অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে সাক্ষাৎকারীদের ওপর নজরদারির অভিযোগে সিআইএর বিরুদ্ধে মামলা

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ও এর তৎকালীন পরিচালক মাইক পম্পেওর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবী। তাঁদের অভিযোগ, লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁদের ওপর নজরদারি চালানো হয়েছিল। খবর আল–জাজিরার।

গতকাল সোমবার নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি করা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, তাঁদের আলাপচারিতা রেকর্ড করা এবং ফোন ও কম্পিউটার থেকে তথ্য কপি করার মাধ্যমে সিআইএ তাঁদের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করেছে।

মামলার বাদীদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক চার্লস গ্লাস ও জন গোয়েৎজ এবং অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী মার্গারেট কুনস্টলার ও ডেবোরা হরবেক।

এ মামলায় তাঁদের প্রধান আইনজীবী রিচার্ড রথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান আমেরিকার নাগরিকদের মার্কিন সরকারের সীমালঙ্ঘন থেকে সুরক্ষা দেয়, এমনকি যখন কেউ বিদেশে কোনো বিদেশি দূতাবাসেও কাজ করে থাকেন।

সোমবারের মামলাটি অ্যাসাঞ্জ ও মার্কিন সরকারের মধ্যে কয়েক বছর ধরে চলে আসা বিরোধের সর্বশেষ ঘটনা যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও নজরদারি নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
মার্কিন নাগরিকদের বিষয়ে সিআইএর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা দেশটির আইনে নিষিদ্ধ। তবে এখনো সংস্থাটি এ ধরনের তথ্যসহ একটি গোপন ডেটাবেস সংরক্ষণ করে আসছে বলে আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করে আসছেন।

রথ বলেন, এই গুপ্তরচরবৃত্তির অভিযোগের মানে অ্যাসাঞ্জের ন্যায্যবিচারের অধিকার ‘যদি ধ্বংস করা না–ও হয়, কলঙ্কিত করা হয়েছিল’। তিনি বলেন, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এমনকি এই চরম অসাংবিধানিক কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খারিজ এবং তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের আবেদন প্রত্যাহার করা উচিত।

অ্যাসাঞ্জ ইতিমধ্যে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের আদেশ বাতিল চেয়ে লন্ডন হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। তাঁর প্রত্যর্পণ নিয়ে ১০ বছর ধরে আইনি লড়াই চলছে।

আরও পড়ুন

মামলার অভিযোগে সাংবাদিক ও আইনজীবীরা বলেন, অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করার আগে ওই দূতাবাসে বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান আন্ডারকভার গ্লোবাল এসএলের কাছে তাঁদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো রাখতে বাধ্য হন।

মামলার বাদীরা অভিযোগ করেন, কোম্পানিটি তখন তথ্যগুলো কপি করে এবং সেগুলো সিআইএর কাছে পাঠিয়ে দেয়, ওই সময় সিআইএর প্রধান ছিলেন মাইক পম্পেও যিনি পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। আন্ডারকভার গ্লোবাল ও তার প্রধান নির্বাহী ডেভিড মোরালেস গিলেনকেও মামলায় বিবাদী করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

২০১৯ সালে কারাগারে স্থানান্তরের আগপর্যন্ত সাত বছর লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে অবস্থান করেন অ্যাসাঞ্জ।

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ গোপন নথি ফাঁস করেন। এতে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত প্রমাণাদি দেখা যায়। গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে গোয়েন্দাগিরিসহ ১৮টি অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অ্যাসাঞ্জের ১৭৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।