যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল জিউফ্রের: নতুন বইয়ে তথ্য
কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের হাতে ‘যৌনদাসী হিসেবেই মারা যেতে পারেন’ বলে আশঙ্কা করতেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রে। তাঁর স্মৃতিকথা থেকে এমনটা জানা গেছে। জিউফ্রের আত্মহত্যার প্রায় ছয় মাস পর ওই স্মৃতিকথা প্রকাশ হতে যাচ্ছে।
‘নোবডি’স গার্ল’ নামের বইটি আগামীকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এর একটি পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেয়েছে বিবিসি। এ বইতে বহুল আলোচিত যৌন অপরাধী এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী জিউফ্রে তাঁর জীবনের নানা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
আত্মজীবনীতে জিউফ্রে দাবি করেছেন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনি তিনবার যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এর মধ্যে একবার যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় জেফরি এপস্টেইন ছাড়াও আরও আটজন তরুণী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করেছিলেন।
এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হওয়া স্মৃতিকথাটি মধ্য লন্ডনের একটি বইয়ের দোকান থেকে কিনেছে বিবিসি। এ বইয়ে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে তরুণীদের হয়রানির শিকার হওয়ার একটি জটিল চিত্র ফুটে উঠেছে।
এ নিপীড়নের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জেফরি এপস্টেইন এবং তাঁর সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল। ২০১৯ সালে কারাগারে মারা যান এপস্টেইন। আর ম্যাক্সওয়েল যৌন পণ্য পাচারের অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
বইয়ে জিউফ্রে উল্লেখ করেছিলেন, অনেক বছর পরও তিনি তাঁদের দুজনকে (এপস্টেইন ও ম্যাক্সওয়েল) কতটা ভয় পেতেন।
বইটির একটা বড় অংশজুড়ে ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। জেফরি এপস্টেইন কীভাবে তাঁকে নিপীড়ন করতেন, সে বর্ণনা দিয়েছেন জিউফ্রে।
বইয়ে জিউফ্রে লিখেছেন, এপস্টেইন এত ভয়ংকরভাবে তাঁর ওপর যৌন নিপীড়ন চালাতেন যে তাঁর খুব যন্ত্রণা হতো। ওই সময় তিনি প্রার্থনা করতেন যেন অচেতন হয়ে যান।
বাকিংহাম প্যালেসের একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, বইটি প্রকাশকে কেন্দ্র করে এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ওপর চাপ বাড়তে পারে।
এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না হওয়া স্মৃতিকথাটি মধ্য লন্ডনের একটি বইয়ের দোকান থেকে কিনেছে বিবিসি। এ বইতে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে তরুণীদের হয়রানির শিকার হওয়ার একটি জটিল চিত্র ফুটে উঠেছে।
গত শুক্রবার প্রিন্স অ্যান্ড্রু স্বেচ্ছায় ডিউক অব ইয়র্কসহ রাজকীয় নানা পদবি ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে অ্যান্ড্রু বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
জিউফ্রে এবং লেখক অ্যামি ওয়ালেস মিলে নতুন বইটি লিখেছেন।
স্মৃতিকথায় জিউফ্রে বলেছেন, ২০০১ সালের মার্চে তিনি প্রথমবার প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ম্যাক্সওয়েল তাঁকে জাগিয়ে বলেছিলেন, দিনটি একটি ‘বিশেষ দিন’ হবে এবং ‘সিন্ডারেলার মতো’ তিনি একজন সুদর্শন প্রিন্সের দেখা পাবেন।
জিউফ্রে আরও বলেছেন, দিনের শেষের দিকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয়, ম্যাক্সওয়েল তাঁকে (অ্যান্ড্রু) বলেছিলেন তাঁর (জিউফ্রে) বয়স অনুমান করতে।
অ্যান্ড্রুর বয়স তখন ৪১ বছর ছিল। তিনি যথাযথভাবেই জিউফ্রের বয়স বলতে পেরেছিলেন। তখন জিউফ্রের বয়স ছিল ১৭ বছর।
সেই রাতে জিউফ্রে লিখেছেন, তিনি প্রিন্স অ্যান্ড্রু, জেফরি এপস্টেইন ও গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে লন্ডনে ট্রাম্প নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রিন্স ‘অনেক ঘামছিলেন’।
ফেরার পথে গাড়িতে জিউফ্রেকে ম্যাক্সওয়েল বলেছিলেন, ‘আমরা বাড়ি পৌঁছালে, তুমি জেফরির (এপস্টেইন) জন্য যা করো, প্রিন্সের জন্যও তা করতে হবে।’
জিউফ্রে লিখেছেন, বাড়িতে ফিরে অ্যান্ড্রু আর তাঁর মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়। তিনি বলেন, ‘তিনি (অ্যান্ড্রু) যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, কিন্তু নিজেকে বিশেষ ভাবতেন। যেমন তিনি মনে করছিলেন যে আমার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হওয়াটা তার জন্মগত অধিকার।’
ম্যাক্সওয়েল পরদিন সকালে জিউফ্রেকে বলেছিলেন, ‘তুমি ভালো করেছ। প্রিন্স আনন্দ পেয়েছেন।’
জিউফ্রে বলেছেন, প্রায় এক মাস পরে নিউইয়র্কে এপস্টেইনের টাউনহাউসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রিন্সের সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্ক হয়।
আর তৃতীয়বারের ঘটনাটি ঘটেছিল এপস্টেইনের মালিকানাধীন একটি দ্বীপে।
বইটির শেষের দিকে জিউফ্রে ২০২২ সালে তাঁর সঙ্গে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর আদালতের বাইরে হওয়া নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে জিউফ্রের সম্পর্কজনিত অভিযোগটি নিয়ে ব্যাপকভাবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। তবে বইটির বিষয়বস্তু আরও বিস্তৃত। এপস্টেইনের যৌন পণ্য পাচারের অন্ধকার চিত্রগুলো সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।
স্মৃতিকথায় জিউফ্রে বলেছেন, ২০০১ সালের মার্চে তিনি প্রথমবার প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ম্যাক্সওয়েল তাঁকে জাগিয়ে বলেছিলেন, দিনটি একটি ‘বিশেষ দিন’ হবে এবং ‘সিন্ডারেলার মতো’ তিনি একজন সুদর্শন প্রিন্সের দেখা পাবেন।
জিউফ্রে লিখেছেন, মেয়েদের ‘শিশুদের মতো’ দেখাতে বাধ্য করা হতো এবং তাঁর শৈশবের খাবার খাওয়াজনিত সমস্যাকে এপস্টেইনের বাসায় ‘উৎসাহিতই’ করা হতো।
জিউফ্রে অভিযোগ করেছেন, এপস্টেইনরা তাঁকে বহু ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাঠাতেন। তাঁকে নিয়মিত ব্যবহার করা হতো এবং অপমান করা হতো। কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসরোধ, মারধর এবং রক্তাক্তও করা হতো।
বইতে জিউফ্রে লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করতাম, হয়তো আমি একজন যৌনদাসী হিসেবেই মারা যাব।’
এপস্টেইনকে ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় ১৮ বছরের কম বয়সী একজনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যৌন পণ্য পাচারের মামলায় বিচারের অপেক্ষায় থাকাকালে তিনি ২০১৯ সালে কারাগারে মারা যান।