নারী নিপীড়নকারী এপস্টেইন–ঝড়ে এবার কি সত্যিই বিপদে পড়তে যাচ্ছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ছড়ানো ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ওপর থেকে খুব কমই নিয়ন্ত্রণ হারান। তবে এবার জেফরি এপস্টেইনকে ঘিরে তাঁর প্রশাসনকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়িয়েছে, সে ঝড় আটকানো সম্ভবত ট্রাম্পেরও ক্ষমতার বাইরে।

এপস্টেইনকে ঘিরে বিতর্ক ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য অপ্রত্যাশিত এক নাটকীয় বাঁক হয়ে এসেছে। এ নিয়ে নিজের ‘মেগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) আন্দোলনের সবচেয়ে সরব ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পকে এবার আর ষড়যন্ত্রতত্ত্বের সূচনাকারী নয়; বরং নিয়ন্ত্রণহীন এক ষড়যন্ত্রের শিকার মনে হচ্ছে। ট্রাম্পকে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি কিছু গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। তাঁকে এবার আর প্রথাগত রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা অভিজাত শাসনব্যবস্থা ভেঙেচুরে দেওয়ার মতো শক্তিশালী বহিরাগত মনে হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইন। শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে ছিলেন মার্কিন এ ধনকুবের। নানা অভিযোগের বিচার চলাকালে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে একটি কারাগারের তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ওই মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।

সে সময় জোর আলোচনা হয়েছিল, কারাগারের ভেতরেই আত্মহত্যা করেছেন এপস্টেইন। আবার ষড়যন্ত্রতত্ত্ব সামনে এনে অনেকে বলছিলেন, আত্মহত্যা নয়, বরং খুন হয়ে থাকতে পারেন এপস্টেইন।

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইন। শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে ছিলেন মার্কিন এ ধনকুবের। নানা অভিযোগের বিচার চলাকালে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে একটি কারাগারের তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

দেশ-বিদেশের ক্ষমতাশালী এবং উঁচু তলার মানুষের সঙ্গে এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁরা এপস্টেইনের মক্কেল ছিলেন বলেও অনেকে অভিযোগ করে থাকেন। এপস্টেইন তাঁর মক্কেলদের তালিকা রাখতেন বলেও শোনা যায়।

জেফরি এপস্টেইন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ২০২১ সালে অভিযোগ করেছিলেন, সরকার (জো বাইডেন প্রশাসন) এপস্টেইনের সেই ‘মক্কেল তালিকা’ গোপন করার চেষ্টা করছে। ওই তালিকায় ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের নামও আছে বলে শোনা গিয়েছিল।

এখন নিজেদের পুরোনো অবস্থান থেকে পুরোপুরি উল্টে গিয়ে ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রশাসন বলছে, এপস্টেইনের ‘মক্কেল তালিকা’ বলে আসলে কিছু নেই, এ ধরনের কিছুর অস্তিত্বই নেই। তিনি কারাগারে খুনও হননি।

ট্রাম্প ও তাঁর কয়েকজন বর্তমান শীর্ষ সহযোগীর আগে ছড়ানো ষড়যন্ত্রতত্ত্বের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধপূর্ণ এ অবস্থান নিয়ে মেগা আন্দোলনের সবচেয়ে পরিচিত কিছু মুখ প্রকাশ্যে কথা বলতে শুরু করেছেন। যেমন জর্জিয়ার আইনপ্রণেতা মারজোরি টেইলর গ্রিন সোমবার সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের কিছু সমর্থক বিষয়টিকে ‘আড়াল করার চেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন। এতে মেগা আন্দোলনের ভেতরে ‘গুরুতর প্রতিক্রিয়া’ দেখা দিতে পারে।

সিএনএনকে টেইলর আরও বলেন, ‘বহু মানুষের কাছে এটা সীমা অতিক্রম করে যাওয়া।’

এপস্টেইন–কাণ্ড ঘিরে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল এবং তাঁর ডেপুটি ড্যান বনজিনোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই বিশৃঙ্খলা ও অকার্যকর দৃশ্য, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল।

এখন নিজেদের পুরোনো অবস্থান থেকে পুরোপুরি ঘুরে গিয়ে ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রশাসন বলছে, এপস্টেইনের ‘মক্কেল তালিকা’ বলে আসলে কিছু নেই, এ ধরনের কিছুর অস্তিত্বই নেই। তিনি কারাগারে খুনও হননি।

ষড়যন্ত্রতত্ত্ব কতটা শক্তিশালী হতে পারে এবং সরকার যে শুধু আশ্বাসমূলক বিবৃতি দিয়েই ষড়যন্ত্রতত্ত্ব মুছে ফেলতে পারে না, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ট্রাম্প নিজে।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ভুয়া ষড়যন্ত্রগুলোর কয়েকটি ছড়িয়েছেন। ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়ে বর্ণবাদী কল্পকাহিনি থেকে শুরু করে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি জিতেছেন বলে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়িয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ভোটে জেতার পরও তাঁকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়া গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং কোনো না কোনোভাবে এই ষড়যন্ত্রতত্ত্ব পরবর্তী সময়ে তাঁকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি করেছে।

কিন্তু ট্রাম্পের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়ানোর দক্ষতা এবার এপস্টেইন-সংক্রান্ত নাটক থামাতে কোনো কাজে আসছে না।

সিএনএন বলেছে, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা এই বিতর্কে ট্রাম্প ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছেন। ট্রাম্প দেশ–বিদেশে হোয়াইট হাউসের যেসব সাফল্য দেখাতে চান, এপস্টেইন বিতর্ক তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারে।

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প যদি বিচার মন্ত্রণালয়ের এপস্টেইন-বিষয়ক স্মারকলিপি নিয়ে তৈরি ক্ষোভ শান্ত করতে না পারেন, তবে তিনিই কী তাঁর নিজের তৈরি রাজনৈতিক জোটের ক্ষতির কারণ হবেন?

আরও পড়ুন