ক্ষমতায় এসেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানালেন ট্রাম্প

(বাঁ থেকে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তাঁকে হোয়াইট হাউস সফরের আমন্ত্রণ জানালেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পরোয়ানার মধ্যেই তাঁকে হোয়াইট হাউসে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে ট্রাম্প তাঁর মিত্র দেশ ইসরায়েলের প্রতি বড় ধরনের সমর্থন ও সহানুভূতির কথাই ব্যক্ত করলেন। সম্প্রতি এক চিঠিতে নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউস সফরের ওই আমন্ত্রণ জানান তিনি।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে ৬ সপ্তাহের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যে আইসিসির পরোয়ানাকে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। যুদ্ধবিরতির ফলে গাজায় টানা ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের সাময়িক অবসান ঘটেছে।

দ্য হেগে অবস্থিত আইসিসি গত বছরের ২১ নভেম্বর এক সিদ্ধান্তে জানান, ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা এবং এর জের ধরে গাজায় দেশটির গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর ঘটনায় নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট (নেতানিয়াহুর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী) ও হামাসের নেতা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে মোহাম্মদ দেইফকে গত জুলাইয়ে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় তিনি আদৌ বেঁচে আছেন কি না, সেটি স্পষ্ট নয়। যা–ই হোক, ওই তিনজন এখন থেকে আন্তর্জাতিকভাবে তালিকাভুক্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি বলে গণ্য হবেন ও তাঁদের গ্রেপ্তার করতে আইসিসিভুক্ত দেশগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আইসিসির এ পদক্ষেপকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।

আইসিসি তাঁর সিদ্ধান্তে জানিয়েছেন, অন্তত ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২০ মে পর্যন্ত মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন তাঁরা। এ অভিযোগের সঙ্গে গাজার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট স্থাপনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিশানা বানানোর বিষয়টিও যুক্ত রয়েছে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে ছয় সপ্তাহের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যে আইসিসির পরোয়ানাকে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। যুদ্ধবিরতির ফলে গাজায় টানা ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের সাময়িক অবসান ঘটেছে।

আরও পড়ুন

গাজা খালি করার কথা আবারও বললেন ট্রাম্প

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ানে গত সোমবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি চান মিসর গাজার ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিক। অঞ্চলটির বেশির ভাগ মানুষ ইসরায়েলি সামরিক হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। এর আগেও গাজা খালি করা নিয়ে একই রকমের মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশা করি, তিনি কিছু (গাজার বাসিন্দাকে) নেবেন। আমরা তাদের (মিসর) অনেক সাহায্য করি এবং আমি নিশ্চিত যে তিনিও আমাদের সাহায্য করতে পারবেন।’ আল–সিসিকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করেন ট্রাম্প।

গাজার ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই, তাঁরা এমন একটি এলাকায় বসবাস করুক, যেখানে তাঁরা বাধা–বিপত্তি, বিদ্রোহ ও সহিংসতামুক্ত জীবনযাপন করতে পারবেন।’

সপ্তাহান্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরামর্শ দিয়েছেন যে মিসর ও জর্ডানের উচিত গাজার ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া। তবে এ দুই দেশ এবং অন্য আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বের করে নেওয়ার পক্ষে নয়। কারণ, এটি এমন একটি ভূখণ্ড যেটিকে ফিলিস্তিনিরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান।

আরও পড়ুন

হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করেছে দেশটি। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করা হয় ২৫০ জনকে। অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধে ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। যদিও ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

চলতি মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ছয় সপ্তাহ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী কয়েক শ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

চলতি সপ্তাহে গাজা সিটির বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। শহরটি ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন