ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন।ফাইল ছবি: এএফপি

ব্রাজিলে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও জোরালো করার ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত সর্বশেষ শুল্ক–সংক্রান্ত চিঠিতে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।

চিঠিতে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্রাজিল আক্রমণ করছে। ব্রাজিলের ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা দেওয়ারও অভিযোগ করেছেন তিনি।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বলসোনারোকে শ্রদ্ধা করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে চলমান বিচারকে ‘আন্তর্জাতিক লজ্জা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ট্রাম্প ও বলসোনারো ২০১৯ সালে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে নিজ নিজ দেশের নির্বাচনে দুজনই তাঁদের হার মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

চলতি সপ্তাহে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও ট্রাম্পের মধ্যে বলসোনারোর বিচার নিয়ে বাক্‌বিতণ্ডা হয়। সে সময় লুলা বলেন, বিচারে ব্রাজিল কারও হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ব্রাজিল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং মার্কিনদের মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের ওপর আক্রমণ করছে। মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপরও বিধিনিষেধ চাপিয়েছে ব্রাজিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

চলতি সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের কাছে ২২টি চিঠি পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলংকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার রয়েছে। এসব চিঠিতে তিনি দেশগুলোর পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি জানান, নতুন শুল্ক আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

তবে ব্রাজিলকে পাঠানো বার্তা ছিল অনেক বেশি লক্ষ৵ভেদী ও আক্রমণাত্মক। চিঠিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আগে ঘোষিত ১০ শতাংশ শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।

গত বছর ব্রাজিলের সঙ্গে বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্র লাভজনক অবস্থানে ছিল। দেশটি ব্রাজিলে যত পণ্য বিক্রি করেছে, তার চেয়ে কম পণ্য আমদানি করেছে। চিঠিতে ট্রাম্প প্রস্তাবিত ৫০ শতাংশ শুল্ককে ‘প্রয়োজনীয়’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিলের বর্তমান সরকারের গুরুতর অবিচার সংশোধনে এটি জরুরি।’

ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি ব্রাজিলের ডিজিটাল বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে দিয়ে একটি ‘৩০১ তদন্ত’ শুরু করার নির্দেশ দেবেন।

চলতি সপ্তাহে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ও ট্রাম্পের মধ্যে বলসোনারোর বিচার নিয়ে বাক্‌বিতণ্ডা হয়। সে সময় লুলা বলেন, বিচারে ব্রাজিল কারও হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ ধরনের পদক্ষেপের অর্থ হবে, শুল্ক আরোপের জন্য আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিষ্ঠিত আইনি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, সেদিকেই আবার ফিরে যাওয়া। এটি ট্রাম্পের হুমকিকে আরও জোরালো করবে।

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ওই সময় ব্রাজিল প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নতুন কর বসানোর কথা ভাবছিল।

চিঠিতে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ব্রাজিল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও মার্কিনদের মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের ওপর আক্রমণ করছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপরও বিধিনিষেধ চাপিয়েছে ব্রাজিল।

সম্প্রতি রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। গত রোববার সম্মেলনে অংশ নেয় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ব্রিকস। এটির সদস্য ব্রাজিলও। এ জোটকে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এসব দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

ট্রাম্পের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাম্প মিডিয়া’সহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রযুক্তি কোম্পানি ব্রাজিলের আদালতের এক আদেশের বিরুদ্ধে লড়ছে। এ আদেশে কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করতে বলা হয়েছে।

ব্রাজিলের ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্স (আগের টুইটার)। এর জবাবে প্ল্যাটফর্মটিকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে ব্রাজিল সরকার।

গত মাসে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কনটেন্টের জন্য জবাবদিহির সম্মুখীন করা যাবে।

সম্প্রতি রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। গত রোববার সম্মেলনে অংশ নেয় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ব্রিকস। এটির সদস্য ব্রাজিলও। এ জোটকে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এসব দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এ হুমকির জবাব দেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘ওনাকে (ট্রাম্পকে) বুঝতে হবে, দুনিয়া বদলে গেছে। আমরা আর কোনো সম্রাট চাই না।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন