয়ে সেবামূলক প্রচারণা করা হয়। আর স্কুলের মূল ভবনের পাশেই আছে কিশোরী মায়েদের সন্তানের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র।
গত তিন দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কিশোরীদের সন্তান জন্মের হার কমে গেছে। তবে অল্প বয়সী হিসপানিক মেয়েদের মধ্যে এই সন্তান জন্ম দেওয়ার হার অন্যদের তুলনায় এখনো অনেক বেশি। অন্য যেকোনো সম্প্রদায়ের চেয়ে লাতিন কিশোরীদের গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, ২০২২ সালে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার রায় ঘোষণার পর থেকে এ হার আরও বাড়তে পারে।
২০০৫ সাল থেকে কিশোরী মায়েদের পাঠদান ও সেবা দিতে লিংকন পার্ক হাইস্কুল কার্যক্রম শুরু করে। এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের বয়স ১৪ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে ৯৪ শতাংশই লাতিন হিসপানিক।
অধিকাংশই নিম্ন আয়ের পরিবারের। কয়েকজন আমেরিকান বংশোদ্ভূত মেক্সিকোর নাগরিক। যাঁরা প্রতিদিনই স্কুলে আসতে মেক্সিকোর তামাউলিপাস অঙ্গরাজ্যের মাতামোরস সীমান্ত অতিক্রম করে আসেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে যখন মাতৃত্ব, ঠিক তখন থেকেই লিংকন পার্ক হাইস্কুল কিশোরী মায়েদের পাঠদান ও তাঁদের জীবন পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ হাতে নেয়।
‘সন্তান ও নিজের কথা ভাবতে হবে’
হেলেন গত জুনে বলেছেন, সন্তানকে নিয়েই স্কুলে যাওয়া যায় বলে তিনি আগের স্কুল পরিবর্তন করে লিংকন পার্ক হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছেন। কালো চোখের কিশোরী হেলেন এখনো অনেক লাজুক প্রকৃতির। ওই সময় তিনি কালো টি-শার্ট ও গোলাপি শর্টস পরে ছিলেন।
পিঠের ব্যাগে বই ও জার্নালের পাশাপাশি তাঁর আট মাস বয়সী মেয়ে জেনিনের জন্য ডায়াপার ও পোশাকও ছিল। হেলেন বলেন, ‘আগে আমি শুধু একাই থাকতাম। নিজেকে নিয়ে ভাবতাম। কিন্তু এখন আমাকে সন্তান ও নিজের কথাও ভাবতে হচ্ছে।’
স্কুলে ৭০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।
সদ্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া শিক্ষার্থীরাও এ স্কুলে ভর্তি হন। তবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অনেকেই আবার আগের স্কুলে ফিরে যান। গত জুনে ১৪ বছরের কম বয়সী ৭ শিক্ষার্থী এ স্কুলে ভর্তি হয়েছেন, যাঁদের ৩ জনের প্রত্যেকের ৩টি করে সন্তান আছে।
এই স্কুলের পাঠ্যক্রম অন্য স্কুলগুলোর মতোই। পাস ও অকৃতকার্য নিয়ে সব শিক্ষার্থীই তৎপর। তবে অন্য স্কুলের চেয়ে এই পার্থক্য অন্য জায়গায়। যেমন এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের যেসব স্কুলবাসে আনা-নেওয়া করা হয়, সেসব বাসে শিক্ষার্থীর আসনের পাশাপাশি তাঁদের সন্তানের জন্যও আসন থাকে।
সকালে শিক্ষার্থীরা তাঁদের সন্তান ও নিজের জন্য নাশতা নিতে পারেন। শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার আগে সন্তানদের বিনা মূল্যে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখার সুযোগ আছে।
এই স্কুলে সন্তানকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়। বিজ্ঞান ক্লাসের কক্ষে একটি ওয়ার্ডরোবে শিশুদের জন্য পোশাক রাখা থাকে। যেসব মা প্রয়োজন মনে করেন, তাঁরা এই পোশাক সন্তানের জন্য নিয়ে যেতে পারেন।
যৌনশিক্ষার পাঠ
