গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের বিক্ষোভ
আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরেও চলছে অভিযান-হামলা। এতে বেড়েই চলেছে হতাহতের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ইহুদি সম্প্রদায়।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ করেন ইহুদিরা। এ সময় সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বাধা দেন তাঁরা। এতে যানজট দেখা দেয়। বিক্ষোভের সময় প্রায় ৭৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
গাজায় যুদ্ধবিরতির যে বৈশ্বিক দাবি উঠেছে, তাতে ইসরায়েল প্রায় একঘরে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তোলা প্রস্তাবে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয় সদস্যদেশগুলো। কিছুদিন ধরে গাজায় সহিসংতা কমাতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটনও।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। আগের দিন বুধবারই গাজায় নির্বিচার বোমাবর্ষণের ভর্ৎসনা করেছিলেন বাইডেন।
এত কিছুর পরও গাজা ইস্যুতে একরোখা নেতানিয়াহু। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে থেকেও অত্যন্ত যন্ত্রণাবোধ নিয়ে কথাগুলো বলছি। কোনো কিছুতেই আমাদের থামানো যাবে না।
একেবারে শেষ পর্যন্ত, বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অটল থাকব। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।’
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর গাজায় যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে, তার তৃতীয় মাস চলছে। আজও উত্তর থেকে দক্ষিণ—পুরো উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি হামলায় ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩০৩ জন। এ নিয়ে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৮৭। আহত ৫০ হাজার ৮৯৭। অপরদিকে গতকাল সারা দিনে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন।
‘ইতিহাসের কালো অধ্যায়’
এমন পরিস্থিতিতে গাজাবাসী ‘ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়’ পার করছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলা ও হুমকির মুখে উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ১৯ লাখই এখন বাস্তুচ্যুত।
লাজারিনি বলেন, গাজার মোট ভূখণ্ডের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় এখন উপত্যকাটির বাসিন্দাদের বসবাস করতে হচ্ছে। তাঁর আশঙ্কা, চরম মানবেতর অবস্থায় দিন কাটানো এই মানুষগুলোকে মিসরে নির্বাসনে পাঠানো হতে পারে।
গাজাবাসীর এই দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে শীতকালীন বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে অনেক অস্থায়ী তাঁবু। এসব তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাস্তুহারা গাজাবাসী।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মবিষয়ক সংস্থা বলছে, একদিকে চলছে হামলা, অন্যদিকে বৃষ্টি; দুর্দশা এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে গাজা যেন ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে। এসবের জেরে গাজায় মেনিনজাইটিস, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের।