গাজায় একচোখা নীতির অভিযোগ তুলে মন্ত্রীকে চিঠি মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির শতাধিক কর্মকর্তার

গাজায় যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন বিভাগের শতাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা বিভাগের মন্ত্রী আলেহান্দ্রো মায়রকাসকে দেওয়া এক খোলাচিঠিতে এই নিন্দা জানান।

গাজায় প্রায় ১৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের বার্তায় স্বীকৃতি, সমর্থন ও সহমর্মিতার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান না থাকায় খোলাচিঠিতে হতাশা প্রকাশ করা হয়।

গত ২২ নভেম্বর তারিখ দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট এবং পশ্চিম তীরের এমন অবস্থায় সাধারণত বিভাগের নানাভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কথা। কিন্তু ডিএইচএসের নেতৃত্ব মনে হচ্ছে, গাজায় শরণার্থীশিবির, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমা হামলায় একচোখা নীতি নিয়েছে।

চিঠিতে ডিএইচএস এবং বিভাগেরে অধীন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি), ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ), ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ও ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের (ইউএসসিআইএস) ১৩৯ কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়, প্রবল নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় বিভাগের কিছু সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্মতি দিয়েছেন। চিঠিতে গাজা পরিস্থিতির নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে পেশাদার প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা ছাড়াই সম্মানপূর্বক মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়।

এই চিঠির বিষয়ে আল–জাজিরা জানতে চাইলে ডিএইচএসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ডিএইচএসের সর্বশেষ এই খোলাচিঠি গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের মধ্যে মতপার্থক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গাজা যুদ্ধে নিজেদের অবস্থানে ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে রয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

গত মাসে মার্কিন সরকারের ৪০টি বিভাগের অন্তত ৫০০ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন, যাতে তাঁরা অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) এক হাজার কর্মকর্তা আরেকটি চিঠিতে অনুরূপ আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের সমালোচনা করতে রাজি নন জো বাইডেন। বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের এই মিত্রের প্রতি ‘দৃঢ় ও অকুণ্ঠ সমর্থন’ জানিয়ে আসছেন।

গত ২ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ এক বার্তায় মন্ত্রী মায়রকাসের কণ্ঠে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অবস্থান প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যায়িত করে তার নিন্দা জানিয়েছেন। কিন্তু গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।

মায়রকাস লিখেছেন, ইহুদি, আরব আমেরিকান, মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে ৭ অক্টোবরের হামলার অব্যাহত প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের বিভাগ ইহুদিবিদ্বেষ, ইসলামবিদ্বেষ এবং যেকোনো ধরনের ধর্মান্ধতা ও ঘৃণা থেকে সবাইকে রক্ষায় সামনে থেকে কাজ করছে।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএইচএসের দুই কর্মকর্তা আল–জাজিরাকে বলেন, তাঁরা মনে করেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর ব্যাপারে বিভাগের নেতৃত্ব স্পষ্ট ও শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএইচএসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ফেডারেল সরকারের প্রতি নিবেদিত। আমি সর্বোচ্চ সক্ষমতার সঙ্গে সরকারের কাজ করি। আমি আমাদের লক্ষ্যে বিশ্বাস রাখি।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘৭ অক্টোবরের পর আমি আমার প্রত্যাশায় নাটকঢীয় পরিবর্তন দেখি। যেখানে মানবিক সংকট, সেখানে আমাদের কাজ করার কথা। কিন্তু আমরা এখন যা করছি, তাতে রাজনীতি জড়িত। এটা খুবই ভয়াবহ এবং এর প্রভাব হতাশাজনক।’