লিংকন পার্ক হাইস্কুলে শিক্ষার্থীদের অন্তরঙ্গতা ও সঠিক যৌনশিক্ষা দেওয়া হয়। সঙ্গীর সঙ্গে নিরাপদে কীভাবে বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গ হতে হয়, তার পাঠ দেওয়া হয় এখানে। বিষয়টি বহিরাগত কারও কাছে বিস্ময়ের মনে হলেও এ স্কুলের সব শিক্ষার্থীর কাছেই তা স্বাভাবিক একটি বিষয়।
হেলেনের মতোই আরেক কিশোরী মা অ্যালেক্সিস। মাত্র ১৫ বছর বয়সে অ্যালেক্সিস জানতে পারেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। সন্দেহ থেকে বাড়িতে তিনবার গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করে তিনবারই পজিটিভ ফল এসেছিল তাঁর। এসব বিশ্বাস না হওয়ায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। ওই চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানিয়েছেন, অ্যালেক্সিস ছেলেসন্তানের মা হতে যাচ্ছেন।
অ্যালেক্সিস বলেন, ‘এটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। আমি স্কুল বাদ দিতে চাইনি। যদিও জানতাম, স্কুল বাদ দেওয়া ছাড়া গর্ভাবস্থা সামাল দেওয়ার কোনো উপায় নেই।’ এরপর লিংকন পার্ক হাইস্কুলের খোঁজ পান অ্যালেক্সিস। এখন তিনি সেখানেই পড়ছেন। তাঁর ছেলের বয়স এখন প্রায় এক বছর।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রতি ১ হাজার মেয়ের মধ্যে ১৫ জন সন্তান জন্ম দিয়েছেন। ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার এই তথ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। দেশে কিশোরীদের সন্তান জন্মের হার কমে গেলেও টেক্সাসে তা জাতীয় গড় হারের শীর্ষে আছে। কিশোরীদের সন্তান জন্মের উচ্চ হারের দিক দিয়ে শীর্ষ ১০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে টেক্সাস প্রথম অবস্থানে আছে।
ব্রাউন্সভিলের শহরে কিশোরীদের গর্ভধারণের হার ১২। এই শহরে প্রতি ১০ কিশোরীর মধ্যে ১ জন সন্তান জন্ম দেন। টেক্সাসে কিশোরীদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যে গর্ভপাত আইনের কঠোরতা ও স্কুলগুলোয় যৌনশিক্ষা না দেওয়া এর বড় কারণ।
রিলিজিয়াস অ্যান্ড কমিউনিটি লিডারস গ্রুপ দ্য লিবারেল টেক্সাস ফ্রিডমের তথ্য অনুযায়ী, টেক্সাসে প্রায় ৫৮ শতাংশ স্কুলে যৌনশিক্ষার পাঠ দেওয়া হয়। আর ২৫ শতাংশ স্কুলে একেবারেই যৌনশিক্ষার কোনো বিষয় নেই।
লিংকন পার্ক হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সিনথিয়া কারডেনাস বলেন, ‘যতক্ষণ না আমরা তাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করি, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কিছু জানতে পারে না।’
টেক্সাসের যেসব কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হন, তাঁদের অবশ্যই একটি জটিল জনস্বাস্থ্য–ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তাঁদের পর্যাপ্ত যত্ন নিতে হবে। কারণ, তাঁরা যদি গর্ভপাত করতে চান, তাহলে তাঁদের কঠোর গর্ভপাত আইনের মুখোমুখি হতে হবে। এ ছাড়া গর্ভপাত করার জন্য রাজ্যের বাইরে যাওয়াও নিম্ন আয়ের নারীদের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয় না।
