জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পকে ধরে ফেলছেন বাইডেন

ট্রাম্প ও বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে লড়ছেনছবি: রয়টার্স

বড় ধরনের সুখবর পেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাত মাস আগেই কয়েকটি ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যে বা সুইং স্টেটে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধরে ফেলছেন বাইডেন। গত মঙ্গলবার মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান মর্নিং কনসাল্ট ও গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ নিউজের এক জরিপে বাইডেন এ সুখবর পান। কোনো নির্বাচনের আগে পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে যদি দেখা যায় কোনো অঙ্গরাজ্যে দুই দলের কেউই সুস্পষ্ট ফেবারিট নন, তখন সেই অঙ্গরাজ্যকে সুইং স্টেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এদিকে বাইডেনের এগিয়ে থাকার খবরে ডেমোক্র্যাট দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘বাইডেনের আচমকা ধাক্কা’।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, চার মাস আগে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন বাইডেন। সেখানে তিনি এখন এক পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। পেনসিলভানিয়ায় দুজনের পয়েন্ট সমান সমান। গত মাসে এখানে ট্রাম্প ছয় পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। মিশিগানে দুজনের পয়েন্ট সমান সমান।

আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে ভোটের ওপর দুজনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। এর মধ্যে ট্রাম্প অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে কেবল জর্জিয়াতেই এখন আগের তুলনায় কেবল এগিয়েছেন ট্রাম্প।

মঙ্গলবার নর্থ ক্যারোলাইনায় নির্বাচনী প্রচার চালান বাইডেন। এদিকে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও এখন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের কোনো সময় নির্ধারণ করা হয়নি।

এর মধ্যে গত সোমবার ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদালতে হাজির হন। সেখানে তাঁর দুটি মামলায় শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফৌজদারি মামলা, আরেকটি জালিয়াতির মামলা। এর আগে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে এক পর্নো তারকাকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অবশ্য ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সব কটিই অস্বীকার করেছেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের যুক্তি, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। ওই মামলায় আগামী ১৫ এপ্রিল তাঁর বিচার শুরু হবে। বিবাদীপক্ষের সময়ের আবেদন নাকচ করে দিয়ে বিচারপতি জুয়ান মার্চান সোমবার এই দিন ধার্য করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। তবে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সম্ভবত একমাত্র এই মামলায় আদালতকক্ষে হাজির হতে হচ্ছে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য এই প্রার্থীকে।

একই দিন প্রতারণার এক মামলায় শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পের বন্ডের পরিমাণ ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার থেকে কমিয়ে ১৭ কোটি ৫০ লাখ করেছেন নিউইয়র্কের আরেকটি আদালত। বন্ডের এই অর্থ জমা দিতে তাঁকে ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পর্কিত ১৪টি ফৌজদারি অভিযোগ এবং গোপনীয় তথ্য কাছে রাখার কারণে ৪০টি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণ ও মানহানির মামলায় ট্রাম্প ৯ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বন্ড জমা দিয়েছেন।

সোমবার বাইডেনের প্রচারশিবিরের একজন মুখপাত্র ট্রাম্পকে ব্যক্তি ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ‘দুর্বল ও মরিয়া’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রচারশিবির থেকে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করা যাবে না। ট্রাম্প তাঁর কাউন্ট্রি ক্লাবের বাইরে নির্বাচনে প্রচারে আগ্রহী নন। প্রতিবার যখন তিনি মুখ খোলেন, তখনই তিনি মধ্যপন্থী এবং শহরতলির ভোটারদের তাঁর বিপজ্জনক অ্যাজেন্ডা থেকে দূরে সরিয়ে দেন।

ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্টের জরিপের বিষয়ে বাইডেনের প্রচারশিবির থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের মুখপাত্র জ্যাসন মিলার বলেন, সাতটি সুইং স্টেটে ট্রাম্প ৪৭ থেকে ৪৩ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন। বারবার জরিপে দেখা গেছে, ভোটাররা বাইডেনের নিষ্পেষণ করা মূল্যস্ফীতি, দক্ষিণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ফাঁক রাখা ও শিল্পকে ধ্বংস করার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে নীতির বিষয়ে বিব্রত।

বাইডেন হয়তো রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালিকে নিয়ে আশায় ছিলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করা হ্যালি হয়তো ট্রাম্পকে সমর্থন করবে না বলে ভেবেছিল ডেমোক্র্যাট শিবির। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। নিকি হ্যালির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখা ভোটাররাও এখন ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। কিন্তু মত বদলেছেন নিকি হ্যালি। ট্রাম্পকে শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জে রাখা নিকি বলেছেন, আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পকেই সমর্থন দেবেন।

বাইডেনের জন্য ইতিবাচক দিক হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি। এ ছাড়া বাইডেন সম্প্রতি তাঁর স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে ট্রাম্পের সঙ্গে লড়াই করার ঘোষণা দেন। এ মাসের শুরুতে বাইডেন তাঁর ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বাইডেন অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ও তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ইতিহাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের পর সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে হামলা-ভাঙচুর চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা।

ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ ও রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার সাইমন রোজেনবার্গ বলেন, নির্বাচন এখন স্পষ্টভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তা বাইডেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ১০টি জাতীয় জরিপে বাইডেনকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ইকোনমিস্ট–এর জরিপে তিনি এখন এগিয়ে। হ্যারিসের জরিপে বাইডেনকে এগোতে দেখা গেছে। এখন ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্টের জরিপেও বাইডেনের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র সামনে এল। বাইডেনের ধাক্কা এখন বাস্তব মনে হচ্ছে।

ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্টের জরিপে অংশ নেওয়া বাইডেনের অর্ধেকের বেশি ভোটার বলেছেন, তাঁরা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকানোর বিষয়ে প্রত্যয়ী। মর্নিং কনসাল্টের মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষক এলি ইয়োকলে বলেন, নেতিবাচক শক্তি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ২০২০ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় একটি নেতিবাচক শক্তি বাইডেনের প্রচারকে শক্তি জুগিয়েছিল। আজকে বাইডেনকে যাঁরা সমর্থন করছেন, তাঁরাই ওই নেতিবাচক শক্তি প্রকাশ করেছিলেন।