মহাকাশে আটকে থাকা ২ নভোচারীকে ফেরাচ্ছে স্পেসএক্স

নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও ব্যারি উইলমোরছবি: নাসা/জেএসসি

দুই মাসের বেশি সময় ধরে মহাকাশে আটকে থাকা দুই নভোচারীকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে একটি স্পেসএক্স মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে।

আটকে পড়া দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও ব্যারি উইলমোর। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) এই দুই নভোচারী গত ৫ জুন মহাকাশে যাত্রা করেন। তাঁদের সফরসূচি ছিল মাত্র আট দিনের। কিন্তু এখন তাদের প্রায় আট মাস মহাকাশে থাকতে হবে।

নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানটিতে করে সুনিতা ও উইলমোর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) গিয়েছেন, সেটি ‘কোনো নভোচারী ছাড়াই’ পৃথিবীতে ফিরে আসবে।

সুনিতা ও উইলমোরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার সময়ই স্টারলাইনার মহাকাশযানটিতে বেশ কিছু গোলযোগ দেখা দেয়। যেমন সেটিতে ফুটো হয়ে হিলিয়াম গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। ইঞ্জিনেও গোলযোগ দেখা দেয়।

বাণিজ্যিক মহাকাশযানে করে নভোচারীদের মহাকাশে নিয়ে যেতে বোয়িং এবং স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি করেছে নাসা।

বোয়িংয়ের সঙ্গে নাসা ৪২০ কোটি মার্কিন ডলার এবং ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সঙ্গে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে। স্পেসএক্স এখন পর্যন্ত নভোচারীদের নিয়ে মহাকাশে নয়টি মহাকাশযান পাঠিয়েছে। তারা কয়েকটি বাণিজ্যিক উদ্যোগও পরিচালনা করেছে। তবে বোয়িংয়ের জন্য এটা ছিল নভোচারীদের নিয়ে প্রথম মহাকাশ যাত্রা।

স্টারলাইনার মহাকাশযানটিতে কী ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিয়েছে, তা খুঁজে পেতে কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বোয়িং ও নাসার প্রকৌশলীরা। তাঁরা মহাকাশে এবং পৃথিবীতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।

তাঁরা সমস্যার শিকড় খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছেন এবং আশা করছেন, স্টারলাইনারে করে নভোচারীদের নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজে পাবেন।

এ বিষয়ে গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, মহাকাশযানটিতে কী কী উন্নতি করা প্রয়োজন, তা বুঝতে বোয়িং নাসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘মহাকাশযাত্রা মানেই ঝুঁকির বিষয়। সে যাত্রা যদি সব নিরাপত্তা মেনে করা নিতান্তই সাধারণ ফ্লাইট হয়, তাহলেও। আর পরীক্ষামূলক ফ্লাইট স্বভাবতই নিরাপদও নয়, সাধারণও নয়। সব সময় নিরাপত্তাই আমাদের মূলমন্ত্র এবং ধ্রুবতারা।’

ওই দুই নভোচারীকে একটি স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা হিসেবে তাদের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইএসএস এ থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাড়তি এই সময়ে স্পেসএক্স তাদের পরবর্তী নভোযান পাঠানোর সুযোগ পাবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে স্পেসএক্সের পরবর্তী মহাকাশযান পাঠানোর কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন

সেটিতে চারজন নভোচারী পাঠানোর কথা ছিল। তবে সেটি দুজন নভোচারী নিয়ে মহাকাশ স্টেশনে যাবে, সেটি পৃথিবীতে ফেরার সময় সুনিতা ও উইলমোরকে নিয়ে যেন ফিরে আসতে পারে। ওই মহাকাশযানটির আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে পৃথিবীতে ফেরার কথা।

নাসা জানিয়েছে, উভয় নভোচারীই এর আগে দুবার দীর্ঘ সময় মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করেছেন এবং তাঁরা সব ধরনের ঝুঁকির বিষয়ে অবগত।

উইলমোরের বয়স ৬১ বছর, সুনিতার বয়স ৫৮ বছর। তাঁরা দুজনই তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনায় ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে নাসা।

তাঁরা ফিরে আসার আগপর্যন্ত আগামী কয়েক মাসে কিছু বৈজ্ঞানিক এবং মহাকাশ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবেন। তাঁদের একাধিকবার মহাকাশে হাঁটার (স্পেসওয়াক) সম্ভাবনাও আছে।

আরও পড়ুন