যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নায়ক জেমস লসনের মৃত্যু

মার্টিন লুথার কিংয়ের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিংবদন্তি এই নেতার স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন জেমস লসন। ৪ এপ্রিল ২০১৮ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নায়ক জেমস লসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের দীক্ষা নিতে ভারত ভ্রমণ করেছিলেন তিনি।

লসন গত রোববার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িতে মারা যান বলে গতকাল সোমবার তাঁর পরিবার জানিয়েছে। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাস করতেন।

লসন আমেরিকার কিংবদন্তি নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের প্রধান কৌশলবিদ হিসেবে কাজ করেছেন। অহিংস উপায়ে কীভাবে পুলিশ ও শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদের নৃশংসতা ও হুমকি প্রতিহত করা যায়, সে বিষয়ে অসংখ্য আন্দোলনকর্মীকে শিখিয়েছেন তিনি।
মার্টিন লুথার কিং অনেকবার লসনের এ কৌশলের প্রশংসা করেছেন। যেদিন গুপ্ত হামলা চালিয়ে লুথার কিংকে হত্যা করা হয়, তার আগের দিনও এক বক্তৃতায় তিনি লসনকে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের লড়াইয়ে যেসব ‘মহান মানুষের সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে তাঁদের একজন’ বলে বর্ণনা করেন।

লসনের সঙ্গে যখন লুথার কিংয়ের দেখা হয়, তখন দুজনের বয়সই ছিল ২৮ বছর। নিজের এ মিত্র সম্পর্কে লুথার কিং প্রায়ই বলতেন, লসন বিশ্বজুড়ে অহিংসা প্রতিষ্ঠায় সামনের সারির তাত্ত্বিক ও কৌশলবিদ।

১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ইউনিয়নটাউনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জেমস লসন।

লেসন একবার বলেছিলেন, তিনি মাত্র আট বছর বয়সে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অহিংস প্রতিবাদ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় ওঠেন। সেবার আরেকটি শিশু তাকে বর্ণবিদ্বেষমূলক গালি দিলে তিনি শিশুটিকে চড় মারেন। বাড়িতে ফেরার পর মা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, গালির প্রতিবাদে শিশুটিকে চড় মারার মধ্যে ‘ভালো কী আছে’। এর উত্তর তাঁর কাছে ছিল না। পরে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে বিবাদ মেটাতে আর কখনো তিনি নৃশংস হবেন না।

আরও পড়ুন

অহিংসার প্রতি নিজের এই বিশ্বাসের কারণে তরুণ বয়সেই মূল্য চোকাতে হয়েছে জেমস লসনকে। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, সে সময় কোরিয়া যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁকে ১৩ মাস কারাগারে থাকতে হয়েছিল। লেখাপড়া শেষে তিনি মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন সম্পর্কে জানতে ভারতে যান। তিন বছর ভারতের নাগপুরে ছিলেন। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।

১৯৬৮ সালে লুথার কিং খুন হওয়ার পর লসন খুনির সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন।

লসন স্টুডেন্ট নন-ভায়োলেন্ট কো–অর্ডিনেটিং কমিটি (এসএনসিসি) গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৬০–এর দশকে জাতিগত সমতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন এসএনসিসির সদস্যরা।