যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গ্রহণ আজ
জিততে আত্মবিশ্বাসী কমলা–ট্রাম্প দুজনেই, তবে ফল আসতে দেরি হতে পারে
কে জিততে যাচ্ছেন, নির্বাচনের রাতেই ভোটাররা প্রাথমিকভাবে সে ধারণা পেয়ে যান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা স্থানীয় সময় আগামীকাল মঙ্গলবার ভোট দিয়ে তাঁদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জিততে দুজনেই আত্মবিশ্বাসী। তবে নির্বাচনের ফল আসতে দেরি হতে পারে।
এবারের নির্বাচনে মোট ছয় প্রার্থীর নাম ব্যালটে দেখতে পাবেন ভোটাররা। তাঁরা হচ্ছেন কমলা হ্যারিস, ডোনাল্ড ট্রাম্প, জিল স্টেইন, কর্নেল ওয়েস্ট, চেজ অলিভার ও রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। এর মধ্যে কেনেডি জুনিয়র ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর নাম প্রার্থী তালিকায় থেকে গেছে। ভোট গ্রহণ শেষের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সম্ভাব্য বিজয়ী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। আবার পরিস্থিতি বিবেচনায় ফলাফল পেতে কয়েক দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
বিভিন্ন জরিপে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ও দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে দুজনের যে তীব্র প্রতিযোগিতার আভাস দেওয়া হয়েছে তাতে জয়ের ব্যবধান হতে পারে খুব অল্প ভোটে। অনেক ক্ষেত্রে ভোট পুনর্গণনার দাবিও আসতে পারে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনের ফল অনেকটা ধীরগতিতে আসতে পারে। কারণ, অনেক অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনার নিয়মে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। অন্যদিকে আবার মিশিগানের মতো অঙ্গরাজ্যে গণনা দ্রুত হবে। কারণ, সেখানে ডাকযোগে আসা ভোট কমেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত বা সকালে ফল পাওয়া যাবে।
এর আগে ২০২০ সালে ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোট হয়েছিল। কিন্তু ইউএস টিভি নেটওয়ার্ক ৭ নভেম্বর সকালের আগে জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা ভোট শেষ করে রাতে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নেবেন, তখন ট্রাম্পের সমর্থকেরা বিজয়ী হওয়ার আত্মবিশ্বাস দেখাতে শুরু করতে পারেন। তবে সজাগ কমলার সমর্থকেরাও। আগাম ফল ঘোষণা করা হলে তারা সে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
* পরিস্থিতি বিবেচনায় ফলাফল পেতে কয়েক দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। * সাতটি সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে দুই প্রার্থীই এবারের নির্বাচনে ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে কাছাকাছি রয়েছেন। অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফল পাওয়া যায়, কিন্তু পেনসিলভেনিয়া ও নেভাদার মতো অঙ্গরাজ্যে ফল পেতে আরও দেরি হতে পারে।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে ইলেকটোরাল ভোট ১৯টি। গত সোমবার পর্যন্ত এই অঙ্গরাজ্যের ফল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে হেলে পড়তে পারে বলে আলোচনা চলছিল।
কে জিততে যাচ্ছেন, নির্বাচনের রাতেই ভোটাররা সে ধারণা পেয়ে যান। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন জেতেন, নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরুর পর মধ্যরাতেই নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
ভোট গ্রহণ কখন শুরু, কখন শেষ
৫ নভেম্বর নির্বাচনের দিন অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে ভোটকেন্দ্রগুলো খুলবে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক ‘টাইম জোন’-এ বিভক্ত হওয়ায় দেখা যাবে সময়ের এমন পার্থক্য।
একইভাবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সময় হবে পৃথক। কখনো তা কাউন্টি ভেদেও হবে ভিন্ন। সে যা-ই হোক, অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ হবে ইস্টার্ন টাইম সন্ধ্যা ৬টা ও মিডনাইট ইস্টার্ন টাইমের (২২: ০০-০৪: ০০ জিএমটি) মধ্যে।
এদিকে ভোটকেন্দ্র প্রথম বন্ধ হওয়ার (ইস্টার্ন টাইম সন্ধ্যা ৬টা) সঙ্গে সঙ্গে ভোট গণনার কাজ শুরু হবে। এর কয়েক ঘণ্টা পর থেকে ফলাফল আসতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য কোনগুলো এবং তাতে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট কত
