ইসরায়েলের মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারে বলে মনে করছে বাইডেন প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ৪৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন কংগ্রেসে জমা দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষরিত একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারক (এনএসএম–২০) অনুযায়ী পর্যালোচনাটি করা হয়। স্মারকটি বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ, ব্যবহার এবং জবাবদিহি–সংক্রান্ত।  অর্থাৎ অন্য কোনো দেশ যখন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করবে, তখন তাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে। অস্ত্রগুলো সেসব দেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে কংগ্রেসে অবহিত করতে হয়।

প্রতিবেদনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ওপর ইসরায়েলের উল্লেখজনক নির্ভরতা আছে। আর বিষয়টি মাথায় রেখে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী যেসব প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করছে, তা নিয়ে এনএসএম–২০–এর আওতায় মূল্যায়ন করা যুক্তিসংগত। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন হয়েছে কি না কিংবা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছিল কি না, তা পর্যালোচনা করা যুক্তিসংগত।

কংগ্রেসে জমা দেওয়া প্রতিবেদনটিতে চূড়ান্ত কোনো মূল্যায়ন দেয়নি বাইডেন প্রশাসন। তারা বলেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে বিভিন্ন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থাকায় সুনির্দিষ্ট করে ঘটনাগুলো যাচাই করা যায়নি। অর্থাৎ যেসব জায়গায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কি না, তা সুনির্দিষ্ট করে যাচাই করা যায়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনটিতে কিছু অসংগতিও দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বেসামরিক মানুষদের ক্ষয়ক্ষতি হওয়া অসংখ্য বিশ্বাসযোগ্য খবর তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেনি ইসরায়েল। অথচ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না, তা নিয়ে তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে গাজা কিংবা পশ্চিম তীর বা পূর্ব জেরুজালেমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য এনএসএম–২০–এর আওতায় পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়নি ইসরায়েল। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রগুলো আন্তর্জাতিক আইন মেনে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ইসরায়েল যে আশ্বাস দিয়েছে, আপাতত তা–ই মেনে নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।

এদিকে এ প্রতিবেদন কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাফাতে বড় অভিযান চালালে ইসরায়েলকে কিছু অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর দুই মিত্র দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়।

ইতিমধ্যে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের জন্য কিছু অস্ত্রের চালান স্থগিত করেছে। ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ–সংক্রান্ত আরও কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বারবারই ইসরায়েলকে দীর্ঘ মেয়াদে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বলেছেন, ইসরায়েল যদি রাফাতে পুরোদমে স্থল অভিযান শুরু করে, তবে তা গাজা উপত্যকাকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে ফেলে দেবে। অবিলম্বে রাফায় অভিযান বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, রাফাতে স্থল সেনা পাঠানো ছাড়া ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করতে পারবে না। রাফাতে থেকে যাওয়া হামাস যোদ্ধাদের খুঁজতে স্থল অভিযান চালাতে হবে।