বিশেষ করে কম বয়সী মেয়েদের জন্য তা একেবারে সম্ভব হয় না। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হেলেন গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে সন্তানকে দত্তক দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মা জানিয়েছিলেন, হেলেন এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি তাতেই সমর্থন করবেন। কিন্তু প্রসবের পর প্রথম যখন কন্যাশিশুর মুখ দেখেন, তখনই সন্তানকে নিজের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত নেন হেলেন।
হেলেন বলেন, ‘আমার সন্তান জেনিন আমার কাছে সবচেয়ে সেরা বিষয়। আমার হাতেই আমার ভালোবাসা। সে এখন আমার জীবনের সবকিছু।’ আর এক বছর পরেই এ স্কুলের পাট শেষ হবে হেলেনের। এখন তিনি কলেজে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন দেখছেন, নিজের মেয়ে জেনিনের ভরণপোষণ দিতে পারবেন তিনি।
সিডিসি বলছে, কিশোরী মায়েদের মাত্র অর্ধেক অংশ হাইস্কুল শেষ করতে পারেন। আর তাঁদের মধ্যে কেবল অল্পসংখ্যকই কলেজে উচ্চ ডিগ্রি নিতে যান। লিংকন পার্কে না থাকলে কোথায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে হেলেন বলেন, ‘সত্যি বলতে, এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।'
স্কুল শেষ যেতে হবে কলেজে
মাতৃত্বের সংগ্রাম অনেক কঠিন, বিশেষ করে শুরুর দিকে। গবেষণা বলছে, অল্প বয়সে মা হওয়ার কারণে কিশোরীদের মধ্যে হতাশায় ভোগার ঝুঁকি বেশি। অনেকেই অভাবের কারণে স্কুলে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আবার অনেকেই ভাবেন, সন্তান সঙ্গে নিয়ে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করা অসম্ভব।
লিংকন পার্ক হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সিনথিয়া কারডেনাস প্রায় দিনই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুপুরের খাবারের সময় উপস্থিত থাকেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আর এক বছর পরেই স্কুলজীবন শেষ হবে। এ কারণে তাঁদের কাছে অধ্যক্ষ জানতে চান, তাঁরা কলেজে ভর্তির পরীক্ষা দিয়েছেন কি না।
মার্কিন বংশোদ্ভূত মেক্সিকোর নাগরিক ও বাসিন্দা অ্যাঞ্জেলা বলেন, তিনি কলেজে যাবেন কি না, সেটা এখনো ভাবেননি। অ্যাঞ্জেলা মেক্সিকোতে থাকেন। সীমান্তে মাতামোরস থেকে ব্রাউন্সভিলকে সংযোগকারী সেতু পেরিয়ে তিনি দৈনিক সন্তানকে নিয়ে টেক্সাসের স্কুলে আসেন। তাঁর দিন শুরু হয় ভোর পাঁচটায়। এরপর সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য তাঁকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়াতে হয়।
পরিবারকে সহায়তা করতে তিনি মাঝেমধ্যে গৃহকর্মীর কাজ করেন। ওই দিনগুলোয় তিনি স্কুলে আসতে পারেন না। অ্যালেক্সিস বলেন, তিনি কলেজে ভর্তির তথ্য নিয়ে এসেছেন। সেখানেও বাচ্চাদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র আছে। এ ছাড়া সন্তানকে নিয়েও শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার সুযোগ আছে।
আবার কখনো পুরো পরিবার নিয়ে থাকার জন্য ছোট অ্যাপার্টমেন্টের মতো ডরমিটরি পাওয়া যায়। কলেজে ভর্তি বিষয়ে অ্যালেক্সিসের এসব বর্ণনা শুনে অ্যাঞ্জেলা কলেজে ভর্তি হতে রাজি হয়ে যান।
অধ্যক্ষ সিনথিয়া কারডেনাস বলেন, লিংকন পার্ক হাইস্কুলের একটি লক্ষ্য হলো স্কুল শেষে শিক্ষার্থীদের কলেজ যেতে উৎসাহিত করা। তিনি আরও বলেন, ‘তারা (শিক্ষার্থীরা) জানে না বাচ্চাদের কীভাবে সামাল দিতে হয়। শিক্ষক হিসেবে আমরা তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার কাজ করি। আর এটি আমাদের সঠিকভাবেই করে দিতে হবে।’