সাতটি সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব অঙ্গরাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া (১৯ ইলেকটোরাল ভোট), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬), জর্জিয়া (১৬), মিশিগান (১৫), অ্যারিজোনা (১১), উইসকনসিন (১০) ও নেভাদা (৬)। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ৯৩টি।
নির্বাচনে জিততে একজন প্রার্থীকে মোট ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি পেতে হবে। যেসব অঙ্গরাজ্য থেকে ভোটের প্রথম ফলাফল আসতে পারে, সেগুলোর একটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া। এরপর রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা।
ভোট সমান হলে কী হবে
নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ২৬৯-২৬৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান কিংবা তৃতীয় কোনো প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোট জেতেন, সে ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘প্রতিনিধি পরিষদ’ ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। এটি ‘কন্টিনজেন্ট ইলেকশন’ নামে পরিচিত।
এ ঘটনা মাত্র একবারই হয়েছে, ১৮২৪ সালে। সে বছর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট চার প্রার্থীর মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ায় কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। অবশ্য এখন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি—এই দুই দলের আধিপত্যের কারণে একই রকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই বললে চলে।
কন্টিনজেন্ট ইলেকশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে নির্ধারণ করবে প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ। এ পরিষদে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিদের থাকবে একটি করে ভোট। জয়ী প্রার্থীকে অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধির ভোট পেতে হবে।
এরপর কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট ভাইস প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবে। প্রত্যেক সিনেটরের থাকবে একটি ভোট। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিততে প্রার্থীকে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ ভোট) পেতে হবে।
ভোট গণনা পদ্ধতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে ভোটের পদ্ধতির নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা পরস্পরের থেকে আলাদা। তিনটি প্রাথমিক পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট দেন। এগুলো হচ্ছে হ্যান্ডমার্ক করা কাগজের ব্যালট, ব্যালট মার্কিং ডিভাইস (বিএমডি) ও ডাইরেক্ট রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক (ডিআরই)। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজ পদ্ধতি কাগজের ব্যালট, প্রায় ৭০ শতাংশ কাগজের ব্যালট ব্যবহার করেন। ২৫ শতাংশেরও বেশি ভোটার ব্যবহার করেন এই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ভোটদান পদ্ধতি বিএমডি। ভোটারদের একটি স্ক্রিনে বিকল্প নির্বাচন করতে দেয় এবং তারপর তাঁদের পছন্দ নিশ্চিত করতে একটি কাগজের ব্যালট প্রিন্ট করা হয় এই ব্যবস্থায়। ডিআরই যন্ত্রনির্ভর পদ্ধতি অনেকটা ইভিএমের মতোই।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোট গণনার পদ্ধতিতেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ভোটের দিন যে ভোট পড়ে তা প্রথমে গণনা করা হয়। এরপর আগাম ও ডাকযোগে আসা ভোট গণনা করা হয়। এরপর অভিবাসী ও সামরিক ভোটও গণনায় আনা হয়। স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোট যাচাই, প্রক্রিয়াকরণ ও গণনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
হাতে চিহ্নিত কাগজের ব্যালট এবং বিএমডিতে দেওয়া ভোটগুলো সাধারণত ‘অপটিক্যাল স্ক্যানার’ ব্যবহার করে স্ক্যান করা হয়। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলাফল নথিভুক্ত করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি একটি রাজ্য-স্তরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করেন। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে গণনার পাশাপাশি প্রয়োজনে হাতে ভোট গণনারও ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আগাম ভোটের ক্ষেত্রে চালু ‘মেইল ইন ব্যালট’ ব্যবস্থায় দেওয়া ভোটের বৈধতা যাচাই এবং গণনার প্রক্রিয়াও রয়েছে কয়েকটি প্রদেশে। রাজ্য নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করতে হয়।