ট্রাম্প সামরিক সহায়তা স্থগিতের আগে ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছর পেরিয়েছে। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন। দেশটিকে আরও সহায়তা অনুমোদন করেছিল ওয়াশিংটন। তবে সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সহায়তা স্থগিত করেছেন। এতে করে ইউক্রেন আদৌ ওই সহায়তা হাতে পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে এসব সহায়তা দিয়েছিলেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিয়েভের এককাট্টা সমর্থক ছিলেন তিনি। ওই সহায়তাকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর উল্লেখ করেছিল ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অটল সমর্থন’ হিসেবে। তবে যুদ্ধ ঘিরে ট্রাম্পের আকস্মিক অবস্থান বদলের ফলে সেই সমর্থনে পরিবর্তন এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেন যেসব গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা পেয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকা ২০ জানুয়ারি সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। সে অনুযায়ী ইউক্রেনের পাওয়া সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে—
আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে আকাশপথে অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এই হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে ‘প্যাট্রিয়ট’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তিনটি ব্যাটারি। ইউরোপীয় মিত্ররাও কিয়েভকে একই ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের তালিকায় থাকা অন্যান্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ১২টি ‘নাসাম’ ও ‘হক’। এর গোলাবারুদও ইউক্রেনকে সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে কিয়েভকে ৩ হাজারের বেশি ‘স্ট্রিংগার’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে ওয়াশিংটন। আকাশযান ধ্বংস করতে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে ইউক্রেনকে ২১টি নজরদারির রাডার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করা পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে একীভূত হতে পারে এমন সামরিক সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন।
ক্ষেপণাস্ত্র ও মর্টার
বিগত তিন বছরে ইউক্রেনকে ২০০টির বেশি ১৫৫ মিলিমিটারের ‘হোইৎজার’ কামান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই কামানগুলোয় ব্যবহারের জন্য ৩০ লাখ গোলাও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১০৫ মিলিমিটারের ৭২টি হোইৎজার এবং ১০ লাখ গোলা পেয়েছে ইউক্রেন। পাশাপাশি দেশটিকে ৭ লাখ মর্টারও দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনকে ৪০টির বেশি ‘হিমার্স’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থাগুলো হালকা সাঁজোয়া যানের ওপর যুক্ত করা যায়। হিমার্সের গোলাবারুদও ইউক্রেন হাতে পেয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১০ হাজারের বেশি ‘জ্যাভেলিন’ পেয়েছে কিয়েভ। যুদ্ধ শুরুর সপ্তাহগুলোয় ট্যাংকবিধ্বংসী এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় বড় ভূমিকা রেখেছিল।
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার যানবাহন ধ্বংসের জন্য ইউক্রেনকে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি অন্যান্য অস্ত্র দিয়েছে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি দেশটিকে ১০ হাজার ‘টো’ ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছোটখাটো অস্ত্রের মধ্যে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ৫০ কোটির বেশি গোলাবারুদ ও গ্রেনেড পেয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা।
ট্যাংক ও হেলিকপ্টার
ইউক্রেনকে নিজেদের তৈরি যুদ্ধবিমান দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। তবে কিয়েভকে সোভিয়েত আমলে নকশার ২০টি ‘এমআই-১৭’ সামরিক হেলিকপ্টার দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এ ছাড়া বিভিন্ন মডেলের ড্রোনও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন।
এ ছাড়া বিলম্বে হলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৩১টি অত্যাধুনিক ‘আব্রামস’ ট্যাংক দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। পাশাপাশি সোভিয়েত আমলের নকশার ৪৫টি ‘টি-৭২বি’ ট্যাংকও ইউক্রেনে পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন।
২০ জানুয়ারি প্রকাশিত পররাষ্ট্র দপ্তরের তালিকায় ৩০০টি ‘ব্রাডলি’ যুদ্ধযানও রয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনকে ১ হাজার ৩০০টি সেনাসদস্যদের বহনকারী সাঁজোয়া যান, ৫ হাজারের বেশি ‘হামভি’ সামরিক যান এবং ৩০০টি সাঁজোয়া অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন থেকে সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে দেওয়া অন্যান্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে শতাধিক টহল নৌযান, উপকূল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, মাইন, স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা, অন্ধকারে দেখতে সহায়তা করে—এমন চশমা এবং ১ লাখের বেশি বর্ম।