যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মেট গালা, এমআইটিতে

গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টস অভিমুখে শত শত শিক্ষার্থী। সেখানে বসেছিল ফ্যাশনজগতের সবচেয়ে বড় আয়োজন মেট গালা, হাজির হয়েছিলেন নামীদামি তারকারা। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরেছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে পড়ল ফ্যাশনজগতের সবচেয়ে বড় আসর মেট গালা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে গত সোমবার হাজারো বিক্ষোভকারী অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে জড়ো হন। এ সময় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে স্লোগান দেন তাঁরা। এদিন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ করেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এরই মধ্যে সোমবার পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতিতে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজারো শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং ইসরায়েলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনেরও অবসান চান তাঁরা। পরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। ইতিমধ্যে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে মরিয়া হলেও গাজায় আগ্রাসন বন্ধে ইসরায়েলকে কার্যকর চাপ না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস সোমবার জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তাদের যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাতে তারা রাজি। তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে না। এরই মধ্যে সোমবার রাতে রাফায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সাত মাস ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মুখে গাজার অধিকাংশ বাসিন্দা রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন।

মেট গালায় বিক্ষোভ

বিক্ষোভের মুখে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণা দেয়। এ দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন হাজারো শিক্ষার্থী। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা যান মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টস কস্টিউম ইনস্টিটিউটে। সেখানে সোমবার রাতে মেট গালায় অংশ নিয়েছিলেন ফ্যাশনজগতের নামীদামি তারকারা।

নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে অবস্থান নিয়ে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন হাজারো বিক্ষোভকারী। ‘গাজায় যখন বোমাবর্ষণ হচ্ছে, তখন মেট গালা হতে পারে না’, ‘স্বাধীনতা ছাড়া কোনো উদ্‌যাপন নয়’—এ রকম নানা স্লোগান দেন তাঁরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা।

বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় পুলিশের হেলিকপ্টার উড়তেও দেখা যায়। বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।

এমআইটিতে বিক্ষোভ

পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে সোমবার বিক্ষোভ করেছেন এমআইটির শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এমআইটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। সেই তাঁবু ঘিরে পুলিশ ব্যারিকেড দিলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন। এ দিন হাজারো বিক্ষোভকারী ম্যাসাচুসেটস অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভ বন্ধের জন্য সোমবার বিকেল পর্যন্ত সময় দিয়েছিল এমআইটি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় তাঁবু ছেড়ে না গেলে ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়। এই হুমকির পরও অনেক শিক্ষার্থী তাঁবুতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এরপর পুলিশ তাঁবুর চারদিকে ব্যারিকেড দেয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙলে দেখা দেয় উত্তেজনা। তবে এদিন এমআইটি থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়নি।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন এমআইটির ইহুদি শিক্ষার্থী স্যাম ইহনাস বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এমআইটির সরাসরি গবেষণা-সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এমআইটির বিদ্যমান এই সম্পর্ক ছিন্নের দাবিতেই মূলত আমরা তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করছি।’

বিক্ষোভ আরও কয়েক দেশে

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ আরও কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।

ফিনল্যান্ডে হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কয়েক ডজন তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে বড় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করা পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে। ডেনমার্কে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ৪৫টি তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে সোমবার অন্তত ১২৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।

বার্লিনের ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে কয়েক শ বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অন্তত ২০টি স্থানে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করছিলেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মুখে ছিল মাস্ক। ফিলিস্তিনে হামলা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা।

ইতালির ন্যাপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।