বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশু কাইরান কাজী মাস্কের স্পেসএক্স ছেড়ে এবার কোন চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছে

কাইরান কাজীছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

মাত্র ১৪ বছর বয়সে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পে যোগ দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর কাইরান কাজী। দুই বছর সেখানে কাজ করার পর এবার স্টারলিংক ছেড়ে সে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিটাডেল সিকিউরিটিজে কোয়ান্ট ডেভেলপার হিসেবে নিজের দক্ষতা দেখাতে চলেছে।

কাইরান কাজীর বয়স এখন ১৬ বছর। ১৪ বছর বয়সে সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করার পর সে স্পেসএক্সে যোগ দিয়েছিল। কাইরান বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রকৌশলীদের একজন।

এই কিশোর প্রকৌশলী এবার কোয়ান্টিটেটিভ ফাইন্যান্সে তার অনন্য প্রতিভা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা দেখাতে চলেছেন। পেশা জগতে বয়সভিত্তিক পক্ষপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠাই হচ্ছে তার উদ্দেশ্য।

কাইরান কাজীর অসাধারণ যাত্রা শুরু হয় মাত্র ১৪ বছর বয়সে সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে। সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ স্নাতক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এটি তার ব্যতিক্রমী বুদ্ধিমত্তা, একাগ্রতা ও চাপের মধ্যে সফল হওয়ার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

কাইরান কাজীর শৈশব

কাইরান কাজীর বাবা মুস্তাহিদ কাজী কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং মা জুলিয়া কাজী ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করা একজন আর্থিক পেশাজীবী। অর্থাৎ কাইরানের জন্ম এমন একটি পরিবারে, যেখানে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও আর্থিক কৌশল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

এ ছাড়া একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন হিসেবে বেড়ে ওঠার কারণে কাইরান কাজী সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষাগত প্রত্যাশার একটি অনন্য মিশ্রণের সঙ্গে শৈশবেই পরিচিত হয়।

এসবের প্রভাবে ছোটবেলা থেকেই গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠে ছোট্ট কাইরান, যা তার অসাধারণ অর্জনের ভিত্তি তৈরি করে দেয়।

কাইরান কাজীর শিক্ষাজীবন অন্য সব শিশুর মতো ছিল না। সে তার সহপাঠীদের চেয়ে অনেক আগে কলেজে লেখাপড়া শুরু করে এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে লাস পোসিটাস কলেজ থেকে গণিতে অ্যাসোসিয়েট অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করে।

২০২৩ সালে সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করে ইতিহাস রচনা করে কাইরান কাজী। প্রতিষ্ঠানটির ১৭০ বছরের ইতিহাসে সে–ই সর্বকনিষ্ঠ স্নাতক।

২০২৩ সালে সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করে ইতিহাস সৃষ্টি করে কাইরান কাজী। প্রতিষ্ঠানটির ১৭০ বছরের ইতিহাসে সে–ই হচ্ছে সর্বকনিষ্ঠ স্নাতক।

শুধু শিক্ষাগত অর্জনের ক্ষেত্রেই নয়; বরং সেখানে সে নেতৃত্বের গুণাবলিও প্রদর্শন করেছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সে অ্যাসোসিয়েটেড স্টুডেন্ট গভর্নমেন্টের সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। সে ক্যাম্পাসে নানা উদ্যোগে অংশ নিয়েছে এবং ছাত্র–নেতৃত্বাধীন প্রকল্পগুলোর প্রচার করেছে।

স্টারলিংকের কার্যালয়ের সামনে কাইরান কাজী
ছবি: কাইরান কাজীর ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

স্পেসএক্সে যোগদান ও বিদায়

মাত্র ১৪ বছর বয়সে সাহসী এক পদক্ষেপ নেয় কাইরান কাজী। একজন প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেয় মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্টারলিংকে।

স্টারলিংক প্রকল্পে তার কাজের মধ্যে ছিল জটিল প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে সংস্থাটির বৈশ্বিক ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখা।

স্পেসএক্সে কাইরান কাজীর ভূমিকা তাকে প্রযুক্তি খাতে অন্যতম কম বয়সী প্রকৌশলী রূপে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ও স্বীকৃতি এনে দিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে বয়স কম হলেও উদ্ভাবনের সর্বোচ্চ স্তরের কাজ করার কতটা ক্ষমতা সে রাখে।

কাইরান কাজী শুধু একজন শিশু প্রতিভাবান নয়, সে একজন পথপ্রদর্শকও। সে দেখিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই অভিজ্ঞতা, কৌতূহল এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে কী কী অর্জন করা যেতে পারে।

২০২৫ সালে কাইরান কাজী তার মনোযোগ মহাকাশ প্রকৌশল থেকে আর্থিক প্রযুক্তি খাতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে নিউইয়র্ক নগরভিত্তিক একটি শীর্ষ কোয়ান্টিটেটিভ ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান সিটাডেল সিকিউরিটিজে কোয়ান্ট ডেভেলপার হিসেবে যোগ দেয়।

এখানে সে প্রকৌশল ও পরিমাণগত সমস্যা সমাধানের সংযোগস্থলে কাজ করবে এবং ট্রেডার এবং প্রকৌশলীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে বৈশ্বিক ট্রেডিং ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কাজ করবে।

গভীর মনোযোগে ল্যাপটপে কাজ করছে কাইরান কাজী
ছবি: কাইরান কাজীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

বয়সভিত্তিক পক্ষপাত মোকাবিলা এবং বড় অর্জনের পথে কাইরান কাজীর যাত্রা

অসাধারণ দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কাইরান কাজীকে বয়সের কারণে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রখ্যাত ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ‘ভোগ’–এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কাইরান বলেছিল, সে পুরোনো ধ্যানধারণার প্রাপ্তবয়স্কতাবাদ এবং এ ধরনের নিয়োগ সংস্থা থেকে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারা প্রতিভার চেয়ে বয়সকে বেশি গুরুত্ব দিত।

কাইরানের জীবনবৃত্তান্তে তার নানা অর্জনের কথা লেখা থাকত। এর পরও অনেক নিয়োগকর্তা তার বয়সকে তার যোগ্যতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতেন।

কাইরান কাজীর পেশাগত খাতে যাত্রা একটি বিস্তৃত সমস্যা তুলে ধরেছে। সেটা হলো, বয়স বা অভিজ্ঞতার প্রচলিত প্রত্যাশার চেয়ে দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া কতটা জরুরি।

বাংলাদেশের পতাকা হাতে বালক কাইরান কাজী
ছবি: কাইরান কাজীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

কাইরান কাজী শুধু একজন প্রতিভাবান শিশু নয়, সে একজন পথপ্রদর্শকও। সে দেখিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই অভিজ্ঞতা, কৌতূহল ও দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে কী কী অর্জন করা যেতে পারে।

১৪ বছর বয়সে কলেজ থেকে স্নাতক পাস করা থেকে শুরু করে স্পেসএক্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং এখন সিটাডেল সিকিউরিটিজে কোয়ান্টিটেটিভ ফাইন্যান্সে পদার্পণ করা—তার যাত্রা বিশ্বজুড়ে কমবয়সী উদ্ভাবকদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

কাইরান কাজী প্রমাণ করেছে, প্রতিভা এবং অধ্যবসায়ের সংমিশ্রণ কীভাবে প্রচলিত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে তরুণ পেশাজীবীদের জন্য সম্ভাবনার ধারণা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন