চাকরি আছে কি না, জানতে চেয়ে বরখাস্ত হলেন টুইটার কর্মী
চাকরি আছে কি নেই, তা জানতেও পারছেন না টুইটারের কর্মীরা। এমনই এক পরিস্থিতিতে টুইটারের এক কর্মী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ইলন মাস্কের কাছে টুইট করে জানতে চেয়েছিলেন তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কি না! হ্যালি থরলেইফসন নামের ওই কর্মী ইলন মাস্কের উদ্দেশে বলেন, আপনার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান আমার চাকরি আছে কি নেই তা নিশ্চিত করতে পারছেন না। এ টুইটের জবাবে, মাস্ক তাঁকে প্রশ্ন করেন, টুইটারে আপনি কী কাজ করছেন?
থরলেইফসন (৪৫) টুইটারের পণ্য নকশাকারী বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন। বিবিসিকে হ্যালি থরলেইফসন বলেন, ৯ দিন ধরে টুইটারে তাঁর কাজ সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তিনি জানতেন না, তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে নাকি তিনি টুইটারের কর্মী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন।
টুইটারে ইলন মাস্ককে প্রশ্ন করার পর দুজনের মধ্যে বেশ কিছু কথাবার্তা হয়। ইলন মাস্কের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। থরলেইফসন বলেন, তাঁকে এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়, যেন তিনি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছেন। ইলন মাস্কের সঙ্গে কথাবার্তার পরই মানবসম্পদ বিভাগে থেকে ই–মেইল করে জানানো হয়, তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়টি নিয়ে বিবিসির কাছে কোনো মন্তব্য করেনি টুইটার কর্তৃপক্ষ। থরলেইফসন অভিযোগ করেন, তাঁর চাকরির বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন অস্পষ্টতার বিষয়টি ছিল অদ্ভুত ও মানসিক চাপের।
থরলেইফসন বলেন, ‘গত রোববার আমি কম্পিউটার খুলে দেখি অ্যাকাউন্ট লক হয়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে আমি লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। পরিস্থিতি বুঝতে মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান ও ইলন মাস্কের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি।
মানবসম্পদ বিভাগ থেকে দুবার মেইল করা হলেও আমরা চাকরির বিষয়টি খোলাসা করতে পারেনি তাঁরা। এ পরিস্থিতিতে আমি হতাশ হয়ে ইলন মাস্ককে টুইট করি।’
ইলন মাস্কের প্রশ্নের জবাবে টুইটারে কী কী কাজ করেন, তা জানান থরলেইফসন। সব কথা শোনার পর দুটি হাসির ইমোজি দেন ইলন মাস্ক। এরপর তিনি জানতে পারেন তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুরো বিষয়টি টুইটারে তুলে ধরেছেন থরলেইফসন। বিষয়টি নিয়ে টুইটার ব্যবহারকারীরা নানা মন্তব্য করছেন।
ইলন মাস্ক থরলেইফসনের সমালোচনাও করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজ করেন না। তিনি প্রতিবন্ধী হিসেবে অজুহাত দেন। তিনি টাইপ করতেও পারেন না। অথচ টুইটের ঝড় তোলেন।
থরলেইফসন মূলত আইসল্যান্ডভিত্তিক ক্রিয়েটিভ ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ইউয়েনোর প্রতিষ্ঠাতা। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে অধিগ্রহণ করে টুইটার। এর ফলে টুইটারের কর্মী হিসেবে যোগ দেন থরলেইফসন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার শারীরিক সমস্যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই। আমার মাসকুলার ডিসট্রফি নামের একধরনের রোগ রয়েছে, যাতে শরীর ধীর ধীরে দুর্বল হচ্ছে।’
থরলেইফসন বলেন, ‘টুইটারের সঙ্গে যে চুক্তিতে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে বিক্রি করেছিলেন, তার প্রতি মাস্ক শ্রদ্ধা জানাবেন কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত মানসিক কষ্টের। এটা আমার অবসরের তহবিল। আমার শারীরিক সমস্যা বাড়ছে বলে নিজের ও পরিবারের জন্য এ অর্থ প্রয়োজন। অন্যদিকে ইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তিনি যদি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা না জানান, তবে তা আমার জন্য গ্রহণ করা সহজ হবে না।’
টুইটারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত মাসে আরেক দফা কর্মী ছাঁটাই করেছেন মাস্ক। এ সময় তিনি ২০০ কর্মী ছাঁটাই বরেন। গত বছরের অক্টোবরে টুইটারে যেখানে সাড়ে সাত হাজার কর্মী ছিলেন, তা এখন দুই হাজারে দাঁড়িয়েছে।
থরলেইফসন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করতে পারে। এটা তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা কর্মীদের বিষয়টি জানায়। কিন্তু টুইটারে ছাঁটাই করা হলেও তা জানানোর বিষয়টি তাদের কাছে অতটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়।