গবেষণার জন্য দানের মরদেহ চুরির ঘটনায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে: আদালত
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলে গবেষণার জন্য দান করা মরদেহ চুরি করে কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বলে রায় দিয়েছেন ম্যাসাচুসেটসের সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল সোমবার দেওয়া রায়ে আদালত বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মরদেহগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মর্গ ব্যবস্থাপক সেড্রিক লজ তাদের প্রিয়জনদের মরদেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে মামলা করা হয়েছিল। মামলায় তিনি দোষীও সাব্যস্ত হয়েছেন।
ম্যাসাচুসেটসের সর্বোচ্চ বিচারিক আদালত বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত মরদেহগুলো কেটে সেগুলোর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করে বিক্রি করে দিতেন সেড্রিক লজ। তাঁর এই ‘ভয়াবহ কাজের’ জন্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কেও দায়ী করেছিল। কিন্তু নিম্ন আদালতের এক বিচারক অন্যায্যভাবে মামলাগুলো খারিজ করে দেন।
বিচারপতি স্কট কাফকার রায়ে বলেন, মামলার বাদীরা অভিযোগ করেছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মরদেহগুলোর ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছে। মরদেহগুলোর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা ভয়ংকর ও অসম্মানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবহেলার সুযোগে সেড্রিক লজ বহু বছর ধরে এ অপকর্ম করেছেন।
আদালতের রায়ে কাফকার লিখেছেন, ‘দান করা মরদেহগুলোকে সম্মানজনকভাবে সংরক্ষণ ও যথাযথভাবে সামলানোর আইনি দায়িত্ব ছিল হার্ভার্ডের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হার্ভার্ড নিজেই এ দায় স্বীকার করেছে।’
এ ঘটনায় হার্ভার্ডের মরণোত্তর দেহদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রমও নতুনভাবে শুরু করেছেন আদালত।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এক বিবৃতিতে লজের এই অপকর্মকে জঘন্য বলে উল্লেখ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি হার্ভার্ডের মূল্যবোধের পরিপন্থী।
লজ গত মে মাসে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি এখন তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন।
বিচারকেরা বলেন, সেড্রিক লজ ২০১৮ সালে মর্গ থেকে মরদেহ চুরি শুরু করেন। তিনি মরদেহের মাথা, মস্তিষ্ক, ত্বক ও অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করে বোস্টনের হার্ভার্ড মর্গ থেকে নিউ হ্যাম্পশায়ারের গফসটাউনে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন এবং স্ত্রীর সহায়তায় সেগুলো বিক্রি করে দিতেন।
এ ঘটনায় মোট ১২টি মামলায় ৪৭ অভিযোগকারী হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়টি বছরের পর বছর ধরে লজের কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করেছে।